ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

‘অটোরিকশা বন্ধ করলে আমরা খাবো কী’

আপডেট : ১৭ মে ২০২৪, ১০:১৪ এএম

ঢাকার মগবাজার, মধুবাগ এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান মো. আব্দুল বাসেত। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধ করা নিয়ে কথা হয় তার সাথে। ৪ সদস্যের পরিবারের এই কর্তা দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, প্রতিদিন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে তিনি ১২ থেকে ১৫ শত টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন। তা থেকে গ্যারেজ ভাড়া, রিকশার জমা ও খাওয়া-দাওয়ার টাকা দেওয়ার পরেও তার নিকট এক হাজার টাকা পর্যন্ত থাকে।

আব্দুল বাসেত প্রশ্ন করে বলেন, সরকার ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করে দিলে আমরা খাবো কী? বাসেতের ভাষ্য, তাদের উপার্জনের বিকল্প ব্যবস্থা করে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করা উচিত।

ঢাকার মধুবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একেকটি গ্যারেজে সর্বোচ্চ ৩০টি করে ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। ওইসব ব্যাটারিচালিত রিকশা, রিকশার গ্যারেজ মালিকরা নিজেরাই তৈরি করেন। একেকটি ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি করতে ব্যাটারি কেনা ও অন্যান্য যন্ত্রাংশসহ ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয় বলে জানান মালিকপক্ষ।

জানা যায়, ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা গ্যারেজ থেকে নিয়ে একজন চালক চালালে দিনে মালিকপক্ষকে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত জমা দিতে হয়। এছাড়াও গ্যারেজে খাওয়া-দাওয়া করলে গুনতে হয় অতিরিক্ত টাকা।

ঢাকার মধুবাগের একটি ব্যাটারি চালিত রিকশা গ্যারেজ। ছবি: দৈনিক খবর সংযোগ

কথা হয় মধুবাগ এলাকার রিকশা গ্যারেজের মালিক মোহাম্মদ খাইরুল ইসলামের সাথে। তার গ্যারেজে ৩০টি ব্যাটারিচালিত রিকশা আছে। দৈনিক খবর সংযোগকে তিনি বলেন, সরকার আমাদের উপার্জনের অন্য একটা ব্যবস্থা করে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করুক। এখন হঠাত এগুলো বন্ধ করে দিলে আমি আমার এসব রিকশা দিয়ে কী করব, কোথায় দিব- প্রশ্ন করেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, একটা ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি করতে  ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়। ঢাকায় এসব ব্যাটারি চালিত রিকশার অনেক গ্যারেজ রয়েছে। সরকার যাই বলুক ব্যাটারি চালিত রিকশা বন্ধ করতে পারবে না।

মধুবাগ এলাকার আমজাদ হোসেন নামের অপর একজন ব্যাটারি চালিত রিকশা গ্যারেজ মালিকের সাথে কথা হয়। গ্যারেজে তার নিজস্ব ব্যাটারিচালিত রিকশাসহ কিছু  প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরও ব্যাটারিচালিত রিকশা থাকে।

আমজাদ হোসেন দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, সরকার যদি এসব রিকশা আগেই বন্ধ করতো তাহলে কোন সমস্যাই ছিল না। এগুলো আর বাড়তো না। এসব রিকশা চালু করার সুযোগ দিয়ে বন্ধ করে মানুষের রিজিক নষ্ট করবে, এটাতো ঠিক না।

তিনি জানান, সরকার এসব রিকশার ব্যাটারি আমদানি বন্ধ করুক। তাহলে মানুষ আর এগুলো বানাবে না। মানুষ জায়গা জমি বিক্রি করে কিংবা ঋণ করে এসব রিকশা বানিয়েছে। রিকশাগুলো বন্ধ করলে এসব মানুষ কী করে খাবে, সে ব্যবস্থা সরকার করে দিক।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, আমরা চাই, ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো প্রধান সড়ক দিয়ে চলবে না। কিন্তু গলি সড়ক দিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলুক। এতে করে যারা এসব রিকশা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তারাও বাঁচবেন অন্যদিকে যাত্রীদেরও উপকার হবে।

ছবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, ইঞ্জিন চালিত অটোরিকশাগুলো কিন্তু সব সড়কে চলতে পারে না। ঢাকার বিভিন্ন আশেপাশে যেসব সড়ক রয়েছে সেগুলো দিয়ে চলে।

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের এ ধরনের সিদ্ধান্ত এলে যারা এই রিকশাগুলো ওপর জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের ওপর একটা বড় ধরনের আঘাত আসে।

তিনি  বলেন, অনেকেই আছেন যারা পায়ে চালিত রিকশা চালাতে পারেন না কিন্তু মেশিন চালিত রিকশা চালাতে পারেন। এর মধ্যে আবার অনেকেই আছেন যারা প্রতিবন্ধী। এসব মানুষকে তো কিছুটা সুযোগ দিতেই হবে।

তিনি আরও বলেন, যেসব পণ্য উৎপাদিত হয়েছে সেসব পণ্য যদি রাষ্ট্রে ব্যবহার করা না হয় তাহলে কিন্তু রাষ্ট্রের এক ধরনের ক্ষতি হয়। উৎপাদিত পণ্য যদি ব্যবহার করা না হয় তাহলে তা আসলে উৎপাদন করাটাই উচিত ছিল না। আর উৎপাদিত পণ্যের একটা আয়ুষ্কাল থাকে। যেসব পণ্য ইতোমধ্যে উৎপাদিত হয়েছে সেগুলোর জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে তারপর ব্যবস্থা নিলে ভালো হতো। সিদ্ধান্তগুলো খুব তড়িৎ গতিতে না দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রে এবং কোন কিছু বন্ধ করার ক্ষেত্রে তাকে যেন একটু সময় দেই, সেই জায়গাটা বিবেচনা করলে সবদিক থেকেই ভালো হতো।

উল্লেখ্য, ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার (১৫ মে) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভবনে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সভায় তিনি এই নির্দেশ দেন। 

ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাজধানী ঢাকায় যাতে কোনো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে না পারে সে ব্যাপারে শুধু নিষেধাজ্ঞা আরোপ নয়, কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ  করতে হবে।  এ ছাড়া ২২ মহাসড়কে রিকশা ও ইজিবাইক নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নেরও নির্দেশ দেন তিনি।

AS
আরও পড়ুন