চীনা সন্দেহে ভারতে বিএসএফ সদস্যের ছেলেকে হত্যা

আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০০ এএম

উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে ত্রিপুরার এক আদিবাসী ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। গত ৯ ডিসেম্বর মদ্যপ অবস্থায় থাকা একদল ব্যক্তির ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ ডিসেম্বর দেরাদুনের একটি হাসপাতালে মারা যান অ্যাঞ্জেল চাকমা।

২৪ বছর বয়সী অ্যাঞ্জেল চাকমা ত্রিপুরার উত্তর জেলার পেচারথল এলাকার বাসিন্দা এবং এমবিএ শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা ভারতের সীমান্তরক্ষী বিএসএফের একজন সদস্য। চাকমা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া (সিডিএফআই) জানিয়েছে, হামলার আগে অভিযুক্তরা অ্যাঞ্জেল ও তার ভাই মাইকেল চাকমাকে জাতিগত বিদ্বেষমূলক গালিগালাজ করে এবং এরপর তাদের ওপর হামলা চালায়।

অভিযোগ অনুযায়ী, ওই সময় একদল যুবক তাদের উদ্দেশে ‘চাইনিজ’, ‘চিঙ্কি’ ও ‘মোমোস’ বলে অবমাননাকর মন্তব্য করে। দুই ভাই এসব জাতিগত ও বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের প্রতিবাদ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং দ্রুত সহিংসতায় রূপ নেয়। অ্যাঞ্জেলের মাথা ও পিঠে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ পাঁচজন স্থানীয় বাসিন্দাকে গ্রেপ্তার করলেও মূল অভিযুক্ত এখনও পলাতক রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডকে “জাতিগত বিদ্বেষপ্রসূত হত্যাকাণ্ড” হিসেবে আখ্যা দিয়ে সিডিএফআই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।

সিডিএফআই স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছে, ২০১৪ সালে দিল্লিতে অরুণাচল প্রদেশের যুবক নিডো তানিয়ার হত্যাকাণ্ডের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত এম.পি. বেজবরুয়া কমিটি দেশে জাতিগত সহিংসতা রোধে একটি আলাদা আইন অথবা বিদ্যমান ফৌজদারি আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনের সুপারিশ করেছিল।

সিডিএফআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সুহাস চাকমা শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) অভিযোগ করেন, উত্তরাখণ্ড পুলিশ ঘটনার পর দ্রুত পদক্ষেপ নেয়নি। পুলিশ তিন দিন দেরিতে এফআইআর নথিভুক্ত করে এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৯ ধারা (হত্যাচেষ্টা), ১১৭(৪) ধারা (জাতি বা বর্ণের ভিত্তিতে সংঘবদ্ধভাবে গুরুতর আঘাত) কিংবা তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইনের প্রাসঙ্গিক ধারাগুলো প্রয়োগ করেনি। এই গাফিলতির সুযোগেই মূল অভিযুক্ত পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

সংস্থাটি বলেছে, অ্যাঞ্জেল চাকমার হত্যাকাণ্ড আগের জাতিগত সহিংসতার ঘটনাগুলোর সঙ্গে মিল রয়েছে, যার মধ্যে নিডো তানিয়ার হত্যাকাণ্ড অন্যতম। সিডিএফআইয়ের মতে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় যুক্ত হওয়া নতুন ধারাগুলো, যেমন ধর্ম, জাতি, জন্মস্থান বা ভাষার ভিত্তিতে বিদ্বেষ ছড়ানো সংক্রান্ত ১৯৬ ধারা, উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষের বিরুদ্ধে চলমান জাতিগত বৈষম্য ও সহিংসতা মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়।

সিডিএফআই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে উত্তরাখণ্ড সরকারকে নির্দেশ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে, যাতে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১০৩(২) ধারায় হত্যা মামলা রুজু করা হয়, দ্রুত মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং নিহত অ্যাঞ্জেল চাকমার পরিবারকে এক কোটি রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি দিল্লির স্পেশাল পুলিশ ইউনিট ফর নর্থ-ইস্টার্ন রিজিয়নের আদলে দেরাদুনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের জন্য একটি বিশেষ হেল্পলাইন চালুরও দাবি জানানো হয়েছে। সূত্র: দ্য হিন্দু, এনডিটিভি, ফ্রি প্রেস জার্নাল

HN
আরও পড়ুন