ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

হ্যালোইন উৎসবের ইতিহাস ও ইসলামে হারাম হওয়ার ১০ কারণ

আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩২ এএম

প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে হ্যালোইন উৎসব বা ‘ভূত উৎসব’ অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। বিশ্বায়নের এই যুগে পশ্চিমা অপসংস্কৃতির অংশ হিসেবে এটি মুসলিম বিশ্বেও ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে, ঠিক যেমনটি ছড়িয়েছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে, থার্টি ফার্স্ট নাইট, ক্রিসমাস ডে, দেওয়ালী বা হোলি উৎসব। অজ্ঞ মুসলিম সমাজকে এসব অপসংস্কৃতি ও বিধর্মীয় উৎসব থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।

ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এই উৎসব পালনের বিধান এবং এর পেছনের অন্ধকার ইতিহাস সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

হ্যালোইন উৎসবের অন্ধকার ইতিহাস

‘হ্যালোইন’বা ‘হ্যালোউইন’ শব্দের অর্থ হলো ‘শোধিত সন্ধ্যা’ বা ‘পবিত্র সন্ধ্যা’। মূলত উৎসবটি একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন কুসংস্কার এবং ইসলামবিরোধী ভ্রান্ত বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত।

উৎসবটির উৎপত্তির প্রধান কয়েকটি মত

 কেল্টিক জাতির বিশ্বাস

কারো কারো মতে, এই রাতে মৃত্যুর দেবতা সামান সব মৃত আত্মাদের পৃথিবীতে আহ্বান জানান। এই রাতে উড়ন্ত ঝাড়ুতে করে হ্যালোইন ডাইনি আকাশ জুড়ে উড়ে বেড়ায় এবং বিভিন্ন বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে।

নতুন দেহ গ্রহণের লোককথা

আইরিশ, যুক্তরাজ্য ও ওয়েলস সম্প্রদায়ের লোকেরা বিশ্বাস করত যে প্রত্যেক নতুন বছরের আগের রাতে (৩১ অক্টোবর) মৃত্যুর দেবতা সাহেইন সব মৃত আত্মাকে ডাক দেন। লোককাহিনী অনুসারে, ৩১শে অক্টোবর রাত্রিতে সমস্ত মৃত ব্যক্তিরা জীবিতদের বিশ্বে আসে আগামী বছরের নতুন দেহ নেওয়ার জন্য। এই খারাপ আত্মাদের থেকে বাঁচার জন্যই গ্রামবাসীরা নানান ব্যবস্থা নিতো।

‘অল-হ্যালোস-ইভ’ এর প্রভাব

অষ্টম শতাব্দীতে পোপ গ্রেগরী ১ নভেম্বরকে ‘অল সেইন্টস ডে’ ঘোষণা করেন এবং আগের সন্ধ্যা, অর্থাৎ ৩১ অক্টোবরকে ‘অল-হ্যালোস-ইভ’ বা ‘হ্যালুইন’ নামে অভিহিত করেন। মানুষের অন্ধ বিশ্বাস ছিল যে ‘অল-হ্যালোস-ইভ’-এ প্রেতাত্মারা মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে নেমে আসে। তাদের প্রতিহত করতে জীবিত স্বজনেরা এক হয়ে আগুন জ্বালিয়ে নৃত্য করত এবং মৃত স্বজনের রূপ ধরে আসা ভূতকে পাল্টা ভয় দেখাত।
বর্তমানের হ্যালোইন-এর রীতিনীতি কেল্টিক ভাষী দেশগুলোর লোকজ রীতিনীতি ও বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত, যার মধ্যে অনেকগুলোই ছিল প্যাগান বা পৌত্তলিক ধর্মাবলম্বী।

ইসলামে হ্যালোইন হারাম হওয়ার ১০টি কারণ

হ্যালোইন বা ভূত উৎসব পালন করা মুসলিমদের জন্য সম্পূর্ণভাবে হারাম বা অবৈধ। এর প্রধান ১০টি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

