প্রথম ইনিংস শেষে লিড হাতে থাকার পরও ইডেন গার্ডেন্সে নিজেদেরই তৈরি করা কাদায় পা পিছলে পড়ল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ১২৪ রানের লক্ষ্যও অতিক্রম করতে পারল না শুবমান গিলহীন দলটি। অচেনা, অনিয়মিত বাউন্সে ভরা ইডেনের উইকেট ভারতীয় ব্যাটারদের কাছে হয়ে উঠল বিভীষিকার নাম; তার ফলস্বরূপ আড়াই দিনেই শেষ হয়ে গেল টেস্ট, আর প্রোটিয়ারা তুলে নিল দারুণ এক ৩০ রানের জয়।
ম্যাচের সূচনালগ্ন থেকেই পিচ নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। প্রথম দিনের খেলায়ই ব্যাটারদের জন্য ইডেনের দুই প্রান্ত হয়ে ওঠে ‘বধ্যভূমি’। ভারতে সাধারণত টেস্টে দেখা যায় ব্যাটিং উপযোগী উইকেট, কিন্তু এবারের পিচ ভূমিরূপ বদলে ফেলল পুরো ম্যাচের গল্প। ভারত ভেবেছিল, নিজেদের স্পিন ও পেস আক্রমণের সুবিধার জন্য এমন উইকেট আদর্শ হবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনাই উল্টো বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে তাদের দিকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংসে লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে ওঠেন টেম্বা বাভুমা। আগের দিন ২৯ রান নিয়ে অপরাজিত থাকা অধিনায়ক ধৈর্য, কৌশল ও লড়াইয়ের এক অনন্য মিশ্রণ দেখিয়ে খেলেন ৫৫ রানের অপরাজিত ইনিংস। ১৩৬ বলের দীর্ঘ এই ব্যাটিং তাণ্ডবে তিনি স্পষ্ট প্রমাণ করেন-পিচ যতই কঠিন হোক, মনোযোগ না হারালে লড়াই সম্ভব। তাঁর সঙ্গে করবিন বোশ খেলেন গুরুত্বপূর্ণ ২৫ রান; দুজনে মিলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এনে দেন ১৫৩ রানের সংগ্রহ, আর লিড বাড়িয়ে ভারতের সামনে ফেলে দেন জটিল এক লক্ষ্য।
সেই লক্ষ্য অর্থাৎ ১২৪ রানের পথই হয়ে দাঁড়ায় ভারতের জন্য পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ। ইনিংসের প্রথম বল থেকেই বিপদে পড়ে দলটি। মার্কো ইয়ানসেনের দ্রুত গতির বল সামলাতে না পেরে শূন্য রানে ফেরেন যশস্বী জয়সওয়াল। তিন ওভার পর ফেরেন আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুল, তার শিকারও ইয়ানসেন। ১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ভারত পড়ে ভয়ানক চাপে।
ধ্রুব জুরেল ও ওয়াশিংটন সুন্দর কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন ইনিংস দাঁড় করানোর। কিন্তু জুরেল ১৩ রান করেই সাইমন হারমারের অতিপরিণত অফস্পিনের ফাঁদে পড়ে যান। এরপরই ভারতীয় ইনিংস ভাঙতে শুরু করে দ্রুতগতিতে। ঋষভ পান্ত মাত্র ২ রান করে ক্যাচ তুলে দেন হারমারের হাতেই। জাদেজা ১৮ এবং অক্ষর প্যাটেল ২৬ রান করে কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও ম্যাচের গতিপথ বদলাতে পারেননি কেউই। ওয়াশিংটন সুন্দর সর্বোচ্চ ৩১ রান করে লড়াই চালিয়ে যান, কিন্তু অন্য প্রান্ত থেকে পর্যাপ্ত সঙ্গ না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং।
ইডেনের স্পিন-সহায়ক উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার মূল অস্ত্র হয়ে ওঠেন সাইমন হারমার। দুটি ইনিংস মিলিয়ে দুর্দান্ত নিয়ন্ত্রণ আর ধারাবাহিকতার পরিচয় দিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসেই তিনি তুলে নেন ৪টি উইকেট। ইয়ানসেন ও কেশব মহারাজ যোগ করেন আরও ২টি করে উইকেট। বোলারদের শৃঙ্খলিত পরিকল্পনা ও পিচের সহায়তায় ভারতীয়দের হতাশ করে দেন একের পর এক।
