বিশ্ব শিক্ষক দিবস

ইসলামে শিক্ষা ও শিক্ষকের মর্যাদা

আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৭ এএম

শিক্ষকরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে বাবা-মায়ের পাশাপাশি শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। ইসলাম ধর্মে শিক্ষকদের এই মহান দায়িত্ব ও মর্যাদাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং তাদের সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে। মুসলিম সমাজে শিক্ষকমাত্রই তাই বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের ব্যক্তি।

ইসলাম শিক্ষাকে যাবতীয় উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে এবং শিক্ষকের ভূমিকাকে অপরিহার্য মনে করে। পবিত্র কোরআনে নাজিলকৃত প্রথম আয়াতেই জ্ঞানার্জন ও শিক্ষাসংক্রান্ত কথা বলা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘পড়! তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু জমাট রক্ত থেকে। পড়! আর তোমার প্রতিপালক পরম সম্মানিত। যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’(সুরা আলাক, আয়াত ১-৫)

অন্যদিকে, প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) জ্ঞানার্জন এবং শিক্ষকের সম্মানের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘তোমরা জ্ঞান অর্জন করো এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব-শিষ্টাচার শেখো। এবং যার কাছ থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন করো, তাকে সম্মান করো।’ (আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস ৬১৮৪)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর তাগিদ ছিল শিক্ষা অনুযায়ী মানবচরিত্র ও কর্মের সমন্বয় সাধন করা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহর পরে, রাসূলের পরে ওই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা মহানুভব যে জ্ঞানার্জন করে ও পরে তা প্রচার করে।’ (মিশকাত শরিফ)

শিক্ষকদের সম্মানের দৃষ্টিতে দেখার রীতি মুসলিম সমাজে প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান। সাহাবিদের জীবনেও এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। একবার জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) তার বাহনে ওঠার জন্য রেকাবে (সিঁড়িতে) পা রাখলে, ইবনে আব্বাস (রা.) তা শক্ত করে ধরেছিলেন। জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) তখন হাত সরিয়ে নিতে বললে, ইবনে আব্বাস (রা.) বিনয়ের সঙ্গে জবাব দেন, না, আলেম ও বড়দের সঙ্গে এমন সম্মানসূচক আচরণই করতে হয়। (আল ফকিহ ওয়াল-মুতাফাক্কিহ ২১৯৭)

ইসলামে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। শিক্ষাকে সহজলভ্য করার জন্য খেলাফতের যুগেই শিক্ষকদের জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছিল। দ্বীনি শিক্ষাদানের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকরা যদিও কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জ্ঞান বিতরণ করতেন, তবুও সরকার তাদের জ্ঞান বিতরণের মহৎ কাজকে সম্মান জানাত।

তারা যেন জীবিকার পেছনে ব্যস্ত সময় পার না করে শান্ত মস্তিষ্কে জ্ঞান বিতরণের পবিত্র কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারেন, সেজন্য তৎকালীন খেলাফত ব্যবস্থা তাদের পরিবার-পরিজনের যাবতীয় আর্থিক খরচ বহন করত।

উমর (রা.) এবং উসমান (রা.) তাদের শাসনামলে শিক্ষক ও ধর্মপ্রচারকদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করেছিলেন। আবদুর রহমান ইবনুল জাওজি (রহ.) তার ‘সিরাতুল উমরাইন’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, তাদের যুগে মুয়াজ্জিন, ইমাম ও শিক্ষকদের সরকারি ভাতা দেওয়া হতো। (কিতাবুল আমওয়াল, পৃষ্ঠা ১৬৫)

উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) তার যুগে ইয়াজিদ ইবনে আবি মালেক ও হারেছ ইবনে ইউমজিদ আশারি (রহ.) কে দ্বীন শেখানোর কাজে নিযুক্ত করে তাদের জন্য সম্মানজনক পারিশ্রমিক নির্ধারণ করেছিলেন। (কিতাবুল আমওয়াল, পৃষ্ঠা ২৬২)

এভাবে ইসলাম শিক্ষককে শুধু আধ্যাত্মিক সম্মানই নয়, বরং আর্থিকভাবেও সম্মানিত করার মাধ্যমে সমাজে তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে।

NB/AHA
আরও পড়ুন