ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

প্লাবনের শঙ্কায় অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দিতে চায় টুভালুর এক-তৃতীয়াংশ নাগরিক

আপডেট : ২৮ জুন ২০২৫, ০৭:৪৩ এএম

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র টুভালুর। হাওয়াই ও অস্ট্রেলিয়ার মাঝামাঝি অঞ্চলে অবস্থিত টুভালুতে প্রায় ১০,০০০ মানুষের বসবাস। দেশটির কোনো ভূখণ্ডই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ছয় মিটারের বেশি উঁচু নয়। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর একটি হয়ে উঠেছে টুভালু।

সমুদ্রে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় দেশটির এক-তৃতীয়াংশের বেশি জনসংখ্যা অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করেছে। অস্ট্রেলিয়া গত ১৬ জুন ‘ফালেপিলি মোবিলিটি পাথওয়ে’ নামে মাসব্যাপী একটি ভিসা কর্মসূচি চালু করে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাস্তুচ্যুত মানুষদের সহায়তার লক্ষ্যে এ প্রকল্প চালু করা হয়েছে।

যার আওতায় আগামী ২০২৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ২৮০ জন টুভালুর নাগরিককে লটারির মাধ্যমে স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসের অনুমতি দেওয়া হবে। এই ভিসার আওতায় তারা কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা ব্যবস্থায় পূর্ণ প্রবেশাধিকার পাবেন। সিএনএন প্রাপ্ত সরকারি তথ্যমতে, ইতোমধ্যেই ভিসার জন্য ৪ হাজারের বেশি মানুষ আবেদন করেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জলবায়ু সংকটের প্রেক্ষাপটে সম্মানজনক অভিবাসনের সুযোগ তৈরি করাই এই মোবিলিটি পাথওয়ের মূল লক্ষ্য।’

টুভালুর প্রধানমন্ত্রী ফিলেটি তেও জানান, ২০৫০ সালের মধ্যে টুভালুর অর্ধেক ভূখণ্ড নিয়মিত জোয়ারে প্লাবিত হবে । আর ২১০০ সালের মধ্যে দেশের ৯০ শতাংশ অংশই সমুদ্রতলে চলে যাবে।

টুভালুতে অভ্যন্তরীণ পুনর্বাসনের কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে তেও বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি সমতল ভূমির ওপর দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের কোনো উঁচু জায়গা নেই, কোথাও সরার সুযোগ নেই।’

২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়া ও টুভালুর মধ্যে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার আওতায় অস্ট্রেলিয়া প্রতিশ্রুতি দেয় যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশটি বাসযোগ্য না হলেও টুভালুর সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অটুট থাকবে। এই চুক্তিতে বলা হয়েছে, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির প্রভাব সত্ত্বেও, টুভালুর রাষ্ট্রীয় পরিচয়, সার্বভৌমত্ব ও সংশ্লিষ্ট অধিকার ও দায়িত্বগুলো বহাল থাকবে।’

২০২২ সালে মিশরের শার্ম এল শেখে অনুষ্ঠিত কপ২৭ সম্মেলনে টুভালু ঘোষণা করে, তারা বিশ্বের প্রথম ‘ডিজিটাল রাষ্ট্র’ হতে চায়। এরপর দেশটি তাদের ভূখণ্ডকে ভার্চুয়ালভাবে সংরক্ষণের, ইতিহাস ও সংস্কৃতি ডিজিটাইজ করার এবং সরকারি কার্যক্রমগুলো অনলাইনে স্থানান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। অস্ট্রেলিয়া এখন এই ‘ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব’কে স্বীকৃতি দিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ বলেন, ‘এই উদ্যোগ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলজুড়ে আমাদের অংশীদারদের বার্তা দেয় যে তারা আমাদের ওপর আস্থা রাখতে পারে।’

অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জলবায়ু নীতিমালা ও অভিবাসন নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, ট্রাম্প প্রশাসন বর্তমানে ৩৬টি দেশকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছে, যার মধ্যে টুভালুসহ টোঙ্গা ও ভানুয়াতুর মতো প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্রতিবেশীরাও রয়েছে।

khk
আরও পড়ুন