দেশে কোন ঘটনা ঘটলেই অভিযানে নামে সরকারের সব সংস্থা। কিছুদিন ধরে চলতে থাকে অভিযান। ধর-পাকড়সহ গ্রেপ্তার কার হয় একাধিক ব্যক্তিকে। মামলাও দায়ের করা হয়। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। নির্দিষ্ট সময়ের পর তদন্ত প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। বেরিয়ে আসে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা কিছুদিন জেল খাটার পর আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। মামলাও চলতে থাকে মামলার গতিতে। ততক্ষণে ক্ষতচিহ্নগুলো শুকিয়ে যায়। ভুলে যেতে হয় পেছনের ঘটনাগুলো। আবার যখন কোন ঘটনা ঘটে, তখন পেছনের ঘটনা সামনে চলে আসে।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের আটতলা ভবনে আগুন লাগে। ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছিল বিরিয়ানির দোকান কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁ। এ ছাড়া ভবনটির অন্যান্য তলায়ও ছিল অনেকগুলো খাবারের দোকান। সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে ভবনটিতে ছড়িয়ে পড়া আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়।
এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টের মালিক সোহেল সিরাজকে মঙ্গলবার (৭ মে) রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনের আগুনে ৪৬ জন মারা যাওয়ার পর থেকে রাজধানীজুড়ে অভিযানে নামে রাজউক, ফায়ারসার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের অভিযানের ফলে দেখা যায় রাজধানীর রেস্তোরাঁর অধিকাংশ ভবনেই নেই রাজউকের অনুমোধন। নেই ফায়ার লাইসেন্স। এর ফলে নগর জুড়েই ব্যবসায়ীদের মধ্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। কখন কোথায় অভিযানে আসে সেবাদান কারী প্রতিষ্ঠান আইনশৃঙ্খলা বাহীনি।
এ অভিযানে ১শ বেশি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে নানা ত্রুটির কারণে বেশ কিছু রেস্তোরাঁ সিলগালা ও বন্ধ করা হয়। আটকও করা হয়েছে ৮শ’র বেশি কর্মকর্তা কর্মচারীকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাথে নিয়ে এসব অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। প্রশ্ন উঠে এতো অনিয়মের মধ্যে এতোদিন কিভাবে পরিচালালিত হয়ে এসেছে এসব প্রতিষ্ঠান।
এসব অভিযানে কিছুকিছু ক্ষেত্রে বিতর্ক থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশংসা কুরিয়েছে। তবে কিছুদনি যেতে না যেতেই আবারও সেই পূরনো রূপেই ফিরে এসছে এসব প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন আর কোথায়ও তেমন তৎপরতা চোখে পড়ে না। সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিশ্লষকরা মনে করেন, আবারোও কিছু তাজা প্রাণ ঝড়া পর অভিযানে নামবেন সংশ্লিষ্ঠরা।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ৮টি সংস্থার ১১টি প্রত্যায়নপত্রের পর একটি রেস্তোরাঁর অনুমোদন পাওয়ার কথা। কিন্তু বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কেউ দায় না নিয়ে একে অপরের ওপর দোষ চাপায়।
এ বিষয়ে নগর পকিল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব মনে করেন এই সব অভিযান পুরোপুরি লোকদেখানো। তিনি বলেন, বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলেই দায় এড়াতে চমক দেখিয়ে অভিযান শুরু করে প্রতিষ্ঠানগুলো। এ কারণেই বার বার ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি ঘটছে।
এ বিষয়ে কথা হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও রাজউকের মুখপাত্র মো. আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি খবর সংযোগকে বলেন, আামাদের অভিযান নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে। কোন কোন কারখানাকে জড়িমানা করা হচ্ছে। অনেক হোটেল রেস্তোরাঁর বৈধ্য কাগজপত্র নেই। এমনকি ট্রেড লইসেন্স পর্যন্ত নেই। রাজউকের অনুমোধনের বাহিরে আমরা কাউকে অবৈধ্যভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে দিবো না। একই সাথে অবৈধ ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেও আমাদের নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
এর আগে ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের আগুনে ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। নিমতলী ট্র্যাজেডির পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক এবং অতিদাহ্য পদার্থের ব্যবসা এবং গুদাম সরানোসহ ১৭টি সুপারিশ দিয়েছিল সরকারি কমিটি। কিন্ত সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্বহীনতা এবং দুর্ঘটনার ক'দিন পরই সব তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকসহ অতিদাহ্য পদার্থের গুদাম সরানো সম্ভব হয়নি।
দুর্ঘটনার পর অভিযান পরিচালার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক (মিডিয়া সেল) শাহজাহান সিকদার খবর সংযোগকে জানান, সারা বছর অভিযান অব্যাহত ভাবে চলছে। সবাই কারেন্ট ইসু নিয়ে আলোচনায় থাকতে চায় বিদায় আমাদের অভিযানগুলো ওভাবে প্রচার হয়না। তবে কোন ঘটনার পর বিশেষ টিম গঠন করে অভিযান পরিচলনা করা হয়। আর সবাই তখন গুরুত্ব সহকারে দেখেন তাই আলোচনাও বেশি হয়। আমাদের প্রতিটি এলাকায় আলাদা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা আছে তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে।
