ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

শিশুশ্রম নিরসনের পরিকল্পনা

শোভন কর্মপরিবেশের মডেল বাংলাদেশ

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৯ এএম

চলতি (২০২৫) বছরের মধ্যে সব সেক্টর থেকে শিশুশ্রম নিরসনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ করছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ত্রুটিপূর্ণ পোশাক কারখানার সংস্কার সমন্বয়ের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অধীন প্রকল্পের মাধ্যমে রেডিয়েশন কোর্ডিনেশন সেল (আরসিসি) গঠন করা হয়েছে। 

আরসিসি’র মাধ্যমে কারখানা সংস্কার কাজ তদারকির জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে স্ট্রাকচারাল, ইলেকট্রিক্যাল এবং ফায়ার সেইফটি বিষয়ক প্রশিক্ষিত জনবলের সমন্বয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেইফটি ইউনিট (আইএসইউ) প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

বিশেষ করে জাতীয় উদ্যোগের আওতায় অ্যাসেসমেন্টকৃত ১ হাজার ৫৪৯ টি কারখানার মধ্যে ৬৬৬টি চালু কারখারনার স্ট্রাকচারাল, ইলেকট্রিক্যাল এবং ফায়ার সেইফটি সংক্রান্ত সংস্থার কাজ কলকারখান ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর তদারকি করছে বলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়া রেডিমেড গার্মেন্টস, প্লাস্টিক ও কেমিক্যাল কারখানার কাঠামো, অগ্নি ও বিদ্যুৎ ঝুঁকি বিষয়ক প্রকল্পের আওতায় নতুনভাবে গড়ে উঠা ৬৫৬টি রেডিমেড গার্মেন্টস, ২৯৮টি প্লাটিক ও ১৪৭টি কেমিক্যাল কারখানাসহ মোট ১ হাজার ১০১টি কারখানা স্ট্রাকচারাল ইলেকট্রিক্যাল, ফায়ার এবং কেমিক্যাল ঝুঁকি নিরুপণ করাও হয়েছে। যা কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার মাত্রা কমিয়ে আনার পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করবে বলে শ্রম ও কর্মসংস্থান বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

তারা বলেছেন, ঝুঁকিপূর্ণ খাতসহ সব ধরনের শ্রম থেকে শিশুদের মুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ ও বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫-এর বিধান অনুযায়ী কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে পরিদর্শন, উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান রয়েছে। দেশে শিশুশ্রম নিরসনে ১ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। 

এছাড়াও এ অধিদপ্তরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি এবং জাতীয় শুদ্ধাচার কর্মপরিকল্পনায় শিশুশ্রম নিরসনে সুরিদিষ্ট কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলতি ২০২৫ সালের মধ্যে সব সেক্টর থেকে শিশুশ্রম নিরসনের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সেইফটি কমিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গত মার্চ পর্যন্ত ডাইফ কর্তৃক বিভিন্ন কারখানায় মোট ৫ হাজার ৭৮৯টি সেইফটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রম আইন এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নিয়মিত উদ্বুদ্ধকরণ সভা আয়োজন করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিশেষ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর কারিগরি সহায়তায় অত্র অধিদপ্তর কর্তৃক পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনা সবের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামীর বাংলাদেশ হবে সারা বিশ্বে শোভন কর্মপরিবেশের মডেল। সে কর্মক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রম আইন এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালার যথাযথ অনুশীলন, উৎপাদন বৃদ্ধি, পেশাগত স্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র অর্জনের সবকে একসাথে এগিয়ে যেতে হবে বলে অভিজ্ঞমহলের অভিমত। 

এ বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, উন্নয়নের মূল উপাদন হচ্ছে উৎপাদন। উৎপাদনের প্রধান অনুসঙ্গই হচ্ছে শ্রমিক। উৎপাদন ব্যবস্থা শ্রমিকের পেশাগত ও নিরাপত্তার ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল।  তিনি জানান, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ২০০৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ( আইএলও) প্রতি বছর ২৮ এপ্রিল জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস পালন করে আসছে। জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা, ২০১৩’ অনুসারে বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের সাথে প্রকাশ ও কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ পরিবেশ সম্পর্কে সমন্বিত সচেতনার সৃষ্টিরজন্য গত ২০১৬ সাল থেকে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস পালন করছে বলে উপদেষ্টা জানান।

এ বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, কারখানার শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শ্রমিক, মালিক, সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ সব অংশীজনদের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ (সংশোধিত-২০১৮) ও বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী মালিকদের জন্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থাসমূহ নিশ্চিত করে শ্রমবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হচ্ছে বলেও সচিব জানান।

Fj/NC
আরও পড়ুন