হুমায়ুন কবির বাবু : বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমলেও দেশে বাড়ছেই। চলতি মাসের শুরুর দিকে সরকার চিনি আমদানিতে শুল্ক প্রায় অর্ধেক কমানোর ঘোষণা দিলেও এর প্রভাব পড়েনি বাজারে। শুল্ক কমানোর আগে যে দাম ছিল তার চেয়ে বর্তমানে বেড়েছে। অর্থাৎ শুল্ক কমানোর পর চিনির দাম কেজিতে ১৫০ টাকার দিকে যাচ্ছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতে বাজারে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি হচ্ছে। কেন এই খাদ্যপণ্যটির দাম বেড়েই চলেছে তার সঠিক জবাব নেই কারো কাছেই।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সঙ্কট ও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি সরবরাহ সঙ্কটে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহখানেক আগে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। বর্তমানে সেই চিনি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে করে খাদ্য পণ্যটি বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা বা ৭.১৪ শতাংশ।
এদিকে চলতি মাসের ২ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চিনির দাম কমাতে আমদানি শুল্ক অর্ধেকে নামিয়েছে। টনপ্রতি অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে দেড় হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনিতে শুল্কে ৩ হাজার টাকা। তবে এর আগে টনপ্রতি অপরিশোধিত চিনি আমদানির শুল্ক ছিল ৩ হাজার টাকা। আর পরিশোধিত চিনির শুল্ক ছিল ৬ হাজার টাকা। চিনির আমদানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে।
আগামী বছর যেহেতু মার্চে পবিত্র মাহে রমজান। সে জন্য ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমদানিকারকরা এই শুল্কছাড়ের সুবিধা পাবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। আমদানি শুল্কের পাশাপাশি চিনিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক রয়েছে ৩০ শতাংশ। এছাড়া আমদানিকারকদের ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। সেই সঙ্গে অগ্রিম আয়কর দিতে হয় ২ শতাংশ।
বিশ্ববাজারে গত ছয় মাস চিনির দাম নিম্নমুখী : আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান বিজনেস ইনসাইডার ও ট্রেডিং ইকোনমিক্সের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এপ্রিলে বিশ্ববাজারে প্রতিটন চিনি ৬৪৮ ডলারে উঠেছিল। এরপর মে মাসের মাঝামাঝি এসে চিনির দাম কিছুটা কমে ৬২৪ ডলারে নামে। জুনে এসে হয়েছে ৬২০ ডলার। জুন থেকে জুলাইয়ের বর্তমান সময় পর্যন্ত টানা কমে এখন প্রতিটন চিনি ৫৫৯ ডলারে নেমেছে।
এদিকে চলতি বছরে গত ২২ জুন থেকে চিনির দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা করে বাড়িয়েছিলেন মিল মালিকরা। ওই সময় প্রতিকেজি খোলা চিনি ১২০ টাকা এবং প্যাকেট চিনি ১২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
চিনি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি ও ডলারের উচ্চ মূল্য চিনির বাজারে প্রভাব ফেলছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডলারের বিপরীতে টাকার প্রায় ৩০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। এতে করে আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে।
তিনি আরো বলেন, গত মে মাস থেকে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু ব্রাজিল ছাড়া কেউ চিনি রপ্তানি করছে না। ভারত থেকে চিনি রপ্তানি বন্ধ। ফলে ব্রাজিলের বাজারে অনেক দেশ ভিড় করছে। এখন সেখান থেকে নতুন করে কোনো চিনি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে মিরপুর-১ নম্বর বাজারে পাইকারি বিক্রেতা আলম শেখ জানান, কয়েকদিন ধরে ৫০ কেজির চিনির বস্তা ৬ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে যা ছিল ৬ হাজার ৪০০ টাকা। অপরদিকে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) তথ্য বলছে, দেশে প্রতিবছর ২২ থেকে ২৪ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি ও ৫০ হাজার টন পরিশোধিত চিনি আমদানি হয়।
