ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

দৃষ্টিসীমার বাইরে ঢাকা নগর পরিবহন

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ১০:২৯ পিএম

‘অন্য বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে যাত্রী পাওয়া যায় না।  অন্য কোম্পানির বাস ১০ মিনিট পরপর আসে। আর অন্তত ১০টা কোম্পানির বাস এই রুট দিয়ে চলে। তাই সবসময়ই কোনও না কোনও কোম্পানির বাস থামে স্টপেজে। সেখানে নগর পরিবহন আসে ৩০  থেকে ৪০ মিনিট পর। এতক্ষণ যাত্রী আটকে রাখা যায় না। বাস আসার দুই মিনিট আগে কাউন্টারে ফোন দেওয়া হলে তখন যাত্রী ডেকে জড় করতে হয়। এভাবে কোনও পরিবর্তন আসবে না।’

রাজধানীর গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে ‘একক বাস কোম্পানি’ চালুর কথা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছিল ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার বাস রুটের সংখ্যা কমিয়ে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’-এর আওতায় সব বাস চালানোর পরিকল্পনা নিয়েও কাজ করছিল সংস্থাটি। তবে একটি রুট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এখন আগের পরিকল্পনা থেকে কিছুটা পিছু হটছে ডিটিসিএ।

প্রথম ধাপে ব্যর্থ হওয়ার পর কিছুদিন বন্ধ রেখে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিটিসিএ’র পরিকল্পিত ২১ নম্বর রুটে (গাবতলী-চাষাড়া) ৩৫টি এসি বাস দিয়ে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ সেবা আবারও চালু করা হয়। চালুর আগে জানানো হয়েছিল, এই রুটে অন্য বাস কোম্পানিগুলোকেও ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ এর আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এদিকে ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী পরিবহনসমূহে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নিমিত্ত্বে  ঢাকা নগর পরিবহন চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

শুরুতেই এই পদক্ষেপকে যুগান্তকারী একই সঙ্গে শহরের যানজট কমাতে বড়ভুমিকা রাখবে বলে দাবি করা হয়। এজন্য নগর পরিবহনের বহরে নতুন গাড়ি সংযোগের কথা শুনানো হয়। কিন্তু চালু হওয়ার পর দেখা গেল পুরাতন লক্কড় ঝক্কড় গাড়িগুলো রংচং করে নগর পরিবহনের ব্যানারে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে শুরু থেকেই কর্তৃপক্ষের প্রতারণা উলঙ্গ হয়ে পড়ে। যদিও রাজধানীর মাত্র দু থেকে তিনটি রুটে নগর পরিবহনের বাস চলাচল করেতে দেখা যায়। 

কয়েকদিনের ব্যবধানে বিভিন্ন অজুহাতে বেশ কয়েকটি কোম্পানি এই ব্যানার থেকে তাদের গাড়ি প্রত্যাহার করে নিলে অতিদ্রুত এই ব্যানারে লালবাতি জ্বলে যায়। এরপর গোলাপি রংয়ের গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  প্রাথমিকভাবে এখানেই বেছে নেওয়া হয় দুটি সড়ক।  এই দুটি সড়কে গোলাপি রংয়ের বাস চলাচল করলেও যাত্রী সেবার চেয়ে যাত্রী ভোগান্তি বেড়েছে। তাই অনেকে গোলাপি বাসের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।  এখন কেউ গোলাপি গাড়ি নিয়ে কোন ধরনের আলাপ আলোচনা করতে চান না। 

এদিকে এই দুই পরিবহন নামানো হয় যানজট নিরসেনের লক্ষ্যে। কিন্তু সে লক্ষ্য পুরণে পুরোপুরি হতাশ  হয়েছেন রাজধানীবাসী। গোলাপি বাসের দেখা মিললেও নগরপরিবহন এখন দৃষ্টিসীমার বাইরে।
 
