যে ম্যাচটিকে অনেকে ভেবেছিলেন টানটান উত্তেজনার লড়াই হবে, সেটি শেষ পর্যন্ত পরিণত হলো জার্মানির একতরফা গোল উৎসবে। লেপজিগে স্লোভাকিয়ার স্বপ্ন ভেঙে ছয় গোলের দাপুটে জয় তুলে নিয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করল হুলিয়ান নাগেলসম্যানের দল। শুরুতে প্রতিপক্ষের ব্যাকলাইন ভাঙতে ধৈর্য রাখলেও একবার গোলের দেখা পাওয়ার পর আর পেছনে ফেরেনি ম্যানশাফট।
স্লোভাকিয়া ম্যাচের পরিকল্পনা করেছিল গোছানো ডিফেন্স, ধীরে ধীরে ম্যাচে ঢোকা আর সুযোগ পেলে পাল্টা আঘাত। কিন্তু সেই পরিকল্পনা টিকল মাত্র ১৫ মিনিট। কর্নার লাইনের কাছে প্রায় বের যাওয়া বলটি একদম শেষ মুহূর্তে ধরে ক্রস বাড়ান জশুয়া কিমিখ। তার সেই ক্রস বাতাসে ভেসে সোজা মাথায় নেন নিক ওল্টেমাডে—আর সেখানেই প্রথম ভুলটা করে বসে স্লোভাক ডিফেন্স। জার্মানি ১-০।
গোল খাওয়ার পরই স্লোভাকিয়ার ম্যাচে ফেরার সেরা সুযোগ। মাত্র এক মিনিট পরই স্ট্রেলেককে ঠেকাতে পা বাড়িয়ে দুর্দান্ত সেভ করেন জার্মান গোলরক্ষক বাউমান। কর্নার থেকে দুরিসের শট চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। ওই দুটি মুহূর্তই ছিল স্লোভাকিয়ার পুরো ম্যাচের একমাত্র হুমকি।
এরপর মাঠ পুরোপুরি দখলে নেয় জার্মানি। লিওন গোরর্টজকার নিখুঁত থ্রু পেয়ে সার্জে জিনাব্রি জোড়া দেন দ্বিতীয় গোলটি। এরপর শুরু হয় ফ্লোরিয়ান ভির্টজের শো। লিঙ্ক-আপ প্লেতে যেন পুরো ম্যাচের ছন্দ তিনিই তৈরি করছিলেন। প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের সবচেয়ে দামি ট্রান্সফার এই ভির্টজ পরপর দুটি দুর্দান্ত অ্যাসিস্ট সাজান লেরয় সানে’র জন্য—যিনি বিরতিতেই স্কোরলাইন দাঁড় করান ৪-০।
দ্বিতীয়ার্ধ ছিল কেবল আনুষ্ঠানিকতা। কিন্তু সেখানেও ছন্দ থামেনি। বদলি হিসেবে নামার দুই মিনিটের মাথায় নিজ মাঠের ক্লাব আরবি লেপজিগের খেলোয়াড় রিডলে বাকু বাড়িয়ে দেন পঞ্চম গোল।
কিন্তু রাতের সবচেয়ে আবেগঘন গল্পটা লিখলেন আরেক লেপজিগ তারকা—১৯ বছর বয়সী আসান ওয়েদ্রাওগো। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তার আন্তর্জাতিক অভিষেক, সেটিও ঘরের মাঠে। লেরয় সানে’র ব্যাকহিল পাস থেকে ঠান্ডা মাথায় ছোড়া শটে ছয় নম্বর গোলটি করে পুরো স্টেডিয়ামকে উল্লাসে ভাসান তিনি। এমন স্মরণীয় অভিষেক আর ক’জনের ভাগ্যে জোটে?
এই জয়ে সোমবারই নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করা ৩৪তম দল হয়ে গেল জার্মানি। এখনো বাকি রয়েছে আরও ১৪ দলের নাম।
ম্যানশাফটের জন্য লেপজিগের এই রাত শুধু বড় জয় নয়—নাগেলসম্যানের গড়া নতুন দলের আত্মবিশ্বাস, ছন্দ আর ভবিষ্যতের ইঙ্গিতও রেখে গেল। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ঠিক পথেই আছে, সেটি আবারও প্রমাণ করল চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
