ইতালির আবরুজো অঞ্চলের মাউন্ট গিরিফালকোর পাদদেশে অবস্থিত এক ক্ষুদ্র গ্রাম ‘পাগলিয়ারা দেই মার্সি’। কয়েক মাস আগেও গ্রামটির প্রধান পরিচয় ছিল এর নিস্তব্ধতা আর অগণিত বিড়ালের অবাধ বিচরণ। তবে দীর্ঘ তিন দশক পর সেই নীরবতা ভেঙেছে এক নবজাতকের আগমনে, যা গ্রামটিতে রীতিমতো এক ঐতিহাসিক উৎসবে রূপ নিয়েছে।
দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর পর এই গ্রামে জন্ম নিয়েছে লারা বুসি ট্রাবুক্কো নামের এক শিশু। গত মার্চে তার জন্মের পর গ্রামটির মোট জনসংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ২০ জনে। লারার আগমনে বিড়ালের আধিপত্য ঘেরা এই নির্জন জনপদ এখন পর্যটক ও কৌতূহলী মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
লারার মা সিনজিয়া ট্রাবুক্কো বলেন, “আগে অনেকেই জানতেন না আমাদের এই গ্রামটির অস্তিত্ব আছে। কিন্তু এখন লারার কারণে গ্রামটি পরিচিতি পাচ্ছে। সে যেন আমাদের এই মৃতপ্রায় জনপদের প্রাণের প্রতীক হয়ে উঠেছে।”
পাগলিয়ারা দেই মার্সি গ্রামের এই বিরল আনন্দ ইতালির এক ভয়াবহ জাতীয় সংকটের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ‘ইস্ট্যাট’ (ISTAT) জানিয়েছে, টানা ১৬ বছর ধরে ইতালিতে জন্মহার কমছে। ২০২৪ সালে দেশটিতে রেকর্ড সর্বনিম্ন ৩ লাখ ৬৯ হাজার শিশু জন্ম নিয়েছে। প্রজনন হার নেমে দাঁড়িয়েছে ১.১৮-এ, যা পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ভুক্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, কর্মজীবী মায়েদের জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তার অভাব এবং তরুণ প্রজন্মের দেশান্তরী হওয়ার প্রবণতা দেশটিকে এই ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষ করে আবরুজো অঞ্চলে পরিস্থিতি সবচেয়ে উদ্বেগজনক, যেখানে গত সাত মাসে জন্মহার আগের বছরের তুলনায় ১০ শতাংশেরও বেশি কমেছে।
স্থানীয় মেয়র জিউসেপিনা পেরোজ্জি জানান, বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা বাড়লেও নতুন প্রজন্মের অভাব গ্রামগুলোকে জনশূন্য করে তুলছে। লারার বাবা-মার মতে, শুধু সরকারি ‘বেবি বোনাস’ বা মাসিক ভাতা দিয়ে এই সংকট মেটানো সম্ভব নয়; প্রয়োজন সামগ্রিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন।
আপাতত লারার একচিলতে হাসিই পাগলিয়ারা দেই মার্সির ২০ জন বাসিন্দার মনে নতুন করে বাঁচার আশা জোগাচ্ছে। বিড়ালের রাজত্বে এই এক শিশুই এখন গ্রামটির আগামীর স্বপ্ন।
