ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

চাবাহার বন্দরের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৮ পিএম

যুক্তরাষ্ট্র ইরানের কৌশলগত চাবাহার বন্দর ব্যবস্থাপনায় দেওয়া নিষেধাজ্ঞা ছাড় (sanctions waiver) প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের সহকারী মুখপাত্র থমাস পিগাট জানিয়েছেন, আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এতে ভারতের জন্য জটিল কূটনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, কারণ এই বন্দরে ভারতের বহু কোটি ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে।

চাবাহার বন্দর ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান অঞ্চলের ওমান উপসাগর উপকূলে অবস্থিত। বন্দরটির একটি টার্মিনাল ‘শাহিদ বেহেশতি’ পুরোটাই ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বিকল্প বাণিজ্যিক সংযোগ গড়ে তোলার লক্ষ্যে এটি ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত প্রকল্প।

২০১৮ সালে আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় ‘ইরান ফ্রিডম অ্যান্ড কাউন্টার প্রোলিফারেশন অ্যাক্ট (IFCA)’ এর আওতায় চাবাহার প্রকল্পকে নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছিল। তবে এবার ট্রাম্প প্রশাসন সেই সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

থমাস পিগাট বলেন, চাবাহারে পরিচালনাকারী যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান IFCA-র আওতায় নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে। ভারতের মতো কোনো মিত্র দেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

চাবাহার বন্দর শুধু বাণিজ্যের জন্যই নয়, ভারতের ‘কানেক্টিভিটি ডিপ্লোম্যাসি’র মূল স্তম্ভ। এই বন্দর ব্যবহার করে পাকিস্তানকে বাইপাস করে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চায় দিল্লি।

২০২৪ সালের ১৩ মে ভারত ১০ বছরের জন্য চাবাহার বন্দর পরিচালনার একটি চুক্তি সই করে। এটি ছিল ভারতের ইতিহাসে বিদেশে প্রথম কোনো বন্দর পরিচালনার উদ্যোগ।

বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে শুধু ভারতীয় বিনিয়োগ নয়, দিল্লির দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনাও হুমকির মুখে পড়েছে। চাবাহার বন্দর ‘ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর’ (INSTC)-এর অংশ, যা ভারতের পণ্যকে ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছাতে সহায়তা করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাবাহার না থাকলে এই করিডোরের কার্যকারিতা হ্রাস পাবে এবং পাকিস্তানের গদার বন্দরের ওপর চীনের আধিপত্য আরও বাড়বে।

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রহ্মা চেলানি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ ভারতের জন্য শাস্তিমূলক। ট্রাম্প প্রশাসন প্রথম মেয়াদে ইরান থেকে ভারতের তেল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছিল, যাতে লাভবান হয় চীন। এবার চাবাহার থেকেও ভারতকে সরিয়ে দিয়ে চীনকেই বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগলম্যান বলেন, চাবাহার ভারতের জন্য কৌশলগত প্রবেশদ্বার। এটি হারালে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় ভারতের প্রভাব হ্রাস পাবে এবং পাকিস্তান-চীন জোটের কাছে কৌশলগত সুবিধা চলে যাবে।

আফগানিস্তান থেকে পণ্য পরিবহন: ২০১৯ সালে চাবাহার হয়ে আফগান পণ্য ভারতে প্রবেশ করে, যা ঐতিহাসিক ঘটনা।

চীন-ইরান সম্পর্ক: ইরান থেকে সস্তায় অপরিশোধিত তেল কিনে চীন এখন দেশটির প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার।

ভারতের ভূরাজনৈতিক অবস্থান: চাবাহার ছাড়া ভারতকে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে নতুন বিকল্প ভাবতে হবে।

চাবাহার বন্দরের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ছাড় প্রত্যাহার শুধু একটি প্রকল্প বন্ধ হওয়ার বিষয় নয়, বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য, ভারতের কৌশলগত স্বার্থ এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেখার বিষয় দিল্লি এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কোন কৌশল নেয়।

DR/MMS
আরও পড়ুন