যদিও যাত্রী ভোগান্তির কথা স্বীকার করতে চান না নগর পরিবহন কর্তৃপক্ষ। তারা  জানান, সার্ভিসটি আরাম দায়ক করার জন্য বিভিন্ন কোম্পানি থেকে আবেদন নেওয়া হয়। সেগুলো  নতুন করে যাচাই-বাছাই করা হয়। একটি দারুণ বিজনেস মডিউল তৈরি করা হয় বাস মালিকদের স্বার্থে, যেন তারা আগ্রহী হন। কিন্তু এক মাস না যেতেই বাস্তবে হতাশার চিত্র উঠে এসেছে। বাসের সংখ্যা কমে যাওয়া, যাত্রীদের দীর্ঘ সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করা, ভাড়া বেশির কারণে যাত্রীদের অনীহাসহ নানা অব্যবস্থাপনায় অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়ে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, বিদ্যমান ব্যবস্থায় অন্যান্য কোম্পানির নন-এসি বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই চলতে হচ্ছে ঢাকা নগর পরিবহনকে। সেসব বাস সরানোর কোনও উদ্যোগ নেই। এদিকে ঢাকা নগর পরিবহনের বাসের সংখ্যা কমে যাওয়ায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। তাদের অভিযোগ, বাসের জন্য স্টপেজে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও একই চিত্র দেখা যায়।

কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গত কয়েক দিনে গড়ে মাত্র সাত থেকে ১৪টি ট্রিপ লিপিবদ্ধ হয়েছে। বাসের সংখ্যা গড়ে ১০টিরও কম। তাছাড়া ভাড়াও তুলনামূলক বেশি বলে অভিযোগ যাত্রীদের। কলেজগেট থেকে গুলিস্তান নন-এসি বাসের ভাড়া ২৫ টাকা হলেও ঢাকা নগর পরিবহনে নেওয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কাউন্টার কর্মী বলেন, বাসের সংখ্যা কমে গেছে। যেখানে অন্তত ২০টা বাস দরকার, সেখানে কোনোদিন পাঁচটি, কোনোদিন সাতটি বাস চলাচল করে।  নতুন ঢাকা নগর পরিবহনের বাসগুলোও চলতে বাধা দিচ্ছে কেউ কেউ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। ৩ থেকে ৪ হাজার যাত্রী এখন নিয়মিত চলাচল করছে। তাদের আমরা শৃঙ্খলা আনতে পেরেছি। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় যেমন- গুলিস্তান, নারায়ণগঞ্জ এসব জায়গায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি।’

নগর পরিবহন নিয়োজিত কাউন্টার কর্তৃপক্ষ জানান, অন্য বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে যাত্রী পাওয়া যায় না। অন্য কোম্পানির বাস ১০ মিনিট পরপর আসে। আর অন্তত ১০টা কোম্পানির বাস এই রুট দিয়ে চলে। তাই সবসময়ই কোনও না কোনও কোম্পানির বাস থামে স্টপেজে। সেখানে নগর পরিবহন আসে ৩০  থেকে ৪০ মিনিট পর। এতক্ষণ যাত্রী আটকে রাখা যায় না। বাস আসার দুই মিনিট আগে কাউন্টারে ফোন দেওয়া হলে তখন যাত্রী ডেকে জড় করতে হয়। এভাবে কোনও পরিবর্তন আসবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প পরিচালক ধ্রুব আলম বলেন, নগর পরিবহনে বাস চলছে ২২টি। আমাদের প্রতিদিন তিন-চার হাজার টিকিট বিক্রি হয়। পাঁচটি বাস দিয়ে এগুলো সম্ভব না। ১৯-২০টি বাস গড়ে চলাচল করে। আমরা প্রতিদিনই খোঁজ নিচ্ছি।

একই রুটে অন্য বাস চলাচল বন্ধের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নন-এসি বাস বন্ধ করবো না। আমাদের ২১ নম্বর রুটে তিনটি কোম্পানি যুক্ত হয়েছে। আরও একটি কোম্পানি আসবে হয়তো। বিষয়টা হচ্ছে নন-এসি বন্ধ হচ্ছে না এবং নন-এসি বাসের যাত্রী এসি বাসে উঠবে, এটাও প্রত্যাশা করি না।’

অন্য রুট নিয়ে ডিটিসিএ’র উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরও দুই-তিনটা রুট চালুর চেষ্টা রয়েছে। সেগুলোতেও এসি বাস চালু করবো। নন-এসি বাসগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে না। তবে চেষ্টা করবো কয়েক জায়গায় নন-এসিগুলোকে এক কোম্পানির আওতায় আনার।

ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নীলিমা আখতার বলেন, অন্য বাসগুলো যেন না চলে এর জন্য আমরা বলেছি। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এগুলো তো একদিনে দূর হবে না। এটা একটা সংস্কৃতিতে দাঁড়িয়েছে। বাস কোম্পানিগুলো এক হতে চাচ্ছে না।

MMS
আরও পড়ুন