সম্প্রতি একটি বিশাল আকারের গ্রহাণু পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে অতিক্রম করেছে। অ্যাপোলো শ্রেণির এই গ্রহাণুটির আকার একটি বোয়িং ৭৩৭ বিমানের সমান এবং এটি ঘণ্টায় প্রায় ৪৮ হাজার ৯০০ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে যায়। গ্রহাণুটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৬৮ লাখ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করলেও এটি কোনো ঝুঁকি তৈরি করেনি বলে নিশ্চিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তথ্য অনুযায়ী, গ্রহাণুটির নাম ২০২৪ কেএইচ১ এবং এর ব্যাস প্রায় ১৪০ মিটার। এটি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় পৃথিবীর কক্ষপথ অতিক্রম করে। নাসার সেন্টার ফর নিয়ার-আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজ (সিএনইওএস) এর পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, এই ধরনের বড় আকারের গ্রহাণু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে তা ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে।
গ্রহাণুর আকার ও গতি তার বিপদ নির্ধারণ করে। ছোট গ্রহাণু সাধারণত বায়ুমণ্ডলে পুড়ে যায় এবং উল্কাপিণ্ডে পরিণত হয়। তবে মাঝারি বা বড় আকারের গ্রহাণু (কয়েক মিটার থেকে কয়েক কিলোমিটার) পৃথিবীতে আঘাত করলে ধ্বংসাত্মক পরিণতি হতে পারে:
- স্থানীয় ধ্বংসযজ্ঞ: মাঝারি আকারের গ্রহাণু ভূপৃষ্ঠে আঘাত করে বড় গর্ত তৈরি করতে পারে, ভূমিকম্প বা সুনামির সৃষ্টি করতে পারে।
- বৈশ্বিক বিপর্যয়: কয়েক কিলোমিটার আকারের গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত করলে জলবায়ু পরিবর্তন, অগ্নিকাণ্ড, অ্যাসিড বৃষ্টি এবং দীর্ঘমেয়াদি ধোঁয়াশা সৃষ্টি হতে পারে।
২০১৩ সালে রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্কে ১৮ মিটার আকারের একটি উল্কাপিণ্ড বিস্ফোরিত হলে ১,৫০০-এর বেশি মানুষ আহত হয়েছিলেন। ২০২৪ কেএইচ১ তার চেয়ে অনেক বড় হওয়ায় এর প্রভাব আরও মারাত্মক হতে পারত।
নাসা এবং অন্যান্য মহাকাশ সংস্থাগুলো নিয়মিতভাবে পৃথিবীর কাছাকাছি আসা গ্রহাণু পর্যবেক্ষণ করে। পৃথিবী-সংঘর্ষের ঝুঁকিপূর্ণ গ্রহাণুগুলোর তালিকা তৈরি করে তাদের গতিপথ বিশ্লেষণ করা হয়। ভবিষ্যতে কোনো বড় গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে এগিয়ে এলে তা প্রতিহত করার প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চলছে, যার মধ্যে রয়েছে মহাকাশযান দ্বারা গ্রহাণুকে অন্যদিকে ঠেলে দেওয়ার পরিকল্পনা।
প্রায় ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে একটি বিশাল গ্রহাণুর আঘাতে ডাইনোসরসহ পৃথিবীর ৭৫ শতাংশ প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য গ্রহাণু পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।
এবারের গ্রহাণুটি নিরাপদ দূরত্ব দিয়ে চলে গেলেও, মহাকাশে এমন অসংখ্য গ্রহাণু রয়েছে যা ভবিষ্যতে হুমকি তৈরি করতে পারে। বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছেন যাতে পৃথিবীকে সম্ভাব্য মহাজাগতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা যায়।
