ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

কেমন বাজেট চাই

করহার কমিয়ে প্রত্যাশা পূরণের বাজেট চান ব্যবসায়ীরা

আপডেট : ০৫ জুন ২০২৪, ১২:৪২ পিএম

উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে নাজুক পরিস্থিতিতে আছেন দেশের সাধারণ মানুষ। ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও, যা সরাসরি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতিও দেখা দিয়েছে বর্তমান সরকারের গত অর্থবছরে। তারল্য সংকটে ধুঁকছে দেশের অধিকাংশ ব্যাংক। বলা চলে দেশে অনেক ব্যাংককে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঠিক এমন সময়ে আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল (৬ জুন) ঘোষণা হতে যাচ্ছে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মতো এবারও ঘাটতি বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী। ফলে বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে রাজস্ব আদায়ের হার বাড়াতে হবে সরকারকে। এতে করে চাপে পড়তে পারে দেশের ব্যবসায়ীরা। এমন আশঙ্কা থেকে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সংগঠন ব্যবসাবান্ধব বাজেটের জন্য নানা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। 

ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, বাজেটের আকার বাড়ানো থেকে বেরিয়ে ব্যয় সংকোচন নীতির দিকে সরকারের দৃষ্টি রাখা উচিত। শুধু তাই নয় বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে হলে ব্যবসায়ীদের নীতি সহায়তা বাড়াতে হবে। বিশেষ করে আর্থিক খাতের অবস্থা খুবই নাজুক। তারল্য সংকটের কারণে সুদের হার বাড়ছে। বাড়ছে গ্যাস, বিদ্যুৎ অতিরিক্ত বিলও। সব মিলিয়ে উৎপাদন সেক্টর অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। এই অবস্থায় নতুন করে করের বোঝা চাপিয়ে দিলে টিকে থাকা কষ্ট হয়ে যাবে। সেই সাথে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে না। সৃষ্টি হবে না কর্মসংস্থান, বাড়বে বেকারত্ব।  

বাজেট ভাবনা নিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। তাই ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা পূরণের বাজেট হবে আশা করি। বিশেষ করে পোশাকখাত দেশের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি। তাই আমাদের প্রত্যাশাও একটু বেশি। আমাদের সমস্যাগুলো বিভিন্ন সেমিনারে তুলে ধরেছি। আমরা কী চাই এবারের বাজেটে তা আমাদের প্রস্তবনায় স্পষ্ট করে বলা আছে।  

বিজিএইএ'র দাবিগুলোর মধ্যে ২০২৯ সাল পর্যন্ত নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখাসহ একগুচ্ছ দাবি তুলে ধরা হয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাকশিল্প থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য নিয়েছে সংগঠনটি। সভাপতি বলেন, এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারের নীতি-সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজন। এ জন্য আগামী বাজেটে রপ্তানির বিপরীতে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতো শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ, নগদ সহায়তার ওপর আয়কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছি। এছাড়াও বিভিন্ন পণ্য ভ্যাটমুক্ত রাখা বিশেষ করে অগ্নি ও নিরাপত্তা আমদানির ওপর কর মওকুফ, বিকল বা নষ্ট পণ্যগুলো আমদানিতে শুল্ক মওকুফ সহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেছি। আশা করি সরকার আমাদের প্রস্তাবনা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।

বাজেট নিয়ে নিট পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন-বিকেএমইএ এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশীয় শিল্প আজ হুমকির মধ্যে রয়েছে। ডলারের অভাবে নিয়মিত এলসি খুলতে পারছে না। আগে নির্ধারিত ছিলো সুদের হার । এখন তাও উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদুৎ বিল বাড়ছে, গ্যাস সমস্যার শতভাগ উৎপাদন করতে পারছে না। তাই ব্যবসাবন্ধব বাজেট প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। 

নতুন করে কোনো কিছু চাপিয়ে দিলে শিল্পখাত টিকে থাকতে কষ্ট হবে বলেও তিনি মনে করেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অস্তিত্ব হারাবে। 

ঢাকা চেম্বার আব কমার্স ইন্ডাস্টির সিনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট মালেক তালহা বারী দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, আমরা ঢাকা চেম্বার থেকে ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশাগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরেছি। আশা করি সরকার আমাদের প্রত্যাশার বাজেট দিবে। ব্যবসায়ীরা টিকে থাকলে দেশ এগিয়ে যাবে, দেশে কর্মসংস্থান হবে। নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে। আমাদের প্রস্তাবনাগুলোই আমদের প্রত্যাশা। 

ব্যবাসয়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবারের বাজেটে কৃষিজাত ভোগ্যপণ্য থেকে উৎসে কর না কাটা, অগ্রিম আয়কর (এআইটি) না কাটা দেশীয় শিল্প বিকাশে আমদানিতে শুল্ক কমানোসহ ৩৮১ টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে। এর মধ্যে রাজস্ব আদায়ে অটোমেশন চালু করা। বিশেষ করে এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। 

বরাবরের মতো এবারও আবাসন খাতে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চায় আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল অ্যাস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ -রিহ্যাব। পাশাপাশি আবাসন খাতের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে এমন আইনের সংস্কার চায় তারা।

বাজেট ভাবনা,  প্রত্যশা এবং বাস্তবতা নিয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, আমরা চাই দেশের টাকা দেশে থাকুক। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখুক। প্রতিবছর যে পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, তার অন্যতম কারণ দেশে বিনিয়োগের সুযোগ না পাওয়ায় কারণ পাচার হওয়া টাকার অধিকাংশই কালো টাকা। অর্থ পাচার কমাতে ও সরকারের রাজস্ব বাড়াতে কোনো ধরনের প্রশ্ন না করা সংক্রান্ত বিনিয়োগের আগের যে সুবিধা ছিল তা আবারও ফিরিয়ে আনা।

HK/AST
আরও পড়ুন