আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে চীন ও ভারতের মধ্যে। অরুণাচল প্রদেশের ২৭টি স্থানের নতুন নামকরণ করেছে চীন, যার জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। দিল্লি বলেছে, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং চীনের এ ধরনের ভ্রান্ত ও অযৌক্তিক পদক্ষেপে তাতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
গত রোববার (১১ মে) চীনের বেসামরিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় অরুণাচলের অন্তর্গত ২৭টি জায়গার নতুন নাম প্রকাশ করে। চীনা ভাষায় প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, এই জায়গাগুলোর মধ্যে রয়েছে— ১৫টি পাহাড়, ৪টি সড়ক, ২টি নদী, ১টি হ্রদ ও ৫টি বসতিপূর্ণ এলাকা।
চীনা কর্তৃপক্ষ এসব জায়গার তিব্বতীয়, পিনইন ও চীনা অক্ষরসমৃদ্ধ নাম নির্ধারণ করে, যা বেইজিংয়ের মতে ঐতিহাসিকভাবে দক্ষিণ তিব্বতের অন্তর্ভুক্ত।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জসওয়াল এক বিবৃতিতে বলেন, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য এবং অবিচল অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে। চীনের এমন ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন দাবি ভারতের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে কখনোই প্রভাবিত করতে পারবে না।
তিনি আরও জানান, এ ধরনের নামকরণ একটি রাজনৈতিক কৌশল, যার মাধ্যমে চীন বাস্তবতা বদলে দিতে চায়; কিন্তু তা কোনোভাবেই আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
চীন ২০১৭ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে অরুণাচলের বিভিন্ন স্থানকে নতুন নাম দিয়ে নিজেদের ভূখণ্ড দাবি করে আসছে।
- ২০১৭ সালে: ৬টি স্থানের নাম পরিবর্তন
- ২০২১ ও ২০২৩ সালে: প্রতি বছর ১৫টি করে
- ২০২৪ সালের মার্চে: আরও ৩০টি স্থানের নামকরণ
- এবং মে ২০২৫: সর্বশেষ ২৭টি নতুন নাম ঘোষণা
এই নিয়ে পঞ্চমবারের মতো চীন এ ধরনের ঘোষণা দিল। উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে চীন ও ভারতের মধ্যে LAC থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে সমঝোতা হয়। তার পরই চীন ফের নতুন নামকরণের পথে হাঁটে।
চীন অরুণাচল প্রদেশকে ‘জাংনান’ নামে ডাকে এবং দাবিকরে এটি ঐতিহাসিকভাবে দক্ষিণ তিব্বতের অংশ। তবে ভারত এ দাবিকে বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্য, যা আন্তর্জাতিক সীমারেখা অনুযায়ী ভারতের অন্তর্গত।
২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষে ভারত ও চীনের সেনাদের মুখোমুখি সংঘাতে ২০ জন ভারতীয় ও চার জন চীনা সেনা নিহত হয়। এর পর থেকেই সীমান্ত ঘিরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে সীমান্ত সংঘর্ষের সময় চীনের পাকিস্তানকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের এই নামকরণ কৌশল ‘ম্যাপ ওয়ারফেয়ার’ বা মানচিত্রভিত্তিক যুদ্ধনীতির অংশ, যার মাধ্যমে ভূখণ্ডের ওপর ঐতিহাসিক দাবি প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা।
এই প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক মহলে চীনের অবস্থানকে শক্ত করতে পারে বলে তারা মনে করলেও, ভারত ও তার কূটনৈতিক মিত্র দেশগুলোর কাছে এটি গ্রহণযোগ্য নয়।
সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের 