ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

বাম্পার ফলনেও গোমড়ামুখ কৃষকের, কিন্তু কেন?

আপডেট : ২৯ মে ২০২৪, ০১:৪৩ পিএম

হাওর অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জে এ বছর বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলন এবং বৃষ্টিজনিত কারণে প্রতিবছর যে ফসলের ক্ষতি হয় সেটি না হওয়ায় সুনামগঞ্জ অঞ্চলের কৃষকরা এবার বেশ খুশি। তবে ধান ভালো হলেও ধানের ন্যাযমূল্য না পেয়ে অনেকটা হতাশ কৃষকরা। প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র  চাষীদের ধান কিনে নিচ্ছেন স্থানীয় সুদখোর ও মজুদদাররা।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা বছরের একমাত্র ফসল হচ্ছে বোরো ধান। এই ধান দিয়ে তাদের সারা বছরের খোরাকি, সংসার খরচ, সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা, আচার-অনুষ্ঠান চলে। হাওরাঞ্চলের কৃষকরা স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করে। কৃষকরা যখন জমিতে ধান কাটা শুরু করে তখন মহাজনরা তাদের ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে কৃষকরা তাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল স্থানীয় ফড়িয়াদের কাছে কম দামে বিক্রি করে মহাজনের ঋণ পরিশোধ করে।

অন্যদিকে কৃষকদের অভিযোগ, অন্যান্য বছর স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গণশুনানি করে কৃষিকার্ড সংগ্রহ করা হতো এবং এতে অনেকেই সুবিধা পেতেন। এবছর মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রান্তিক কৃষকরা।

সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার এবার সুনামগঞ্জের হাওরে ১২৮০ টাকা মণ দরে ২৯ হাজার ৮১১ মে.টন বোরো ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সিদ্ধ চাল ৪৫ টাকা কেজি দরে ৯৬৮৪ মে.টন ও আতপ চাল ৪৪ টাকা কেজি দরে ৯৯৫৪ মে.টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে। আগামী আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযান চলবে। এবার লটারির মাধ্যমে ৭টি উপজেলায় এবং ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ৫টি উপজেলায় কৃষকরা গুদামে ধান দেওয়ার জন্য নির্বাচিত হবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে অথবা গ্রামে গ্রামে গিয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আগ্রহী কৃষকদের কৃষিকার্ড সংগ্রহ করার কথা। কিন্তু তারা এটা না করে কম দামে ধান কিনে বেশি দামে বিক্রি করার জন্য মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের সঙ্গে আতাঁত করে কৃষিকার্ড সংগ্রহ করে তালিকার জন্য প্রস্তুত করেছেন। এতে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অসচেতন কৃষকদের কার্ড সংগ্রহ করে মধ্যস্বত্বভোগীরা গুদামে ধান দিতে তালিকাভূক্ত হচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাগ ইউনিয়নের মুক্তাখাই গ্রামের আকলুছ মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের গ্রামে কৃষকদেরকে জানানো হয়নি। কোনো কৃষি কর্মকর্তা আসেনি। যদি আসতেন তাহলে অবশ্যই জানতাম। আমাদের এলাকার কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।  সরকার যেখানে ১২৮০ টাকা করে প্রতি মন ধান ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে,সেখানে কৃষকরা ১০০০ টাকা মন দরে ধান বিক্রি করছেন। 

একাধিক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে  জানিয়েছেন,আমাদের এলাকায় এসে চৈত্র মাসেই সুদখোররা কম দামে অগ্রীম টাকা দিয়ে যায়। অর্থাৎ ৭০০/৮০০ টাকা মন দরে টাকা গ্রহণ করেন কৃষকরা। কৃষকদের হাত শূন্য থাকায় এই সময় কৃষি শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ, কৃষি সরঞ্জাম কেনা, মাড়াই খরচ, ধান কাটার যন্ত্রের টাকা পরিশোধ করা, কাঁচি, কুলা, ট্রলির ভাড়া, পারিবারিক নানান চাহিদা মেটাতে সুদখোরদের কাছে অল্পমূল্যে ধানের টাকা অগ্রীম নেন। এতে কৃষকরা সকল ধরনের সুবিধা থেকে  বঞ্চিত হচ্ছে। 

সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুহেল মিয়া বলেন, সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের বিষয়টি কৃষকদের জানানো হয়েছে। কিন্তু, আমাদের এলাকার কৃষকরা আগেই ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। কারণ, কৃষকদের ঋণ আছে। যেকারণে তাদের সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব হয়না। ধান গোলায় তুলেছেন এমন কৃষক খুবই কম।

শিমুলবাগ  ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা  শাহ শামিমা নাসরিন বলেন, আমরা এলাকার সবার কাছে গিয়েছি। শিমুলবাগ ইউনিয়নে আমার ব্লকের কৃষকদের সাথে কথা বলে তাদেরকে আবেদনের নিয়ম কানুন জানিয়ে দিয়েছি। অনেকেই আবেদন করেছেন। 

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মঈনুল ইসলাম ভূঞা বলেন,ইতোমধ্যে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে কৃষকদের অবগত করার পর যাঁরা লটারিতে বিজয়ী হয়েছেন,তাদের নিকট থেকে ধান ক্রয় কার্যক্রম চলছে। লটারিতে বিজয়ী যে সকল কৃষক ধান বিক্রি করতে আসবেন না, তাদের  পরিবর্তে নতুন কৃষকদের তালিকা সংগ্রহ করে, ফের লটারির মাধ্যমে বিজয়ী কৃষকদের  ধান বিক্রির সুবিধা দেওয়া হবে।

HK/AST
আরও পড়ুন