বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের অভিবাসনে আগ্রহীদের পছন্দের শীর্ষে থাকে ইউরোপ। এই ইউরোপের গতিশীল অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে দেখা দিয়েছে দক্ষ পেশাজীবীর সংকট। এরই প্রেক্ষিতে প্রকৌশল, স্বাস্থ্যসেবা, তথ্য-প্রযুক্তি ছাড়াও আরও কয়েকটি খাতে কর্মী নেওয়ার জন্য ‘অপরচুনিটি কার্ড’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে জার্মান সরকার।এ বছরের জুন থেকে অন্তত আড়াই হাজার অভিবাসী দেশটিতে এসেছেন। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সরকারি এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
চান্সেনকার্টে বা অপরচুনিটি কার্ড নামের এই প্রকল্পের আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশের নাগরিকেরা পয়েন্ট অর্জনের মাধ্যমে জার্মানিতে আসার সুযোগ পাবেন। ১ জুন থেকে কার্যকর হওয়া এই প্রকল্প দক্ষ বিদেশি কর্মীদের চাকরির কোনো চুক্তিপত্র ছাড়াই জার্মানিতে আসার সুযোগ করে দেবে। এটি মূলত একটি রেসিডেন্ট পারমিট, এটার মাধ্যমে জার্মানিতে এক বছর থাকার অনুমতি পাবেন তারা, এই সময়টিতে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি খোঁজার সুযোগ পাবেন তারা।
জুনে কার্যকর হওয়ার পর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে অন্তত ৫৫০টি সফল আবেদন নথিভুক্ত করেছে। নতুন এই প্রকল্পের অধীনে ভারতের নাগরিকেরা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ভিসা পেয়েছেন। দেশটির ৭৮০ জন নাগরিক এই ভিসা নিয়ে জার্মানি এসেছেন। এরপরেই রয়েছে চীন, তুরস্ক এবং পাকিস্তানের নাম। এই প্রকল্পটি স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি এবং ইংরেজি বা জার্মান ভাষার দক্ষতাসহ দক্ষ অভিবাসীদের কোনো চাকরির সুযোগ ছাড়াই জার্মানি আসার সুযোগ করে দেয়।
অপরচুনিটি বা চান্সেনকার্টে পাওয়ার যোগ্যতা: শিক্ষাগত, পেশাগত এবং ভাষার দক্ষতাসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে একজন আবেদনকারীকে চান্সেনকার্টে দেবে জার্মান সরকার। এজন্য একটি পয়েন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। চান্সেনকার্টে পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে আবেদনকারীকে অন্তত ছয় পয়েন্ট অর্জন করতে হবে।
চান্সেনকার্টে পাওয়ার ক্ষেত্রে দুই ধরনের যোগ্যতার কথা বলছে জার্মান সরকার। একটি হলো- আবেদনকারীর জার্মানিতে স্বীকৃত শিক্ষাগত বা পেশাগত যোগ্যতার বিদেশি সনদ থাকতে হবে। অথবা আবেদনকারী যদি জার্মানির কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি বা পেশাগত যোগ্যতা অর্জন করে থাকেন তাহলেও তিনি চান্সেনকার্টে পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। এমন সনদ থাকলে আবেনকারীকে সরাসরি আবেদন করার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে আবেদনকারী জার্মানিতে চাকরি খুঁজে নেওয়ার জন্য ১৮ মাস সময় পাবেন।
দ্বিতীয়টি হলো, আবেদনকারীর নিজ দেশে স্বীকৃত ভোকেশনাল বা অ্যাকাডেমিক ডিগ্রি থাকতে হবে। সেই সঙ্গে ভোকেশনাল ডিগ্রিধারীদের দুই বছরের কাজের প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
ভাষাগত যোগ্যতার শর্ত হিসেবে বলা হচ্ছে, আবেদনকারীকে অবশ্যই জার্মান ভাষার এ১ লেভেল অথবা ইংরেজি ভাষার বি২ লেভেলের দক্ষতা থাকতে হবে।
যেভাবে গণনা হবে পয়েন্ট: সরকারের নতুন এই প্রকল্পের বিধি অনুযায়ী, শুধু দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থীদের বেলায় পয়েন্ট সিস্টেম গণনার প্রয়োজন হবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: আবেদনকারীর যোগ্যতা যদি আংশিকভাবে জার্মান স্ট্যান্ডার্ডের সমতুল্য হয় তাহলে তাকে চার পয়েন্ট দেয়া হবে। আবেদনকারীর যোগ্যতা যদি জার্মানিতে কর্মী সংকট রয়েছে এমন পেশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়, তাহলে আবেদনকারীকে ২ পয়েন্ট দেয়া হবে।
পেশাগত যোগ্যতা: শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে মিল রেখে পেশাগত যোগ্যতার জন্যও পয়েন্ট পাবেন আবেদনকারীরা। সেক্ষেত্রে সর্বশেষ পাঁচ বছরের মধ্যে দুই বছরের পেশাগত যোগ্যতার জন্য দুই পয়েন্ট এবং সর্বশেষ সাত বছরের মধ্যে পাঁচ বছরের পেশাগত যোগ্যতার জন্য তিন পয়েন্ট দেয়া হবে।
ভাষা: জার্মান ভাষায় এ২ লেভেলের দক্ষতার জন্য থাকছে এক পয়েন্ট, বি১ লেভেলের দক্ষতার জন্য দুই পয়েন্ট এবং বি২ লেভেলের দক্ষতার জন্য থাকছে তিন পয়েন্ট। তাছাড়া সি১ লেভেলের ইংরেজি ভাষার দক্ষতার জন্য বা ইংরেজি যাদের মাতৃভাষা তাদেরকে একটি অতিরিক্ত পয়েন্ট দেয়া হবে।
বয়স: যাদের বয়স ৩৫ বছরের বেশি নয়, তারা পাবেন দুই পয়েন্ট। আর ৩৫ থেকে ৪০ বছরের আবেদনকারীদের জন্য রয়েছে এক পয়েন্ট।
জার্মানিতে থাকার অভিজ্ঞতা: সর্বশেষ পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে যদি আবেদনকারী টানা ছয় মাস জার্মানিতে বৈধভাবে অবস্থান করে থাকেন, তাহলে এর জন্য তাকে এক পয়েন্ট দেয়া হবে। তবে পর্যটক হিসাবে জার্মানিতে অবস্থান করে থাকলে তা গণনা করা হবে না। জার্মানিতে অবস্থানের প্রমাণপত্র হিসেবে আবেদনের সময় পাসপোর্ট এবং ভিসার কপি জমা দিতে হবে।
সবশেষে, আবেদনকারীর সঙ্গীর (স্ত্রী বা জীবনসঙ্গী) কথা বলা হয়েছে। আবেদনকারীর সঙ্গী যদি উপরোক্ত যোগ্যতা পূরণ করে থাকেন তাহলে এর জন্য এক পয়েন্ট দেয়া হবে।
