দুনিয়াতে কোনো ভালো জিনিসই সহজভাবে সমাদৃত হয়নি। যথাযথ মর্যাদা পায়নি কোনো মহামানব। ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তার ব্যতয় ঘটেনি। আমাদের অনেকেরই জানা নেই যে, ইসলামের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী প্রথম ব্যক্তি কে? কিভাবে তিনি বিসর্জন দিয়েছিলেন তাঁর অমূল্য জীবন। যা এখানে তুলে ধরা হলো-
নাম ও পরিচয়
ইসলামের জন্য প্রথম প্রাণ উৎসর্গকারী, এ মহান গৌরবের অধিকারী ছিলেন হজরত হারেস ইবনে আবি হালাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি ছিলেন উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রথম স্বামী আবি হালাহ ইবনে যারারাহর ঔরসজাত পূত্র। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.) পোষ্য পোষ্যপুত্র ছিলেন।
যেভাবে ঘটনা শুরু
বিশ্বনবি নবুয়তের প্রথম দিকে গোপনে গোপনে ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণের পর বিশ্বনবি প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন। প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত সবে মাত্র অল্প কয়েক দিন শুরু হয়েছে। বিশ্বনবির পোষ্যপুত্র হজরত হারেস বিন আবি হালা নিজ গৃহে বিশ্রাম করতে গিয়ে হঠাৎ কাবা প্রন্তরে হৈ-হুল্লোড়ের শব্দ শুনতে পান। তিনি এ হৈ-হুল্লোড়ে আৎকে উঠে সে দিকে উর্ধ্ব শ্বাসে কাবা চত্ত্বরে দৌড়ে গেলেন।
তখনও কাবা গৃহে ৩৬০ মূর্তির অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। যে ঘর হজরত ইবরাহিম আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নির্দেশক্রমে তাঁরই উদ্দেশ্যে নির্মাণ করেছিলেন। তখন এ কাবাকে মূর্তি তথা দেবদেবীর গৃহালয়ে পরিণত করা হয়েছিল।
কাবার আঙ্গিনার অবস্থা এতটা শোচনীয় হয়ে পড়েছিল যে, কেউ যদি সেখানে আল্লাহর তাআলার নাম উচ্চারণ করতো তাতেই তারা আল্লাহর স্মরণকে কাবার অবমাননা হিসেবে বিবেচনা করতো। যে সময় উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফে করলেও কাবার অবমাননা হতো না এমনকি শীষ বাজালেও কাবার অবমাননা হতো না। অথচ আল্লাহর নাম উচ্চারণ করলেই কাবার অবমাননা হতো। সে দিনের পরিস্থিতিও ছিল এমন।
ইসলামের দাওয়াত
রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর নির্দেশে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেয়া শরু করলেন। প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচায়না তিনি কারো পরোয়া করতে না। তাই বিশ্বনবি সেদিন কাবা চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠে এ ঘরের মালিকের ঘোষণা করে বললেন, তোমরা সবাই বলে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’
পাপিষ্ঠ দুরাচারদের হৈ চৈ
তাওহিদ ও রিসালাতের এ ঘোষণায় কাবা চত্ত্বরে উপস্থিত পাপিষ্ঠ, দুরাচার ও দুরাত্মাদের অন্তরাত্মা জ্বলে ওঠে। তারা সবাই সমস্বরে হুংকার ও চিৎকার দিয়ে ওঠে এবং বলে- এটা অবমাননা; এটা কার অবমাননা; নির্ঘাত এটা আমাদের দেবদেবী অবমাননা। চারদিক থেকে সমভাবে একই চিৎকার এবং হৈচৈ। এরই মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাওহিদের কাণ্ডারি বিশ্বনবি চিরসত্য ও চিরবিশ্বস্ত বিশ্বনবি। যাকে এক সময় এ হৈচৈ কারীরাই সত্যবাদি, আমানতদার ও পবিত্রাত্মা বলে সম্বোধন ও সম্মান করতো।
বিশ্বনবি অবরুদ্ধ
আজ পবিত্রতার দাওয়াত ও অন্যায় থেকে বিরত থাকার কথা বলার কারণে তাকেই চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। রক্তপিপাসু হিংস্র জানোয়ারের দল তাঁকে পরিবেষ্টিত করে ঘিরে ফেলে। তখণ বিশ্বনবি চরম প্রাণাশংকায় সময় অতিবাহিত করেন।
হজরত হারেসের আগমন
এমননি সময় হজরত হারেস বিন আবি হালাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ভিড় ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করে বিশ্বনবির কাছে এসে উপনীত হন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে কঠিন বিপদের মুখে নিজেকে ঠেলে দেন।
হজরত হারেসের ইন্তিকাল
হজরত হারেস ইবনে আবি হালাহ যখন বিশ্বনবির নিকট পৌঁছেন। তখন পাপিষ্ঠ দুরাচারের দল তাদের জিদ, রাগ ও ক্ষোভের সবটুকুতে আগুণ ধরে যায়। চারদিক থেকে কাফেরদের ধারালো তরবারির আঘাত আসতে থাকে হজরত হারেস ইবনে আবি হালার ওপর। তাতেও তিনি বিশ্বনবিকে ছেড়ে এক কদম নড়েননি।
সত্যের পথে তিনি নিজের জীবনের নজরানা পেশ করে চিরদিনের জন্য নিরব হয়ে যান। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) এ ছিল ইসলামের জন্য প্রথম প্রাণ উৎসর্গকারী হজরত হারেস ইবনে আবি হালার প্রাণ। মুসলিম জাতির ইতিহাসে সর্বপ্রথম শাহাদাতের মুকুট তাঁরই মস্তকের শোভা বর্ধন করে।
আল্লাহ তাআরা হজরত হারেস বিন আবি হালাহকে জান্নাতের সর্বোত্তম মাকাম দান করুন। তাঁর রূহানি ফায়েজ এবং বরকত আমাদেরকে দান করুন। আল্লাহ তাআলা তাঁর ঈমানি প্রেরণা আমাদেরকে দান করুন। আমিন।
ইসলামের প্রথম শহীদ মহীয়সী নারী