যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন সহায়তা প্রদানকারী দেশ। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর সব ধরনের বিদেশি সহায়তা স্থগিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার মধ্যে অন্যতম হল এইডস আক্রান্তদের জন্য অনুদান। এর ফলে আফ্রিকায় এইডস সৃষ্টিকারী এইচআইভিতে মৃত্যুর সংখ্যা আকাশ ছুঁতে পারে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের এইডস কর্মসূচির প্রধান।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এ কারণে আগামী ১০ বছরের মধ্যে শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায়ই মারা যেতে পারেন ৫ লাখ মানুষ। একইভাবে আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে মারা যেতে পারেন লাখ লাখ মানুষ। স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা এবং সহায়তা বিষয়ক সংগঠনগুলো এমন সতর্কতা দিয়েছে। এর মধ্যে ডেসমন্ড টুটু এইচআইভি সেন্টার বৃহস্পতিবার শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার ওই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
এতে আরও সতর্ক করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বড় মাপের এই সহায়তা কর্তনের ফলে দেশগুলোতে এরই মধ্যে প্রভাব পড়া শুরু করেছে। ২০শে জানুয়ারি দায়িত্ব নেয়ার পরপরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাহী ক্ষমতার অধীনে বেশ কিছু আদেশ দেন। তার মধ্যে পরবর্তী ৯০ দিন বা তিন মাস প্রাথমিকভাবে বিদেশি সহায়তা বন্ধ রাখার আদেশ দেন। গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সরকার এইএসএইডের মাধ্যমে যেসব বিদেশি ফান্ডে অর্থ দিতো, তার মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ কর্তন করেছে। ওয়াশিংটনে ইউএসএইডের হাজার হাজার স্টাফকে বরখাস্ত করেছে। বৃহস্পতিবার খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউএনএইডসেও অর্থায়ন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
উল্লেখ্য ইউএনএইডস হলো জাতিসংঘের এইচআইভি/এইডস বিষয়ক কর্মসূচি। তারা বিশ্বজুড়ে মানুষের সেবা দিয়ে থাকে। গত সপ্তাহে এক রিপোর্টে ইউএনএইডস বলেছে, বিশ্বের কমপক্ষে ৫৫টি দেশে এইচআইভি কর্মসূচিতে অর্থায়ন কর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে আফ্রিকার বেশ কিছু দেশও। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ইমার্জেন্সি প্লান ফর এইডস রিলিফ (পিইপিএফএআর) সমর্থিত এইচআইভি বিষয়ক ৫৫টি প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ রায়েছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা আফ্রিকার দেশগুলোতে। সেখানে একে সবচেয়ে বড় মহামারি হিসেবে ধরা হয়। সাব-সাহারান আফ্রিকার প্রায় আড়াই কোটি মানুষ এইচআইভি নিয়ে বসবাস করছেন। বিশ্বে মোট তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ শরীরে এইচআইভি নিয়ে বেঁচে আছেন। তার মধ্যে সাব সাহারান আফ্রিকার ওই সংখ্যা অন্যতম। পিইপিএফএআর-এর কর্মকাণ্ড শুরু হয় ২০০৩ সালে। ইউএনএইডসের হিসাব অনুসারে এই কর্মসূচি বিশ্বের আড়াই কোটি মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। এই কর্মসূচি শুরু করার পর থেকে মোট প্রায় ১২০০০ কোটি ডলার খরচ করেছে।
বৃহস্পতিবার ডেসমন্ড টুটু এইচআইভি সেন্টারের প্রধান অপারেটিং কর্মকর্তা লিন্ড-গেইল বেক্কার বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় এই অর্থায়ন বন্ধ করার ফল হবে বিপর্যয়কর। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক সহায়তা বিষয়ক গ্রুপকে জানানো হয়েছে যে, ইউএসএইডের অধীনে তাদেরকে যে অর্থ দেয়া হতো তা বাতিল করা হয়েছে। তারপরই লিন্ড-গেইল বেক্কার ওই মন্তব্য করেন। তিনি আরো বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের পরিণতি হবে করুণ। তিনি আরও বলেন, আমাদের তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে হবে মানুষ মারা যাচ্ছে। অর্থের অভাবে অপ্রয়োজনে ৫ লাখ মানুষ মারা যাবেন। আর ৫ লাখ মানুষ নতুন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবে। এরই মধ্যে জাতিসংঘ বলেছে, আফ্রিকার বহু দেশে তাদের এইচআইভি বিষয়ক সার্ভিস বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে এইচআইভি প্রতিরোধ, পরীক্ষা ও চিকিৎসায় বেশি প্রভাব পড়েছে। লাখো মানুষ বিনামূল্যে গুরুত্বপূর্ণ এন্টিরেট্রোভাইরাল ট্রিটমেন্ট (এআরটি) সেবা পেতো। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে ভাইরাসকে দামিয়ে রাখতো, যাতে তা শনাক্তকরণের পর্যায়ের বাইরে থাকে এবং এর মধ্য দিয়ে জীবন রক্ষা করা সম্ভব হতো। কিন্তু এই চিকিৎসার অর্থ বন্ধ হয়ে গেছে।
সহায়তা কর্তনের ঘোষণার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি জরুরি সহায়তা ঘোষণা করেছে। তাতে বলা হয়েছে, জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা চালু করা হবে। এর মধ্যে থাকবে এইচআইভি চিকিৎসা। এর প্রতিরোধমুলক কর্মসূচি নয়। এর জন্য অনুমোদন পেতে সংগঠনগুলোতে ৩০ দিনের জন্য একটি ওয়ার্ক প্লান ও বাজেট পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
