ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালে শুরু হয় পেনশন স্কিম বা সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। এর আওতাভুক্ত নাগরিকরা ৬০ বছর বয়স থেকে আমৃত্যু পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। তবে শুরুর পর ৮ মাস চলে গেলেও এই পেনশন ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত পেনশন স্কিমে যোগ দিয়েছেন ৫৯ হাজার ৩শ ৮২ জন। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে এখনো তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা।
আগে শুধুমাত্র সরকারি চাকরিজীবীরাই পেনশন সুবিধার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কিন্তু যারা সরকারি চাকরি করেন না বা অন্য পেশায় আছেন এমন বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা দিতেই ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে চালু করা হয় এই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা। অর্থাৎ কারও বয়স ১৮ বছরের বেশি হলেই তিনি তার ভবিষ্যতের জন্য এই পেনশন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী একজন ৫০ বছর পর্যন্ত এই পেনশনের স্কিম অনুযায়ী চাঁদা দিয়ে আজীবন ভোগ করতে পারবেন এর সুবিধা। এমনকি ৫০ বছর বয়সেও যেকোনো বাংলাদেশি সর্বনিম্ন দশ বছর এই স্কিমে টাকা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
সে অনুযায়ী বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ী সকলেই ৬০ বছরের পর থেকেই এই পেনশন ভোগ করতে পারবেন। শুধু টাকা জমাদানকারীই না, তার অবর্তমানে তার পরিবারের সদস্যরাও এর সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এরপরও দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এই সার্বজনীন পেনশন নিয়ে নেই কোনো কৌতূহল। বেশির ভাগ মানুষই এই পেনশন ব্যবস্থা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না। এই স্কিমের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন- সঠিকভাবে টাকা জমা দিলেও আদৌও এর টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ।
একধিক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, পেনশন ব্যবস্থা যখন চালু হয় তখন বেশ ফলাও করে প্রচার করা হয়। মনে হয়েছিল এই বুঝি কি না কি হয়ে যায়। কিন্তু ওই চালু পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এরপর আর এ বিষয়ে কিছু নজরে আসেনি। শুধুমাত্র খাতা কলমেই এর কার্যক্রম চলছে। প্রথমে মনে করছিলাম- সবাব যুক্ত হলে আমিও এই স্কিম গ্রহণ করবো। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার বন্ধু-বান্ধব দূরের কথা কোনো আত্মীয়স্বজনকেও এই স্কিম গ্রহণ করতে শুনিনি। তাই আমিও আর এ বিষয়ে আগ্রহ দেখাইনি।
এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, চলমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এখন এমনিতেই মানুষের অবস্থা খারাপ। তাই তাদের যেটুকু সঞ্চয় আছে তা হাতছাড়া করতে চান না।’ তিনি বলেন, দেশে এত ব্যাংক রয়েছে কিন্তু মানুষ শুধু সেখানেই টাকা রাখেন যেখানে তার বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। আর এই বিশ্বাস বা আস্থা আজ পর্যন্ত এই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা অর্জন করতে পারেনি। সাদা চোখে আজ পর্যন্ত তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম আমি চোখে দেখিনি। তাহলে এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে কী করে।
এ ব্যাপারে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের (এনপিএ) সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, এখন পর্যন্ত এই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা এই চারটি স্কিমের মাধ্যমে সরকারি তহবিলে গত আট মাসে মোট জমা হয়েছে ৪৪ কোটি ৭৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা। মাঝখানে কিছুদিন ধীরগতি থাকলেও এখন মানুষের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আশা করছি, এ ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই স্কিম গ্রাহকের সংখ্যা লাখের ঘরে চলে যাবে।
