ঈদুল আজহার অবিচ্ছেদ্য অংশ কোরবানি। আর কোরবানির অবিচ্ছেদ্য অংশ সুস্থ-সবল পশু। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার ইবাদতের জন্য এই পশু জবাই করার নামই কোরবানি। প্রত্যেক সামর্থ্যবান নর-নারীর এ ঈদে কোরবানি করে থাকেন। আর কোরবানির সঙ্গে সম্পর্কিত হলো কোরবানির পশুর চামড়া। কিন্তু কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে এখনো আমাদের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা রয়ে গেছে।
কোরবানির পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার করা যায় কিনা-
কোরবানির পশুর মাংস যেমন নিজে খাওয়া যায়, কোরবানির পশুর চামড়াও নিজে ব্যবহার করা যেতে পারে। কোরবানি দাতা যদি মনে করেন যে, তিনি নিজের কোরবানির পশুর চামড়া ব্যবহার উপযোগী করে তা ব্যবহার করবেন, তাহলে তা নাজায়েজ বা মাকরুহ হবে না।
কোরবানির পশুর চামড়া খাওয়া যাবে কি-
অনেকে পশুর চামড়া খেয়ে থাকেন। কোরবানিদাতা যদি কোরবানির পশুর চামড়া খেতে চান, তাহলে কোরবানির মাংসের মতোই তা নিজে খেতে পারবেন, পরিবার ও সম্পদশালী আত্মীয়স্বজনদেরও দিতে পারবেন। এটিও মাকরুহ কিংবা নাজায়েজ নয়।
কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করা যাবে বা কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে কিনা-
কিন্তু কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করা ও বিক্রয়লব্ধ অর্থ নিজের প্রয়োজনে ব্যয় করা নাজায়েজ এবং কাউকে পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়াও নাজায়েজ। কোরবানির পশু যিনি জবাই করবেন বা মাংস যিনি সংগ্রহ করবেন, তাদেরকে পারিশ্রমিক হিসেবে কোরবানির চামড়া দেওয়া যাবে না।
কোরবানির পশুর চামড়া নিজে ব্যবহার না করলে বা না খেলে তা জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত দরিদ্র কোনো ব্যক্তিকে দান করে দিতে হবে। কোরবানিদাতা চাইলে কাঁচা চামড়া দান করে দিতে পারেন অথবা চামড়া বিক্রি করে বিক্রয়লব্ধ অর্থও দান করতে পারেন।
হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أَقُومَ عَلَى بُدْنِهِ وَأَنْ أَتَصَدَّقَ بِلَحْمِهَا وَجُلُودِهَا وَأَجِلَّتِهَا وَأَنْ لَا أُعْطِيَ الْجَزَّارَ مِنْهَا قَالَ: نَحْنُ نُعْطِيهِ مِنْ عِنْدِنَا
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে (বিদায় হজে) তার কোরবানির উটগুলো দেখাশুনা করতে, তার মাংস, চামড়া ও ঝুল দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে এবং কসাইকে কিছু না দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা আমাদের পক্ষ থেকে কসাইয়ের পারিশ্রমিক দেবো। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
কসাই বা কাজের লোককে কোরবানির চামড়া দান হিসেবে দেওয়া যাবে কিনা-
কসাইকে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়ার পাশাপাশি কোরবানির পশুর মাংস বা চামড়া তাকে দান বা হাদিয়া হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু পারিশ্রমিক নির্ধারণের সময় যদি তাকে চামড়া বা মাংস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় এবং এর প্রভাব পারিশ্রমিক নির্ধারণের ক্ষেত্রে পড়ে, তাহলে তা জায়েজ হবে না।
বাড়ির কাজের অন্য কোনো লোককেও কোরবানির চামড়া বেতন বা ঈদের বোনাসের বদলে বা কোনো কাজ করিয়ে পারিশ্রমিকের বদলে দেওয়া যাবে না। শুধু দান বা হাদিয়া হিসেবে দেওয়া যেতে পারে।
