ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

বেশি মুনাফার আশায় বাজারে অপরিপক্ক আম

আপডেট : ১৯ মে ২০২৪, ১১:০১ এএম

জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহ না যেতেই আমে সয়লাভ হয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার। ‘আম ক্যালেন্ডারের’ হিসাব অনুযায়ী এসব আম বাজারে আসার কথা আরও সপ্তাহখানেক পরে। অতিরিক্ত লাভের কারণে ‘কার্বাইড’ দিয়ে পাকিয়ে এগুলো আগেভাগে বাজারে ছাড়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ব্যবসায়ী ও কৃষি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক বাজারে কোন জাতের আম কখন আসবে তার সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। জাতভেদে গুটি আম ১৫ মে, গোপালভোগ, রানি পছন্দ বা লাখনা ২৫ মে, খিরসাপাত ৩০ মে, ল্যাংড়া ১০ জুন, আম্রপালী ও ফজলি ১৫ জুন, ফজলি ১৫ জুন, বারি-৪- ৫ জুলাই, আশ্বিনা ১০ জুলাই এবং গৌড়মতি ১৫ জুলাই, ইলামতি ২০ আগস্ট এছাড়া কাটিমন, বারি-১১ পরিপক্ক সাপেক্ষে সারা বছর আম সংগ্রমের সময়সীমার কথা জানানো হয়েছে। 

অথচ মে মাসের শুরু থেকেই বাজার আমে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। প্রায় সব ধরণের আম এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। শুধুমাত্র গুটি আম ছাড় বাকি অন্যান্য ধরনের আম অপরিপক্ক, মেডিসিন দিয়ে পাকানো। তাই ঘ্রাণ বা স্বাদ কোনোটাই নেই এসব আমে। 

তবে বাগান মালিকরা বলছেন, আম এখন পরিপক্ক হয়ে গেছে। তাই গাছ থেকে আম পাড়া হচ্ছে। এর মধ্যে আবার মাঝেমধ্যে প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে, জব্দ করা আম ধ্বংস করছে। হরমোন ব্যবহারের অভিযোগ এনে ধ্বংস করা হচ্ছে আমগুলো। 

তবে এই হরমোন ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কি না- সে বিষয়ে মাঠ প্রশাসন ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মধ্যে মতের মিল নেই।

মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দাবি, এভাবে কৃত্রিমভাবে ফল পাকালে তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। 

যদিও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফল বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেছেন, এই হরমোন ব্যবহার করে সব দেশেই ফল পাকানো হয়।

কৃত্রিমভাবে ফল পাকানো নিয়ে প্রতি বছরই এ বিষয়টি দেখা যায়। কয়েক বছর আগে হরমোন ছাড়াও ফলে 'ফরমালিন ব্যবহার' নিয়েও নানা কথা ছড়ায়। সেসব অভিযোগে কেবল আম নয়, অন্যান্য ফলও নানান সময় ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু পরে সরকারের তরফ থেকেই সেই ভুল ভাঙা হয়েছে। তবু নানা সময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এই কাজ করছেন।

এতে ভোক্তাদের মনে যেমন ভুল ধারণা জন্ম দিচ্ছে তেমনি 'ফরমালিনমুক্ত' দাবি করে বিভিন্ন এলাকায় ফল বিক্রি করা হয়, সেখানে দাম বেশি রাখা হয়।

শনিবার (১৮ মে) রাজধানীর বাদামতলী, কারওয়ানবাজার এবং যাত্রাবাড়ী ফলের আড়ৎগুলোতে দেখা যায়, গোবিন্দভোগ, গোপাল ভোগ এমনকি হিমসাগর পাকা আম বিক্রি হচ্ছে। 

এ বিষয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় মৌসুমের শুরুতে সব কিছুর বাড়তি চাহিদা থাকায় বাড়তি দামও পাওয়া যায়। বিক্রেতারা তাই আগেভাগেই আম বাজারে নিয়ে এসেছেন। এক্ষেত্রে বাগান মালিক ও বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হচ্ছেন। ক্রেতাদেরকেও নতুন ফলের স্বাদ নিতে বাড়তি দামেই এসব ফল কিনতে হচ্ছে। যদিও স্বাদ একটু কম বলেই জানাান তারা।

এ বিষয়ে কথা হয় ভোক্তা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া সুলতানার সঙ্গে। তিনি দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, বাড়তি লাভের আশায় বাগান মালিক এবং বিক্রেতারা অপরিপক্ব আম বাজারে নিয়ে আসেন। ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে ব্যবসায়ীদেরকে আগে থেকেই কোনো প্রকার রাসায়নিক উপাদান না করার বিষয়ে সতর্ক করে আসছি। তারপরও কিছু-কিছু আসাধু ব্যবসায়ী এ পথ অবলম্বন করেন। 

তিনি বলেন, আমরা প্রতিবছরের মতো এবারও অভিযান পরিচালনা করছি। ভেজাল রোধে রাজধানীর প্রতিটি আড়তে অভিযান পরিচালনা করব। 

কার্বাইড দিয়ে ফল পাকানো জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. সুরজিত সাহা রায় দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, ফল আমাদের খাদ্য ও পুষ্টির একটি অন্যতম উৎস। কিন্তু দেশের একশ্রেণির মধ্যসত্ত্বভোগী, মুনাফালোভী ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে ফল পাকিয়ে ফলের খাদ্যমান বিনষ্ট করছে। হরহামেশা ক্যালসিয়াম কার্বাইডসহ বিভিন্ন প্রকারের বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে আম, কলা, কাঁঠাল, আনারসসহ অন্যান্য আকর্ষণীয় ফল পাকানো হচ্ছে। এতে ক্রেতাসাধারণ ও ভোক্তারা প্রতারিত হয়ে আর্থিক এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন।

তিনি বলেন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ। এটি এমন এক যৌগ যা বাতাসে বা জলীয় সংস্পর্শে এলেই উৎপন্ন করে এসিটিলিন গ্যাস। যা ফলে প্রয়োগ করলে এসিটিলিন ইথানল নামক বিষাক্ত পদার্থে রূপাস্তরিত হয়। আর কেমিক্যাল মিশ্রিত ফল খেলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি নানা রকম রোগে বিশেষ করে  বদহজম, পেটেরপীড়া, পাতলা পায়খানা, জণ্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়াসহ ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়া মহিলারা এর প্রভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারেন। শিশুরা বিষাক্ত পদার্থের বিষক্রিয়ার ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। 

কারওয়ান বাজারে আম কেনার সময় কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মুনিরুজ্জামান নামের এক ব্যক্তির সাথে। তিনি দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, মাসের শুরু থেকেই বাজারে আম দেখছি। যদিও সব আম আসার সময় এখনও হয়নি। কিন্তু সবারই মৌসুমের শুরুতে আম খাওয়ার একটা ইচ্ছে থাকে। তাই আমিও আম কিনতে এসেছি।

FI
আরও পড়ুন