ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

সন্ধ্যায় বৈঠক, ১৪ দলীয় জোট নেতাদের 'মান' ভাঙ্গবে?

আপডেট : ২২ মে ২০২৪, ১১:০৮ এএম

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। জোট সংশিষ্ট একাধিক দলের শীর্ষ নেতারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। 

আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, এ বৈঠকে ১৪-দলীয় জোটের শরিক নেতারা ছাড়াও আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন  গুরুত্বপূর্ণ নেতা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকে জোটনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। 

আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস ও উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান ১৪-দলীয় জোটের বৈঠক ডাকার বিষয়টি  দৈনিক খবর সংযোগ নিশ্চিত করেন। 

গত বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এটিই হবে ১৪-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম বৈঠক।  নির্বাচনে ১৪-দলীয় জোটের অনেক নেতা নৌকা প্রতীক পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হন। এছাড়া, সেই নির্বাচনকে ঘিরে জোটের অনেক নেতা মাঝেই অসন্তোষ জন্মেছে বলে জানা গেছে। 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাসদের রেজাউল করিম তানসেন ছাড়া কেউই বিজয়ী হতে পারেননি। এ নিয়ে নির্বাচন পরবর্তী ১৪-দলীয় জোটের অনেক শরিক নেতা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে তাদের ক্ষোভ ও অসন্তোষের কথা প্রকাশ করেছেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে শরিকদের ১৩টি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে সাতটিতে জয়ী হন তাঁরা। পরে উপনির্বাচনে আরেকটি আসন পায় ১৪ দলের শরিকেরা। গত সংসদে ১৪ দলের শরিকদের দুজন নারী সংসদ সদস্যও ছিলেন। এবার সংরক্ষিত নারী সদস্য একজন।

সম্প্রতি গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ১৪-দলীয় জোটের অস্তিত্ব নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আদর্শিক ১৪-দলীয় জোট বহাল রয়েছে। শিগগিরই জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণার পর আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকটি ডাকা হয়েছে।

ইতোমধ্যে জোট নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো শুরু হয়েছে। বৈঠকে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও রাজনৈতিক, সামাজিকসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি রাজনীতির মাঠে বিরোধীদের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবিলায় ১৪-দলীয় জোটের ভূমিকা কী হবে- সে বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে কর্মকৌশল চূড়ান্তসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।

২০০৪ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ২৩ দফার ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ১৪-দলীয় জোট। নবম সংসদ নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোটগতভাবে আসন ভাগাভাগি করে নির্বাচনে অংশ নেয় জোটের শরিকরা।

নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদে জোটের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। তবে এবার মাত্র দুজন নির্বাচিত হয়েছেন। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ নৌকা প্রতীক পাওয়া ১৪ দলের বাকিরা কেউই নির্বাচিত হতে পারেননি। এরপর থেকেই নানান কারণে জোট শরিকদের মধ্যে দূরত্ব বেড়েছে। জোটের বৈঠক, দলের (শরিক দলসমূহ) বিবৃতি-বক্তৃতা এমনকি জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যেও তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকেরা তাদের ছেড়ে দেওয়া ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু তা আমলে নেয়নি আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে জোটের মধ্যে একধরনের তিক্ততা তৈরি হয়। এর পর থেকেই ১৪–দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে জোটের প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ জানিয়ে আসছিল শরিকেরা। সরকার গঠনের প্রায় সাড়ে চার মাস পর জোটের শরিকদের নিয়ে বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
 
আওয়ামী লীগ আদর্শিক ১৪ দলের সাথে সমন্বয় করে আগামী দিনগুলোতে একসঙ্গে চলার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেও জোটের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য ভিন্ন। 

তারা বলছেন, কোনো এজেন্ডার ভিত্তিতে আমরা বসতে যাচ্ছিনা। জোট প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেকেছেন আমরা দেখা করতে যাচ্ছি। 

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, চৌদ্দ দলের সঙ্গে আমাদের আদর্শিক একটা সম্পর্ক রয়েছে। আমরা বিগত দিনগুলোতে একসাথে রাজপথে থেকে বিএনপি-জামায়াতের মোকাবেলা করেছি। নির্বাচনের পরে আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি প্রধানমন্ত্রীর এই আহবানে আমরা একত্রিত হবো। কী এজেন্ডা নিয়ে বসতে যাচ্ছি বৈঠকের আগেই কিছু  বলা যাচ্ছেনা। 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, দুঃখ-কষ্ট কিংবা হতাশার কোনো বিষয় আছে বলে আমি মনে করিনা। ১৪ দলীয় জোট প্রধান ও জোটের নেতারা বসবেন একসাথে নানান কৌশলগত বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা হবে, পরামর্শ হবে কীভাবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করা যায়। আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয় নিয়েও এখানে আলোচনা হতে পারে। 

