ঢাকা
বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

হাদিসের আলোকে সুখী হওয়ার উপায়

আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩০ এএম

পরিস্থিতি কখনো কখনো হতাশার পর্যায়ে নিয়ে যায় আমাদের। কঠিন সময়ের মুখোমুখি হই আমরা। অনেক সময় মনে হয়, আর বুঝি উত্তরণের উপায় নেই। কিন্তু ইসলাম আমাদের হতাশ হতে নিষেধ করে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে ও নতুন করে প্রত্যাশা করার শিক্ষা দেয়।

ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয় মানুষ চিরস্থায়ী সুখ বা দুঃখ লাভ করবে পরকালের জীবনে। পৃথিবীর জীবন নিখুঁত নয়। এখানে সুখ-দুঃখ সবকিছুর মিশেলে জীবনযাপন করতে হয়। দুনিয়াকে মূলত মুমিনের জন্য পরীক্ষার স্থল বলা হয়। দুনিয়া নিখুঁত এবং সুখ-শান্তির স্থল হলে জান্নাতের প্রয়োজন হতো না।

দুনিয়ার জীবনে মুমিনের অবস্থান নিয়ে এক হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার আর কাফেরের জন্য জান্নাত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : হাদিস ৭০৫৮)

দুনিয়ার জীবন জান্নাতে যাওয়ার একটি সেতুপথ। সেখানেই আমরা চূড়ান্ত ও চরম সুখ লাভ করব। তবে এর অর্থ এই নয় যে আমরা দুনিয়াতে সুখ ও শান্তি পাব না, শুধু কষ্টই করে যাবো।

সুখ হলো—যেকোনো পরিস্থিতিতে, এমনকি খারাপ অবস্থাতেও মনে প্রশান্তি অনুভব করা। আল্লাহ যা ঘটান এতে ভালো কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে এমন বিশ্বাস কঠিন পরিস্থিতিতেও আমাদের মনে প্রশান্তি এনে দিতে সাহায্য করবে।

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে সুখ, শান্তিতে জীবনযাপন করা এতো কঠিন কেন? এর মূল কারণ হলো, আমাদের মানসিকতা। আমরা যদি মনে করি সুখ মানে নির্দিষ্ট অর্জন বা বস্তুগত কিছু লাভ করা, তাহলে আমরা সবসময়ই অপেক্ষায় থাকবো, আক্ষেপ করবো এবং কখনোই সুখী হতে পারবো না।

সুখী হতে চাইলে যেসব মেনে চলবেন

সবসময়ই কেউ না কেউ আমাদের চেয়ে এগিয়ে থাকবে, আরেকটু ভালো করবে, বেশি আয় করবে, আরও সুবিধাজনক জীবনযাপন করবে। তাই চিন্তাধারায় পরিবর্তন আনাই সুখের প্রথম ধাপ।

সুখী থাকার ৫টি উপায় তুলে ধরা হলো এখানে—

১) আল্লাহকে স্মরণ করা

সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘটে। আল্লাহ ও তার গুণাবলি সম্পর্কে বেশি বেশি জানার চেষ্টা করলে হৃদয়ে প্রশান্তি আসে। বেশি বেশি আল্লাকে স্মরণ (জিকির) করলে কষ্ট কিছুটা লঘু হয় এবং পরিস্থিতি ভিন্ন আলোকে দেখতে সাহায্য করে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্তি পায়। (সুরা রাদ, আয়াত : ২৮)

২) দোয়া করা

আমাদের চাওয়া-পাওয়া ও অপূর্ণতা লাভের মাধ্যম হলো দোয়া করা। সুখ, প্রশান্তি, কষ্ট, সব দূর হওয়ার উপায় আল্লাহর কাছে চাওয়া ও দোয়া করা। ছোট-বড় যেকোনো বিষয়েই আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। বিশেষ করে দোয়া কবুলের সময় যেমন, রাতের শেষ তৃতীয়াংশ, জুমার দিন আসর-মাগরিবের মাঝের সময়গুলোতে দোয়া করতে হবে।

৩) নেক আমল করা

নেক কাজ ইমানকে শক্তিশালী করে, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করে এবং দুঃখ-কষ্টকে সহজ করে। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য নামাজ, রোজা, নফল-সুন্নত নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত বৃদ্ধি করুন।

এছাড়া পরিবারকে সময় দেওয়া, অন্যকে সাহায্য করা, দান-সদকা করাও নেক আমলের অন্তর্ভূক্ত।

৪) ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার) করা

আমরা সবাই ভুল করি, অনেক সময় অতীত ভুলের চিন্তা আমাদের কষ্ট দেয়। তাই এসব ভুলে গিয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে। আল্লাহর ক্ষমাই অতীত ভুল সংশোধনের উপায়।

আবদুল্লাহ ইবন ওমর (রা.) বর্ণনা করেন: আমরা গণনা করতাম যে, নবী (সা.) প্রতিটি বৈঠকে ১০০ বার ইস্তেগফার পড়তেন। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস : ১৫১৬)

৫) পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারতো— এই অনুভূতি রাখা

যত কষ্টই থাকুক, সবসময় মনে করতে হবে, পরিস্থিতি এরচেয়েও খারাপ হতে পারতো। পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ আরও কঠিন পরিস্থিতিতে আছে। এই উপলব্ধি আমাদের মনে কৃতজ্ঞতা সৃষ্টি এবং নিজের অবস্থা নিয়ে শান্তি অনুভব করতে সাহায্য করবে।

আল্লাহ আমাদের পৃথিবীতে সীমিত সময়ের জন্য পাঠিয়েছেন। এ সময় শেষ হবে—কষ্ট ও দুঃখও শেষ হবে। তাই যা আছে তাতেই খুশি ও কৃতজ্ঞ থাকার চেষ্টা করতে হবে আর যা নেই তা নিয়ে দুঃখ করা যাবে না।

HN
আরও পড়ুন