ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

পদচ্যুত হতে যাচ্ছেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন

আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ০৪:০২ পিএম

থাইল্যান্ডের বরখাস্ত প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ আজ বড় এক মোড় নিতে যাচ্ছে। দেশটির সাংবিধানিক আদালত আজ শুক্রবার তাঁর পদচ্যুতির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপ নিয়ে বিতর্কের পর পেতংতার্নকে গত মাসে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এখন আদালতের রায়ে তিনি স্থায়ীভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারাতে পারেন।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি আদালতের রায় তাঁর বিরুদ্ধে যায়, তাহলে তা সিনাওয়াত্রা পরিবারের জন্য বড় রাজনৈতিক ধাক্কা হবে এবং থাইল্যান্ডে নতুন রাজনৈতিক অস্থিরতার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। পেতংতার্ন যদি আজ পদচ্যুত হন, তবে তিনি হবেন ২০০৮ সালের পর আদালতের রায়ে অপসারিত হওয়া পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী।

গত মে মাসে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে সামরিক উত্তেজনার সময় ফাঁস হয় পেতংতার্নের একটি ফোনালাপ। এতে তাঁকে কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনকে ‘আঙ্কেল’ বলে সম্বোধন করতে এবং এক জ্যেষ্ঠ থাই সেনা কর্মকর্তাকে 'প্রতিদ্বন্দ্বী' বলে উল্লেখ করতে শোনা যায়।

ফাঁস হওয়া ফোনালাপের সুর ও ভাষা অনেক থাই নাগরিকের মধ্যে আস্থার সংকট ও ক্ষোভের জন্ম দেয়। সমালোচকেরা একে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ক্ষুণ্নকারী ও রাষ্ট্রদ্রোহমূলক আচরণ হিসেবে অভিহিত করেন। পেতংতার্ন অবশ্য পরে ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু সাংবিধানিক আদালত ‘নৈতিক অপরাধের’ অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা পিটিশন আমলে নেয়।

এ সিদ্ধান্ত শুধু পেতংতার্নের জন্য নয়, বরং গোটা সিনাওয়াত্রা পরিবারের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। তাঁর বাবা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা-যিনি একসময় দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নায়ক ছিলেন-২০০৬ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। তিনি দীর্ঘ ১৬ বছর স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার পর ২০২৩ সালে দেশে ফিরে আসেন। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধেও একটি মামলার রায় আসন্ন।

এদিকে আদালতে সিনাওয়াত্রা পরিবারের বিরুদ্ধে থাকা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার দ্বিতীয়টির রায় হচ্ছে আজ। আদালতের সিদ্ধান্ত যদি পেতংতার্নের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে থাইল্যান্ডে আগাম নির্বাচনের পথও খুলে যেতে পারে, যা রাজনীতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, পদে টিকে গেলেও পেতংতার্নের রাজনৈতিক সুনাম ও কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁর দল ফেউ থাই পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় সাধারণ মানুষের আস্থা কমছে।

আইএসইএএস–ইউসুফ ইসহাক ইনস্টিটিউটের থাইল্যান্ড স্টাডিজ প্রোগ্রামের গবেষক নাপন জাতুস্রিপিতাক বলেন, ‘আমার মনে হয়, সিনাওয়াত্রা পরিবারের রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা একেবারেই শেষ হয়ে গেছে।’

সব দৃষ্টি এখন থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালতের দিকে। আজকের রায়ে পেতংতার্ন স্থায়ীভাবে পদচ্যুত হলে থাইল্যান্ডে নতুন রাজনৈতিক নাটকের শুরু হতে পারে। আর না হলেও তাঁর ও তাঁর দলের ওপর জনআস্থা ও রাজনৈতিক চাপ বহাল থাকবে।

NB/SN
আরও পড়ুন