১) বিধর্মীদের সাদৃশ্য গ্রহণ

এটি মূলত বিধর্মীদের উৎসব। ইসলামে অন্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসব পালন করা বা তাতে অংশ নেওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। 
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য সম্প্রদায়ের (বিধর্মীদের) সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদেরই দলভুক্ত।’ (সুনানে আবু দাউদ, হা/৪০৩১)
   
০২) পৌত্তলিকতা ও জাহেলিয়াতের অনুকরণ 

এটি অমুসলিমদের পৌত্তলিকতা এবং জাহেলিয়াতপূর্ণ ভ্রান্ত বিশ্বাস ও অপসংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ ছাড়া কিছু নয়।
 
০৩) পূর্ববর্তী উম্মতদের অনুসরণ

এই উৎসব পালন মুসলিমদেরকে ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের রীতি-নীতি অনুসরণের দিকে নিয়ে যায়, যা হাদীসে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে।

০৪) ইসলামের উৎসব সীমাবদ্ধতা

ইসলামের প্রধান ও জাতীয় উৎসব হলো শুধু ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। আনাস (রা.) এর হাদীস অনুসারে, আল্লাহ তাআলা এই দুটি উত্তম দিন দিয়ে অন্য সব জাহেলী উৎসবের পরিবর্তে দিয়েছেন। (আবু দাউদ ১১৩৬)

০৫) আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃতকরণ

মানুষ আল্লাহর সুন্দরতম সৃষ্টি। এই উৎসবে মানুষ বীভৎস মুখোশ ও ভীতিকর পোশাক-পরিচ্ছদে সেজে আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে থাকে।

০৬) বিকৃত রুচির বহিঃপ্রকাশ

এটি মানুষের অসুস্থ মানসিকতা ও বিকৃত রুচির বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়।

০৭) কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভ্রান্ত বিশ্বাস 

এটি সম্পূর্ণভাবে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও ভ্রান্ত বিশ্বাসের নাম, যা এর অন্ধকার ইতিহাস থেকেই স্পষ্ট।
 
০৮)আটজন-উপদ্রব সৃষ্টি ও ভয় দেখানো

এই উৎসবের নামে রাত-বিরেতে জন-উপদ্রব সৃষ্টি এবং মানুষকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়—যা ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসূল (সা.) বলেন, কোনো মুসলিমকে ভয় দেখানো বৈধ নয়।’ (সহিহুল জামে-লিল আলবানি, হা/৭৬৫৮)
 
০৯)  শয়তান পূজা ও শয়তানকে খুশি করা

অনেক গবেষকের মতে, এই উৎসব মূলত শয়তান পূজা এবং শয়তানকে খুশি করার উদ্দেশ্যে করা হয়। এ ধরণের কার্যক্রমে শয়তান খুশি হয়।

১০) তাওহিদের (একত্ববাদ) পরিপন্থী বিশ্বাস

মৃত্যুর পর আত্মা পুণরায় ফিরে আসার বিশ্বাস ইসলাম পরিপন্থী। এ জাতীয় উৎসবে অংশ গ্রহণ করা ঈমানী দুর্বলতা, তাওহিদের বিশ্বাসে ফাটল এবং ইসলামিক শিক্ষা ও সংস্কৃতির ব্যাপারে অজ্ঞতার প্রমাণ।

 

সুতরাং, কোনো ঈমানদারের জন্য হ্যালোইন নামক পৌত্তলিক ও শয়তানি উৎসবে অংশ গ্রহণ কিংবা এ উপলক্ষে কোনো ধরণের আয়োজন-অনুষ্ঠান করা বৈধ বা জায়েজ নাই।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম জাতিকে তাদের নিজস্ব সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং শেকড়ের সাথে সম্পৃক্ত থাকার তৌফিক দান করুন এবং তাদেরকে সবধরণের কুসংস্কার, বিজাতীয় অন্ধ অনুকরণ ও শয়তানের পথ অনুসরণ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

হ্যালোইন উৎসবের ইতিহাস ও ইসলামে হারাম হওয়ার ১০
আরও পড়ুন