ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

পাট পণ্যের দাম বেশি, আগ্রহ হারাচ্ছেন ক্রেতারা

আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:১০ পিএম

একসময় সিরাজগঞ্জে পাট চাষ লাভজনক ছিল। কিন্তু দিনে দিনে পাট চাষে বিমুখ হয়ে পড়েছেন চাষিরা। সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ হয়ে যাবার পর তারা পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। প্রতিদিন পাট পণ্যের ব্যবহার কমে বাড়ছে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার। খরচ কম এবং সহজলভ্য হওয়ায় মানুষের আগ্রহ বাড়ছে প্লাস্টিক পণ্যে। অপরদিকে পাট পণ্যের দাম বেশী হওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছেন ক্রেতারা। প্রতিটি বাজারে প্লাস্টিক পণ্যে সয়লাব।

সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন বাজার দোকান ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাজার করতে এসে ক্রেতারা পলিথিন ব্যাগ বেশী ব্যবহার করে। মাছ-মাংস, শাক সবজি কিনে তারা পলিথিন ব্যাগ চায়। ছালার ব্যাগ অথবা পাটের ব্যাগে পণ্য নিলে ব্যাগগুলো ভিজে যায়। এতে করে নানা সমস্যা হয়। আর পলিথিনের ব্যাগের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা, যেখানে পাটের ব্যাগ ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। পলি ব্যাগ হাতের নাগালে পাওয়া যায় বলেই ক্রেতারাও ব্যবহারে বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

২০২০ সালের ১ জুলাই সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণা করে দেয় সরকার। বন্ধ হয়ে যায় সিরাজগঞ্জ জাতীয় জুট মিল (কওমী জুট মিল)। এতে বিপাকে পড়েন সিরাজগঞ্জের পাট চাষিরা। কর্মহীন হয়ে পড়েন সাড়ে ৪ হাজার শ্রমিক। পরে সিরাজগঞ্জ জাতীয় জুট মিল (কওমী জুট মিল) ইজারা নেয় আলেয়া জুট মিল। বেসরকারীভাবে চলতে থাকলেও এই পাটকলে এখন কর্মরত রয়েছে মাত্র ৫০০ জন শ্রমিক। তারা দুই শিফটে কাজ করে সর্বনিম্ন ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩২০ টাকা দিন হাজিরা পান।

সরকার পরিচালিত পাটকল থেকে শ্রমিকরা দিনে আয় করত ৫৬০ টাকা। জাতীয় জুট মিলে তাঁত মেশিন ৫০০টি থাকলেও এখন সচল রয়েছে ৬৫ থেকে ৭০টি। আর ৫০টি স্পিনিং থাকলেও চলছে মাত্র ২৪টি। বাকি তাঁত মেশিন ও স্পিনিং গুলো অকেজোই পরে রয়েছে। যেখানে জাতীয় জুট মিলে প্রতিদিন ৩০ মেট্রিক টন এর অধিক পাট পন্য উৎপাদন হতো সেখানে বেসরকারীভাবে এখন উৎপাদন হচ্ছে ১০ মেট্রিক টন এর চেয়েও কম। আর উৎপাদন কম হওয়ায় কমেছে সরবরাহ।

পাটকল শ্রমিকরা জানিয়েছেন, দিনে অর্ধবেলার বেশী তাদের কাজ করার অনুমতি নেই। হাজিরা দিচ্ছে মাত্র ২৬০ টাকা। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অন্য কোনো কাজ না জানায় অন্য কোনো পেশাও বেছে নিতে পারছেন না। তাদের দাবি, সরকারিভাবে পাটকলগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হোক। এতে করে পাটকলগুলোও আগের মতো সচল হবে, উৎপাদন বাড়বে, তারাও খেয়েপড়ে বাঁচতে পারবে।

বেসরকারীভাবে পরিচালিত আলেয়া জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মো. আলাউদ্দিন জানান, সরকার থেকে পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে আমরা ব্যক্তি মালিকানায় সরকার থেকে এটি ইজারা নিয়ে চালানোর চেষ্টা করছি। এতে করে এলাকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হয়েছে। যদিও আমাদের এখান থেকে তেমন লাভ হচ্ছে না তবুও টিকে থাকার জন্য আমরা এটা চালু রেখেছি।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সিরাজগঞ্জ জেলায় ১৪ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে ১৬ হাজার ৯১০ হেক্টর, ২০২১-২২ অর্থবছরে  ১৫ হাজার ৮২০ হেক্টর, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৭ হাজার ২৯৮ হেক্টর ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। গত পাচঁ বছরে সিরাজগঞ্জে পাট চাষ বৃদ্ধি পেলেও প্রান্তিক পাট চাষিরা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। জেলার সদর, কাজিপুর, শাহজাদপুর, চৌহালি, বেলকুচি উপজেলা যমুনা নদীর তীরবর্তী হলেও তাড়াশ রায়গঞ্জ উপজেলাতে পাট জাঁক দিতে পানির অভাবে পড়েন কৃষকরা।

পাট চাষীরা জানান, পাট চাষ করতে যে ধরনের সুযোগ সুবিধা দরকার তার কোনোটিই পর্যাপ্ত পরিমানে পান না তারা। এছাড়া শ্রমিকদের মজুরি ও অন্যান্য খরচে লাভের মুখ দেখছেন না। এখন পাটকলগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় লেনদেনে অনেক সমস্যা হয়। সময়মত তারা পাওনা টাকা পরিশোধ করে না যেকারনে পাটের ব্যবসায় থেতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। তাদের দাবি, জাতীয় জুট মিলগুলো পুনরায় সরকার থেকে পরিচালিত হবে। এতে করে সোনালী আঁশ পাটের সুদিন ফিরে আসবে। পাট চাষ বৃদ্ধি পাবে, ব্যবসায়ীরাও লাভবান হবে।

সিরাজগঞ্জ পাট অধিদপ্তরের মুখ্য পরিদর্শক তারানা আফরোজ সজনী জানান,  সিরাজগঞ্জ জেলায় তালিকাভুক্ত পাট চাষি রয়েছেন ১৩ হাজার ৫০ জন। পাট চাষিদের মধ্যে রাসায়নিক সার, বীজ, কীটনাশক সরবরাহ করা হয়। আর প্লাস্টি ব্যবহার কমাতে লিফলেট বিতরণ, উদ্বুদ্ধ করনের মাধ্যমে জন সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

HK/WA
আরও পড়ুন