ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

যুক্তরাষ্ট্রের 'অবজ্ঞায়' ড্রোন শিল্পে গ্র্যান্ড মাস্টার তুরস্ক

আপডেট : ৩১ মে ২০২৪, ০৪:৪৭ পিএম

গত এক দশক ধরে তুরস্ক সামরিক প্রযুক্তিতে বিশ্বের এক নম্বর জায়গা দখলের চেষ্টা করছে। বিশেষ করে ড্রোন উৎপাদনে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। দেশটি ড্রোন শিল্পের গ্র্যান্ড মাস্টার হয়ে উঠেছে। কারণ তাদের ড্রোন এতটাই শক্তিশালী যে, যেকোনো দুর্গম এলাকায় অভিযান চালাতে সক্ষম এবং বিরোধী পক্ষের যেকোনো তথ্য দিতেও সক্ষম।

সম্প্রতি ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে নিয়ে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হলে সাহায্য করতে ড্রোন পাঠায় তুরস্ক। এর মাধ্যমে দেশটি প্রমাণ করে তারা মুসলিম বিশ্বের প্রকৃত বন্ধু। আর তুরস্কের ড্রোনই রাইসির সন্ধান পেতে সক্ষম হয়।

তুরস্কের নজরদারি ড্রোন 'বাইরাক্তার আকিঞ্চি' একটি উন্নত প্রযুক্তির ড্রোন। এটা বিশ্বের অনেক দেশকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এরপরও তুরস্ক ড্রোন প্রযুক্তির আরও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বিখ্যাত ড্রোন 'আনকা' ড্রোনের মান উন্নয়ন শুরু করেছে। বর্তমানে 'আনকা থ্রি' হচ্ছে একক ইঞ্জিন চালিত। এটা ঘণ্টায় ৮৪৫ কিলোমিটার গতিতে চলে। আর টুইন ইঞ্জিন যুক্ত হলে গতি শুধু বাড়বেই না বরং আরও বেশি যুদ্ধাস্ত্র বহন করতে সক্ষম হবে।

রণাঙ্গনে তুর্কি ড্রোনের দাপট এখন কারোই হয়তো অজানা নয়। আর্মেনিয়া-আজারবাইজান যুদ্ধ থেকে শুরু করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে তুরস্কের তৈরি বিভিন্ন সামরিক ড্রোন। যুদ্ধের পাশাপাশি শান্তিকালীন অভিযানেও নিজের অপ্রতিদ্বন্দ্বিতা বজায় রেখেছে তুরস্কের ড্রোন বহর। বর্তমানে বিশ্বের কমপক্ষে ৪০টি দেশের আকাশ সুরক্ষায় নিজেকে প্রমাণ করছে তুর্কি ড্রোন বহর।

তুরস্কের ড্রোন যুদ্ধে একটি ‘গেম চেঞ্জার’ অস্ত্র। দেশটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ড্রোন উৎপাদনে বেশ প্রসিদ্ধ এবং তারা এই শিল্পের বিকাশে মনোনিবেশ করছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের জামাতা ড্রোন শিল্পের সাথে জড়িত এবং তিনি দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগে কাজ করেন।

তুরস্ক ২০১৯ সাল থেকে ইউক্রেনের কাছে বেশ কয়েকটি 'বায়রাকতার টিবিটু' সশস্ত্র ড্রোন বিক্রি করেছে। মূলত তুরস্কের ড্রোন বিশ্বজুড়ে অনেক সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।

তুরস্কের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক এরদা মোলুদৌলু বলেন, আঙ্কারা সরকার গত ১০ বছরে উল্লেখ করার মতো শক্তিশালী ড্রোন বাহিনী তৈরি করেছে। তারা তুরস্কের অভ্যন্তরে এবং সীমান্তের ওপারে (১৯৯০ এর শতকের মাঝামাঝি সময়ে কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাীদের বিরুদ্ধে) নিরাপত্তা অভিযানে কার্যকরভাবে তাদের ড্রোন ব্যবহার করছে।

দেশটির প্রযুক্তিমন্ত্রী মেহমেত ফাতিহ কাসের দাবি করেন, আমানি নির্ভরতা কমিয়ে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের স্থানীয়করণ ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮০ শতাংশের বেশি দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে দেশটিতে সাড়ে তিন হাজার কোম্পানি ও প্রায় ৮০ হাজার দক্ষ কর্মী প্রতিরক্ষা শিল্পে অবদান রাখছে। প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নতি একটি দেশের সভ্যতার অগ্রগতিকে মূল্যায়ন করে থাকে।

তুরস্কের প্রশাসন অনেক আগে থেকেই ড্রোনের কার্যকারিতা উপলব্ধি করছিল। ২০১০ এবং ২০১২ সালে দুই দফায় তুরস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের প্রয়োজনীয় ড্রোনের চাহিদার কথাও জানিয়েছিল। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন তাতে সাড়া দেয়নি। পরে তুরস্ক নিজেরাই ড্রোন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ খাতে বিপুল বিনিয়োগ করে। এর ফল হিসেবে তুরস্ক ড্রোন শিল্পে নতুন পরাশক্তি হিসেবে বিশ্বে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমানে দেশটি ড্রোন শিল্পের গ্রান্ড মাস্টার।

MHR/WA
আরও পড়ুন