মানসিক কোনো দূরত্ব তৈরি হয়েছে কিনা এই প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, আমরা মনে করিনা। তবে চলার পথে কেউ মনোকষ্ট পেয়ে থাকতেই পারে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ আলোচনায় বসলে এইসব ব্যাপার এমনিতেই দূর হয়ে যাবেই। 

এবং এই বৈঠকের মাধ্যমেই সমস্ত ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটবে। 

আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন,গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ,মেহনতী মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মূল্যবোধ ইত্যাদি প্রেক্ষিতকে সামনে রেখেই আদর্শিক জোট হিসেবে ১৪ দলীয় জোট গঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ চলার পথে বা রাজনীতিতে বা জোটে কোনো একটা বিষয় নিয়ে মতভেদ মতানৈক্য,মতদ্বৈততা থাকতে পারে। কিন্তু যখন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করতে হবে, স্বাধীনতা-গণতন্ত্র এবং যুদ্ধাপরাধীর  বিরোধী লড়াই করতে হবে তখন নিশ্চয়ই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী স্বাধীনতার স্বপক্ষের সকল শক্তিকেই একবিন্দু থেকে লড়াই করতে হবে। তবে হ্যাঁ বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোটের নেতাদের মনে ক্ষোভ থাকতে পারে। আমি মনে করি, যেহেতু এটা আদর্শিক জোট তাই ক্ষমতাটাই মূল কথা নয়। আমরা ব্যক্তিগতভাবে কে, কী পেলাম বা পেলাম না এটা মূল কথা নয়। আমরা আদর্শ বাস্তবায়নে কতটুকু আগাতে সক্ষম হচ্ছি বা পেরে উঠলাম গণমানুষের আকাঙ্খা বিরোধীদের কতটুকু পরাস্ত করতে পারলাম সেই যুক্তির নিরিখেই এই জোট গঠিত হয়েছিল। 

আওয়ামী লীগের প্রতি জোটের নেতাদের ক্ষোভ ও অবিশ্বাস জন্মেছে এটাকে কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে এই নেতা আরও বলেন, জোটের সকল শীর্ষ নেতার সাথেই যোগাযোগ আছে। আমি ক্ষোভ তেমন দেখিনা। কারও যদি ক্ষোভ থাকে, তাহলে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলবেন। তবে আমার বিশ্বাস আমরা অতীতে একসাথে পথ চলেছি,আজও আছি ভবিষ্যতেও একসাথে থাকব। আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের অবিশ্বাস জন্মেছে এ কথা আমার জানা নাই, বোধগম্য নই। জোট তো বটেই একটা দলের মধ্যেও মতভেদ মতানৈক্য মতপার্থক্য দেখা দেয়। কিন্তু চূড়ান্ত লড়াইয়ে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাবোই। 

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, ১৪ দল এমন একটা জোট যেটি নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে গঠিত হয়েছে। আদর্শভিত্তিক জোট গঠিত হওয়ার কারণে বিভিন্ন সময় নানা টানাপোড়েনের পরেও এই জোট এখনও টিকে আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। 

জোটের নেতাদের মধ্যে হতাশা দেখতে পাওয়া যায় কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে হতাশা থাকবে আশা থাকবে,মান-অভিমান থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। 

তিনি বলেন, ১৪ দলের জোটের নেতাদের এটা উপলব্ধি করা উচিত যে আওয়ামী লীগের সাথে জোটে থেকেই তারা এমপি-মন্ত্রীসহ নানাভাবে তারা মূল্যায়িত হয়েছেন। এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। 

২৩ মে কী এজেন্ডা নিয়ে বৈঠক হতে যাচ্ছে জানতে চাইলে ১৪ দলের অন্যতম শরীক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী কী বলেন সেটার উপর ভিত্তি করেই আমাদের পরবর্তী এজেন্ডা সম্পর্কে বলতে পারব। আমরা তার আগেভাগেই কিছু ঠিক করছি না। 

আওয়ামী লীগের সাথে নীতিগতভাবে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জাসদ সভাপতি আরও বলেন, আপাতত এমন কোনো বিষয় নাই। আমরা তো ১৪ দলের শরিক জোট হয়েই আওয়ামী লীগের সাথে আছি। 

বৈঠকের এজেন্ডার বিষয়ে জোটের আরেক শরীকদল ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিটিং  ডেকেছেন, উনিই বলবেন। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ১৪ দল আছে, ১৪ দল থাকবে। সুতরাং আগামীকাল তিনি কী বলবেন তা শুনি, এরপর আমরা কিছু বলতে পারব।  

 

AST
আরও পড়ুন