নানা উদ্বেগ, অনিশ্চয়তার মধ্যে শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন। ২০১৪ ও ১৮ এর মতো এবারও সংসদে আধিপত্য পেয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী ২৯৮ জনের মধ্যে ২৮০ জনই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বা দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন। এর বাইরে নির্বাচিত ১৩ জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরীক বা মিত্র। আর পাঁচজন ভিন্ন দল থেকে বা ভিন্ন মতের হলেও তিনজনকে আনা হয়েছিল জয়ের আশ্বাস দিয়ে।
এবার সরকার গঠনের পালা। তাই সবার চোখ এখন নতুন মন্ত্রিসভায়। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠন হতে যাওয়া পঞ্চম মন্ত্রিসভায় নতুন কারা স্থান পেতে পারেন? পুরোনোদের মধ্যে কারা বাদ পড়তে পারেন, কে কোন দপ্তর পাচ্ছেন–এসব নিয়েই চলছে নানা আলোচনা। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনায়ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
বর্তমান মন্ত্রিসভার তিনজন প্রতিমন্ত্রী এবারের নির্বাচনে মনোনয়নই পাননি। আবার মনোনয়ন পেয়েও জয়ী হতে পারেননি আরও তিনজন। ফলে এই ছয়জনের দপ্তরে নিশ্চিতভাবে দেখা যাবে নতুন মুখ। এ ছাড়া বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদেরও কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন। যে কেউ ছিটকে পড়তে পারেন মন্ত্রিসভা থেকে।
জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট প্রকাশের পর সংসদ সচিবালয়ে নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের পরপরই নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করবে আওয়ামী লীগ। নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ জাতীয় সংসদ ভবনে বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভায় দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি সপ্তাহের মধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন।
বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, বর্তমান মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ড. মো. হাছান মাহমুদ, আনিসুল হক, ড. এ কে আবদুল মোমেন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তাজুল ইসলাম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নসরুল হামিদ, মো. শাহরিয়ার আলম ও জুনাইদ আহমেদ পলক।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোয় কারা থাকবেন, তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। অর্থ মন্ত্রণালয়ে দেখা যেতে পারে বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পেতে পারেন। আরেক যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনিও নতুন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন। আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক মন্ত্রিসভায় থাকবেন কি না, তা নিয়েও গুঞ্জন আছে।
নতুন মন্ত্রিসভায়ও সাবেক কয়েকজন আমলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। টেকনোক্র্যাট কোটায় দেখা যেতে পারে দুয়েক একজন অর্থনীতিবিদকেও, যারা অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় কাজ করবেন। পাশাপাশি সাবেক সচিব সাজ্জাদুল হাসান ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। আলোচনা আছে, সাদিককে শিক্ষা এবং সাজ্জাদুল হাসানকে বেসামরিক বিমান পরিবহনের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া খাগড়াছড়ির কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাও এবার মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন।
নতুন মন্ত্রিসভায় এবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের অন্যতম সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে দেখা যেতে পারে। সম্ভাবনা আছে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও শাজাহান খানেরও। থাকতে পারেন সাতবারের নির্বাচিত এমপি মির্জা আজম। তাকে চিফ হুইপ হিসেবেও দেখা যেতে পারে। ময়মনসিংহ থেকে মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুস সালামও।
