গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও বন্যায় সরবরাহ কমের অজুহাতে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ী আড়ৎ ঘুরে এ চিত্র পাওয়া যায়। বিক্রেতাদের দাবি, এমনিতেই বর্ষা মৌসুমে সবজির দাম একটু বেশি থাকে। তা ছাড়া গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে। যার কারণে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কম। কৃষকের কাছ থেকে বেশি দামে কিনে আনায় ৫-১০ টাকা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছেন তারা।
কাওরান বাজারের পাইকারি সবজি বিক্রেতা এনামুল হক জানান, আমরা বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। ঈদের পর বাজারে সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় দামও কম ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাজারে কৃষকের সবজি সরবরাহ কমের কারণে তারা দাম বাড়িয়েছে। সবাই ব্যবসায়ীদের পণ্যের দাম বাড়ার জন্য দায়ী করে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তো পণ্য উৎপাদন করে না। কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনে বাজারে এনে বিক্রি করে। সেক্ষেত্রে কম দামে কিনে আনতে পারলে কমদামে বিক্রি করতে হয়। আর বেশি দামে কিনলে তো বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। বাজার সম্পূর্ণ সরবরাহের উপর নির্ভরশীল বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে ক্রেতাদের দাবি বাজার পণ্যে কোন ঘাটতি নেই। কোন ইস্যু পেলেই বিক্রেতারা এর সুযোগ নেয়। ইচ্ছে মতো দাম বাড়িয়ে দেন। কারণ তাদের দাম বাড়ালে কোন জবাবদিহিতা করতে হয় না।
কাওরান বাজারে, প্রতি কেজি পেঁপের পাইকারি মূল্য ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ঠিক একটু দূরেই খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
পাইকারি বাজারে ঘুরে সবজির মূল্য দেখা গেছে প্রতি পিস মিষ্টিকুমড়া ৪০, কাঁচামরিচ ২২০, কচু ৮০, কাঁকরোল ৬০, করলা ১০০, ধুন্দল ৬০, বরবটি ৮০, ঢেঁড়স ৪০, বেগুন ১০০, পটোল ৫০, লতি ৮০, কাঁচকলা ৫০ ও ঝিঙা প্রতি কেজি ৬০ ও লাউ প্রতি পিস ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঠিক ত্রিশ থেকে চল্লিশ গজ দূরেই প্রতিটি সবজির খুচরা পর্যায়ে দামের পার্থক্য ১০-১৫ টাকা।
তবে গত কয়েকদিনের টানা অভিযানের পর ও ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। পাইকারি বাজারে ডিমের ডজন ১৫০ টাকা বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে, মুদি দোকানে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকায়।
এ সময় ডিম কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মোশাররফ হোসেন জানান, প্রতি শুক্রবার মুদি দোকানের পণ্য কিনেন তিনি। গত কয়েক মাস ধরে ডিমের বাজারে যে অস্থিরতা বিরাজ করতে তাতে হতাশ তিনি। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ডিম নেই এমন পরিবার খুব কম পাওয়া যাবে। অথচ এই একটি পণ্যের দাম সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকার থেকে কি সিন্ডিকেট বেশি ক্ষমতাধর। নাকি মিলে মিশে গরিবের অর্থ লুটে নিচ্ছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে তেজগাঁওয়ের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত বলে প্রকাশ করছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাহলে তারা তো বাজার অস্থিতিশীল করবেই। কারণ তারা জানে তাদের কিছু হবে না।দেশের প্রতিটি সেক্টর এভাবেই চলছে। অনিয়মই এখন বাংলাদেশের নিয়মে পরিণত হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে সব কিছু বৃদ্ধিও মাঝে একমাত্র স্বস্তির খবর মাংসের বাজারে। এ দিন গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজিতে। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। এদিকে প্রতি কেজি বয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা। দেশি মুরগি ৭০০-৭৩০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায় এবং প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়।
মাছের বাজারেও স্থিতিশীল রয়েছে। শুক্রবার (৫ জুলাই) কারওয়ান বাজারে চাষের বড় চিংড়ি মাছ বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৬০০-৬৫০ টাকায়, যেখানে গত সপ্তাহেও ছিল ৭০০ টাকা পর্যন্ত। শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকা। এছাড়া পাঙাশ ১৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০, কার্প ২৬০, রুই ৩৫০, মলা ২৮০ ও কই মাছ ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
