পেঁয়াজের মৌসুম শেষের পথে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি নেই। তাদের অভিযোগ, টানা বৃষ্টিতে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। এরই সুযোগে আমদানিকারক ও আড়ৎদার পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বলছেন, গত ৩১ জুলাই রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৫৫ টাকা। পর দিন কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫ টাকা। গত শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকায়। আর গতকাল সোমবার বিক্রি ৯০ টাকায় প্রতি কেজি। ক্রেতাদের অভিযোগ, পেঁয়াজের বাজারে সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা ইচ্ছামতো পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে কোনো সংকট না থাকলেও তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বনশ্রী ও মেরাদীয়া বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগেও ৬৫ টাকা ছিল। এই হিসাবে কেজি প্রতি দাম বেড়েছে ২০ টাকা।
মালিবাগ, রামপুরা বাজারে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল কাল প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৬০-৬৫ টাকা।
রামপুরা বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা ক্রেতা রাবেয়া খানম বলেন, আমাদের আয় বাড়েনি। হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বনশ্রী কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা নাসির উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘সব সমস্যা আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতার। আমাদের প্রতিনিয়ত আয় বাড়ে না, কিন্তু বাজারে পণ্যমূল্য বাড়তেই থাকে। সাধারণ মানুষের জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ।’

বনশ্রীর খুচরা ব্যবসায়ী রাব্বি জানান, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের প্রায়ই বাগবিতণ্ডা হয়।
কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আসলাম বলেন, পেঁয়াজের দাম বাড়লে আমাদের কোনো লাভ নেই বরং ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেরাদীয়ার এক আড়ৎদার বলেন, ‘আমরা একজিতে ৫-১০ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করি। দাম বাড়ানোর জন্য আমরা দায়ী নই। দাম বাড়ান আমদানিকারক ও মোকামের বড় আড়ৎদাররা।’

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়ৎদাররা জানান, বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এখন পুরোপুরি দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল বাজার। কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও পাবনাসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ আসছে। সম্প্রতি ভারী বর্ষণের কারণে মোকামগুলোয় পর্যাপ্ত পেঁয়াজ সরবরাহ হচ্ছে না। ফলে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। এছাড়া ট্রাক ভাড়া বেড়ে যাওয়ার কারণেও দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে ফরিদপুরের বাজারে পেঁয়াজের দর বেড়েছে। মণপ্রতি বেড়েছে হাজার টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, গত সপ্তাহে পেঁয়াজের মণ ছিল ১৫০০ টাকা। আর গতকাল সোমবার বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়। সোমবার ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন বাজার ছাড়াও কানাইপুর, সালথা, বোয়ালমারী ও নগরকান্দার বাজারগুলোয় গত শনিবার খুচরা পর্যায়ে প্রকারভেদে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৭৫ টাকায়।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, জেলার চাষিরা পাট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করায় বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ কম। এতেই পণ্যটির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে আড়ৎদাররাও সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের।
ফরিদপুরের সালথার নকুলহাটি বাজারের ব্যবসায়ী সজল বেপারী বলেন, ‘বর্তমানে বিদেশি পেঁয়াজের আমদানি নেই। এছাড়া দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ তুলনামূলক কম থাকায় চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না। এ কারণে দাম বেড়েছে।’ নগরকান্দা বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘চাষিরা এখন পাট জাগ দেওয়া, ধোয়া ও আঁশ শুকানোর কাজে ব্যস্ত। যে কারণে পাইকারি বাজারগুলোয় পেঁয়াজ আসছে কম।’
ফরিদপুর সদরের কানাইপুরের পেঁয়াজ চাষি মকবুল শেখ বলেন, ‘মৌসুমের সময় পেঁয়াজের দর পাইনি। এখন বড় বড় চাষি ছাড়া কারও হাতে পেঁয়াজ তেমন নেই; যা আছে তা আড়ৎদারদের কাছে। এখন দাম বেড়েছে, লাভ করছে আড়ৎদাররা। আমাদের তো যা হওয়ার হয়ে গেছে।’

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সোহরাব হোসেন বলেন, ‘জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি ও অভিযান পরিচালনা করছি। কোনো অসাধু ব্যবসায়ী কেউ যদি অতিরিক্ত পেঁয়াজ মজুত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাহেদুজ্জামান জানান, পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা ফরিদপুর। চলতি মৌসুমে এ জেলায় আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ৬ লাখ ৭৭ হাজার টন পেঁয়াজ। মৌসুমের সময় পেঁয়াজের মণ চাষি পর্যায়ে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা ছিল।
এদিকে, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিক কারণে প্রতিবছরই দাম বাড়িয়ে দেন। এর জন্য কখনোই তাদের বিচারের আওতায় আনা হয় না। অসাধু ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারলে সাধারণ ক্রেতাকে তারা আর ঠকাতে পারতো না।
এনবিআর শিথিলতা দেখাবে ৫ শ্রেণির করদাতাকে
সবজি-পেঁয়াজ-মুরগির দাম বাড়তি