ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

বিশ্বের সেরা স্থানের স্বীকৃতি পেল আশুলিয়ার জেবুন নেসা মসজিদ

কেবল নামাজের জন্যই নয়, দর্শনার্থীরা যেকোনো সময় এখানে আসতে পারেন। মসজিদে নারী-পুরুষ উভয়েরই প্রবেশাধিকার আছে। সম্প্রতি মার্কিন স্থপতির একটি দল মসজিদটি দেখার জন্য এসেছিলেন বাংলাদেশে।

আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:৪১ পিএম

প্রতিবছর বিশ্বের ১০০টি স্থাপনাকে ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট প্লেসেস’ হিসেবে ঘোষণা করে টাইম ম্যাগাজিন। এবার সে তালিকায় প্রথমবারের মতো স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের কোনো স্থাপনা। গত ১৩ মার্চ প্রকাশিত এ তালিকায় স্থান করে নেয়ে সাভারের আশুলিয়ার জামগড়ার দরগার পাড় এলাকার জেবুন নেসা মসজিদ।

মসজিদটির স্থপতি সায়কা ইকবাল মেঘনা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং স্টুডিও মরফোজেনেসিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক। তিনি বলেন, মসজিদটি গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য বানানো। তাই এই স্থাপনা টাইম ম্যাগাজিনের ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট প্লেসেস অব ২০২৫’ তালিকায় স্থান করে নেওয়ার গৌরব আমাদের সবার।

স্থাপত্যের উদ্ভাবন ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তির মেলবন্ধনের কথা মাথায় রেখে মসজিদটির নকশা করেছেন সায়কা। ফলে এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। বাংলাদেশের গ্রামীণ উঠান, বাঁশঝাড়, পারস্যের বাড়ির বাগান, লুই আই কানের সংসদ ভবনের প্রেয়ার হল, ইস্তাম্বুলের আয়া সোফিয়া মসজিদ—এসবই ছিল সায়কার অনুপ্রেরণা।

এসি তো দূরের কথা, একটা ফ্যানও নেই এই মসজিদে। সায়কা এমনভাবে নকশা করেছেন যে প্রাকৃতিকভাবেই মসজিদের ভেতরটা থাকে ঠান্ডা। চতুর্ভুজাকৃতির মসজিদটিতে নেই কোনো চিরাচরিত স্তম্ভ। মাঝখানের গোল গম্বুজটিই মসজিদের মূল ভিত।

প্রাকৃতিকভাবে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য মসজিদের কংক্রিটের দেয়ালে ছোট ছোট আয়তাকার শূন্যস্থান বা ফুটো রেখেছেন সায়কা। মূল স্থাপনার চারপাশের চারটা কোণকে বলা যায় ‘লাইট কোর্ট’। অনেকটা বাংলাদেশের সংসদ ভবনের প্রেয়ার হলের মতো। সেদিক দিয়েও আছে আলো-বাতাসের অবাধ যাতায়াত।

মসজিদের পশ্চিমে লেক। এই জলাশয়ের কারণেই বাতাস প্রাকৃতিকভাবে শীতল হয়ে মসজিদের দেয়ালের আয়তাকার শূন্যস্থান বা ফুটো দিয়ে প্রবেশ করে মসজিদের ভেতরে। সীমানাজুড়ে কাচের পাঁচিল। ফলে প্রাকৃতিক আলো বাধা পায় না। আর এই কাচের পাঁচিলের নকশাও এমন, যাতে ভেতরে বাতাস প্রবেশ করতে পারে অনায়াসে।

মসজিদটির এক পাশে ছাতিমগাছ, অন্য পাশে বাঁশঝাড়। আছে আরও নানান প্রজাতির গাছ। গাছের শীতল ছায়া নিমেষে মুছে দেয় ক্লান্তি। পানি, গাছ, পাখির ডাক, বুনো ফুল, লতাপাতা, আলো–বাতাসের সম্মিলনে মসজিদটির আবহ এমন, যাতে শিল্প এলাকার যান্ত্রিক ও কলুষিত পরিবেশে নেমে এসেছে প্রশান্তি। মসজিদ তৈরির সব উপকরণ ছিল দেশীয়, কারিগরেরাও এ দেশের।

মসজিদটি মূলত আইডিএস গ্রুপের তৈরি পোশাক কারখানার প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কর্মীর নামাজের জন্য বানানো। তবে অন্যরাও সেখানে নামাজ পড়তে পারেন। কেবল নামাজের জন্যই নয়, দর্শনার্থীরা নামাজের সময়ের বাইরেও শান্তির খোঁজে যেকোনো সময় আসতে পারেন এখানে। সম্প্রতি ক’জন মার্কিন স্থপতির একটি দল এই মসজিদ দেখার জন্যই এসেছিলেন বাংলাদেশে।

আইডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁর প্রয়াত মা জেবুন নেসার নামে বানিয়েছেন এই মসজিদ। মসজিদে নারী-পুরুষ উভয়েরই প্রবেশাধিকার আছে। নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য আছে আলাদা স্থান। সায়কা বলেন, মসজিদটিতে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই যাতে প্রার্থনা ও সামাজিকতার স্থান হয়ে ওঠে, সে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখিনি।

স্থপতি সায়কা ইকবাল মেঘনা

২০০৮ সালে বুয়েট থেকে স্নাতক করেন সায়কা। ২০১১ সালে স্নাতকোত্তর করেন স্পেনের ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড আর্কিটেকচার অব কাতালোনিয়া থেকে। টাইম ম্যাগাজিনের সাম্প্রতিক এই স্বীকৃতির আগে ভারতের জেকে সিমেন্ট লিমিটেডের ৩৪তম পুরস্কার বিতরণীতে পেয়েছেন ‘আর্কিটেক্ট অব দ্য ইয়ার’ সম্মাননা। অনলাইন আর্কিটেকচার প্ল্যাটফর্ম ডিজিন থেকে ‘টপ ফাইভ সিভিক প্রজেক্টস’ ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আর্ক ডেইলির ‘টপ ফাইভ রিলিজিয়াস প্রজেক্ট’–এও নির্বাচিত হয়েছে জেবুন নেসা মসজিদ।

JA
আরও পড়ুন