ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

রাইসির মৃত্যু ঘিরে ঘুরপাক খাচ্ছে যে পাঁচ প্রশ্ন, আজ দাফন

আপডেট : ২৩ মে ২০২৪, ০৯:০১ এএম

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ বাকি সবার তৃতীয় জানাজা বুধবার (২২ মে) রাজধানী তেহরানের ইউনিভার্সিটি অব তেহরান ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ এ জানাজায় অংশ নেয়। এদিকে রাইসির রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে ইরানসহ বিশ্বজুড়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রশ্ন সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা, পার্স টুডে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এক্সিকিউটিভ অ্যাফেয়ার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহসেন মনসুরি জানান, বুধবার সকালে ইউনিভার্সিটি অব তেহরানে আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ জানাজায় অংশ নেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এরপর বিকেলে উচ্চপদস্থ বিদেশি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে একটি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।

মনসুরি আরও জানিয়েছেন, রাইসির মৃতদেহ আজ সকালে দক্ষিণ খোরাসান প্রদেশের রাজধানী বিরজান্দে নেওয়া হবে। সন্ধ্যায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদে অষ্টম শিয়া ইমাম রেজার মাজারে রাইসির দাফন অনুষ্ঠান হবে।

ঘুরপাক খাচ্ছে পাঁচ প্রশ্ন: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ নয়জন নিহতের ঘটনা নিয়ে প্রায় সবখানেই কয়েকটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তার মধ্যে প্রধানত পাঁচটি প্রশ্ন উল্লেখযোগ্য। প্রথমত, ইরানজুড়ে জনসাধারণ এবং গণমাধ্যমগুলো ইসরায়েলি দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে এ ঘটনার জন্য দায়ী করে চলেছে। কারণ ইসরায়েল এবং তার গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদই ইরান ও রাইসির প্রধান শত্রু। এ শত্রুতার কারণেই তারা এর আগে ইরানের সাতজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া ইসরায়েলের ‘যম’ হিসেবে পরিচিত ইরানি সেনা কর্মকর্তা কাশেম সোলায়মানিসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সেনা কমান্ডার মোসাদের হাতে খুন হয়েছেন।

এ অবস্থায় সিরিয়ায় ইরানি কনসুলেটে ইসরায়েলি হামলার জবাবে গত মাসে ইরান থেকে ইসরায়েলের ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ হিসেবে প্রেসিডেন্ট রাইসিকে খুন করা হতে পারে। এমনিক এ মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত সরকার নিয়ন্ত্রিত ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো ইরান এবং প্রেসিডেন্ট রাইসির নামে বিষোদগার করে চলেছে। তারা রাইসিকে ‘তেহরানের কসাই’ বলে অভিহিত করে তার নিহত হওয়ার খবরে উল্লাস প্রকাশ করে চলেছে।

আরেকটি রহস্যজনক ঘটনা হলো- হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার খবর যখন ইরানি সরকার সঠিকভাবে শনাক্তই করতে পারেনি এবং এ বিষয়ে কোনো তথ্যও প্রকাশ করেনি, তখন ইসরায়েলি গণমাধ্যম ফলাও করে রাইসির মৃত্যুর খবর প্রচার করতে থাকে। এ কারণে ইরানিদের সন্দেহ, এ দুর্ঘটনা সুপরিকল্পিত এবং এটা মোসাদের কাজ।

দ্বিতীয় বিষয় হলো- এ নিহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার সন্দেহ। কারণ একে তো যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধান মিত্র এবং তাদের সব রকম অস্ত্র সহায়তা করে থাকে। এই সঙ্গে ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তা ছাড়া যে হেলিকপ্টারটি দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে সেটিও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। এসব কারণে ইরান সন্দেহের তালিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিতে পারছে না। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিকভাবে এ প্রশ্নটিও উঠেছে যে, রাইসির মত্যুতে লাভ হলো কার? অর্থাৎ দেশটির অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে কার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সফল হলো? দেখা যাচ্ছে, ইরানের ৮৫ বছর বয়সি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পর তাঁর স্থানে আসতেন প্রেসিডেন্ট রাইসি। তিনি ছিলেন প্রথম স্থানে। পরের স্থানে ছিলেন খামেনির ছেলে মোস্তবা খামেনি। এখন রাইসি চলে যাওয়ায় মোস্তবার জন্য সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পথ খুলে গেছে। বলা যায়, এদিক থেকে লাভবান হয়েছেন খামেনির ছেলে মোস্তবা খামেনি। এ বিষয়টিও অনেক মহলে আলোচিত হচ্ছে। তা ছাড়া প্রশ্ন উঠেছে-যে হেলিকপ্টারটি আকাশে ওড়ার প্রাথমিক যোগ্যতাও ছিল না, সেই হেলিকপ্টারটি রাইসিকে ব্যবহারের জন্য কেন ইরানি কর্মকর্তারা দিয়েছিলেন? এখানেও একটি বড় প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

চতুর্থত, কোনো কোনো সামরিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যেখানে প্রেসিডেন্ট রাইসির সঙ্গে আরও দুটি হেলিকপ্টার ছিল, অথচ সে দুটির কোনোই ক্ষতি হলো না! সেগুলো নিরাপদে অবতরণ করল, কিন্তু প্রেসিডেন্টেরটাই কেবল বিধ্বস্ত হলো। প্রশ্ন উঠেছে-তাহলে কি প্রেসিডেন্টর বিমান লক্ষ্য করে কোনো স্পেস লেজার ছোড়া হয়েছে? সাধারণত এ ধরনের স্পেস লেজার ব্যবহার করে থাকে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র।

পঞ্চমত, কোনো কোনো মহল থেকে কট্টর ইরানবিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠী ‘জয়শাল আদিল’কে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ গোষ্ঠীটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে প্রেসিডেন্টের কপ্টারটি ধ্বংস করেছে কি না-সে প্রশ্ন এখানে তোলা হচ্ছে। কারণ তারা এভাবেই ইরানের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। তবে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞই এ গোষ্ঠীর জড়িত থাকার প্রশ্ন নাকচ করে দিচ্ছেন, কারণ এ গোষ্ঠীটির অবস্থান পাকিস্তান সীমান্তে। যে স্থানে প্রেসিডেন্টর কপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে, সেখানে এদের কোনো কার্যক্রম নেই।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সব প্রশ্নের উত্তরই শিগগির বেরিয়ে আসতে পারে। বিষয়গুলো নিয়ে ইরানসহ বিভিন্ন দেশ অনুসন্ধান চালাচ্ছে। সে কারণে রহস্য দ্রুতই উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

HK/FI
আরও পড়ুন