খতনার ক্ষেত্রে অ্যানেস্থেসিয়া কতটা জরুরি

আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:১১ পিএম

খতনা করানোর সময় দুই শিশুর মৃত্যুতে দেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। খতনা করাতে গিয়ে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে আহনাফ তাহমিদ নামে ১০ বছর বয়সী একটি শিশু মারা যায়। রাজধানীর মালিবাগের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, অনুমতি না নিয়ে ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। দেড় মাস আগে খতনা করাতে গিয়ে আয়ান আহমেদ নামে আরও এক শিশুর ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটনা ঘটে।

ফলে খতনার ক্ষেত্রে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগের যৌক্তিকতা নিয়ে কথা উঠছে। আগে খতনা করানোর জন্য হাসপাতালেই নেওয়ার প্রয়োজন হতো না। হাজামরা বাড়িতে বাড়িতে এসে কোনো অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই এ কাজ করতেন। হাজাম হলো যারা খতনার কাজ করেন। গত কয়েক দশকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে সার্জারির মাধ্যমে খতনা করানোর হচ্ছে। 

প্রশ্ন হলো, খতনা করানোর সময় অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া ঠিক কতটা জরুরি? দিলেও কখন সেটিতে বিপদ ঘটতে পারে? এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ শাহ আলম ভূঁইয়া জানান, নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে শিশুর খতনা করানোর জন্য অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার দরকার রয়েছে। কিন্তু কোন ক্ষেত্রে ঠিক কী ধরনের অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া দরকার, সেটি নির্ধারণ করাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক পরীক্ষা না করে ভুল সময়ে ভুল অ্যানেস্থেসিয়া দিলে রোগীর জীবন সংকটাপন্ন হতে পারে বলেও মনে করেন শাহ আলম।

প্রসঙ্গত, পুরুষের লিঙ্গের অগ্রভাগের কিছু চামড়া চারদিক থেকে কেটে নেওয়ার পদ্ধতির নামই হলো খতনা বা সারকামসিশন। সাধারণত ইসলাম ধর্মীয় রীতি অনুসারে মুসলিম ছেলে শিশুদের এটি করা হয়। এ ছাড়া কিছু কিছু জন্মগত রোগেও সাকামসিশন করার নির্দেশনা আছে। আবার কারও কারও জন্য এটা করা নিষেধ।

যেমন- যাদের হিমোফিলিয়া নামের রক্তরোগ আছে, তাদের সারকামসিশন করতে বারণ করা হয়। কারণ কাটাছেঁড়া করা হলে তাদের রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না। যাদের প্রস্রাবের নালির ছিদ্র ভিন্ন জায়গায় থাকে। এসব রোগীদের নালি ঠিক করার অস্ত্রোপচারের সময় লিঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া নতুন নালি তৈরিতে কাজে লাগে।

বিশ্বের অনেক দেশেই জন্মের সঙ্গে সঙ্গে খতনা করে দেওয়া হয়। এ সময় শিশুর ব্যথাজনিত বোধ সেভাবে তৈরি হয় না, ফলে ক্ষত দ্রুত শুকিয়ে যায়। তবে ৪ থেকে ১২ বছর বয়সের শিশুদের খতনা করলে সমস্যা সবচেয়ে কম হয়। বেশি ছোট শিশুরা ভয় পায় ও কান্নাকাটি করে। আর বড়দের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী ইরেকশনের কারণে রক্তপাত হওয়ার শঙ্কা বেড়ে যায়। তবে শিশুর খতনা করানোর আগে বাড়ি থেকে তাকে সাহস দিতে হবে। তাকে না বলে, গোপন করে বা জোর করে খতনা করাতে গেলে সার্জারির সময় আঘাতজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সার্জারির মাধ্যমে খতনার ক্ষেত্রে কোনো ডিভাইস ব্যবহার করা হলে সেটির ব্যবহারকারী চিকিৎসক প্রশিক্ষিত কি না, সেটা জেনে নেওয়া জরুরি। লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া বা জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে এই অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে। জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে অস্ত্রোপচার করতে হলে অবশ্যই শিশুকে ৬ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হবে। দেশে পর্যাপ্ত অ্যানেস্থেসিয়া বিশেষজ্ঞ ও এনআইসিইউ সুবিধা না থাকায় অনেক সময় শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তাই সন্তানের অস্ত্রোপচারের আগে কোন ধরনের অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার করা হবে, জেনে রাখা জরুরি।

MB/FI
আরও পড়ুন