ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান ও তাদের সহযাত্রীরা গত রোববার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। আর এই দুর্ঘটনা নিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ানসহ উত্তর-পশ্চিম ইরানে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত সবাইকে আল্লাহ মাফ করে দিন।
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ ফ্রন্ট এমন সময় তাদের একজন বড় পৃষ্ঠপোষককে হারাল, যখন তাদের আরও বেশি প্রভাবশালী ও কার্যকর পৃষ্ঠপোষক দরকার। অবশ্য ইরান সরকার এই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক ঘটনার পর নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে এবং বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে যে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সামান্যতম ত্রুটি বা সমস্যা তৈরি হবে না এবং ইরান আগের মতো ক্লান্তিহীনভাবে সম্মান ও গৌরবের পথচলা অব্যাহত রাখবে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, উল্লেখ করা যায় যে, রাইসি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে মতপার্থক্যের আগুন নেভানোর জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালান এবং সকল ক্ষেত্রে আরব দেশগুলোর সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন। তিনি সৌদি আরবের সঙ্গে ঐতিহাসিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যকার দীর্ঘদিনের উত্তেজনার অবসান ঘটান। একইসঙ্গে তিনি ওমানের মধ্যস্থতায় মিশরের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার কাজে হাত দেন। গত চার দশক ধরে মিশরের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে তার অবসান ঘটিয়ে তিনি কায়রোর সঙ্গে তেহরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালান।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আয়াতুল্লাহ রাইসি আলজেরিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা শক্তিশালী করার মাধ্যমে আফ্রিকা মহাদেশের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বিস্তারের বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করেন। তিনি এমন সময় এ পদক্ষেপ নেন যখন ইসরায়েল আপোস চুক্তির ভিত্তিতে ২০২০ সালে আফ্রিকার অপর দুই দেশ মরক্কো ও সুদানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সক্ষম হয়। একই বছর অবশ্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনও ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। প্রেসিডেন্ট রাইসির সংক্ষিপ্ত শাসনামলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক শক্তিশালী করার যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তা শুধু আরব দেশগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না সেইসঙ্গে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও তুরস্কের সঙ্গেও ইরানের সম্পর্কের উন্নতি হয়।
আল জাজিরা আরও জানায়, ইরান ও পাকিস্তানের যৌথ সীমান্তে সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতার ফলে যাতে একটি সমূহ সংকট সৃষ্টির প্রচেষ্টা প্রতিহত করা যায়। সেজন্য ইরান ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জরুরি পদক্ষেপ নেয় এবং যখন ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি ভয়াবহ উত্তেজনা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তখন ইরানের মরহুম পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান ইসলামাবাদে ছুটে যান এবং উত্তেজনার আগুনে পানি ঢেলে দেন।
প্রেসিডেন্ট রাইসির শাসনামলে তুরস্কের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের উন্নতির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকার কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সকল ক্ষেত্রে তেহরান ও আঙ্কারার মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা শক্তিশালী হয় এবং দুই দেশ নিজেদের মধ্যেকার রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার যথেষ্ট চেষ্টা চালায়। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ ফ্রন্টকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে ইরান ও তুরস্ক অভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে দুই দেশের প্রেসিডেন্টরা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং হামাসের পলিটব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়াসহ অন্যান্য প্রতিরোধ নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর মাধ্যমে রাইসি ও এরদোগান ফিলিস্তিনের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ঘোষণা করেন। এ বিষয়টি ছিল মার্কিন সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ কারণ, তারা হামাসকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করতে চেয়েছিল।
প্রতিবেদনটির শেষে বলা হয়েছে, আপনার যেমন খুশি তেমন করে আপনি ইরানের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন, কিন্তু দয়া করে এই প্রশ্নের জবাব দিন যে, বর্তমান স্পর্শকাতর সময়ে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ ফ্রন্টের সমর্থনে বিশ্বের আর কোনো দেশকে কি ইরানের চেয়ে জোর গলায় কথা বলতে দেখছেন? আল্লাহ তায়ালা সত্য পথের পথিকদের মাগফেরাত দান করুন। সূত্র: মেহর নিউজ এজেন্সি।
