চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে অস্থির সময় পার করছে। বাণিজ্য যুদ্ধ, প্রযুক্তি দখলদারিত্ব, তাইওয়ান ইস্যু থেকে শুরু করে দক্ষিণ চীন সাগরের সামরিকীকরণ দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব যেন প্রতিদিনই নতুন মোড় নিচ্ছে। এর মধ্যেই বেইজিং নতুন করে ছয়টি মার্কিন কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনা আরও তীব্র করার শঙ্কা তৈরি করেছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে সম্ভাব্য বৈঠক নিয়ে যখন কূটনৈতিক আলোচনা চলছে, তখনই এই পদক্ষেপ নিল চীন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং রাজনৈতিক ও কৌশলগত বার্তা বহন করছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক ঘোষণায় জানায়, এই মার্কিন কোম্পানিগুলো তাইওয়ানের সঙ্গে সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা করেছে। বেইজিংয়ের মতে, এটি চীনের জাতীয় সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন স্বার্থের প্রতি সরাসরি হুমকি।
এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, তাইওয়ানের সঙ্গে তথাকথিত সামরিক সহযোগিতায় লিপ্ত হওয়া মানে এক চীন নীতির প্রতি অবজ্ঞা। এটি শুধু আমাদের নিরাপত্তাই নয়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুতর হুমকি।
চীনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিনটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে "অনির্ভরযোগ্য সত্তার তালিকায় (Unreliable Entity List) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোর কার্যত চীনের সঙ্গে ব্যবসা করার অধিকার থাকে না।
তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো
- সারনিক টেকনোলজিস (Cernic Technologies)- মনুষ্যবিহীন যানবাহন (Unmanned Vehicles) নির্মাতা।
- অ্যারকম (AerCom)- স্যাটেলাইট প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান।
- ওশানিয়ারিং ইন্টারন্যাশনাল (Oceaneering International)- সাবসি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কোম্পানিগুলো চীনের বাজারে প্রবেশাধিকার হারাবে, এবং তাদের সরবরাহ শৃঙ্খল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়া, আরও তিনটি মার্কিন কোম্পানিকে চীন তাদের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় যুক্ত করেছে। এর মানে, তারা সামরিক ও বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ‘দ্বৈত প্রয়োগযোগ্য’ (dual-use) পণ্যের চীনা চালান গ্রহণ করতে পারবে না।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো হলো
- হান্টিংটন ইঙ্গলস ইন্ডাস্ট্রিজ (Huntington Ingalls Industries)- যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম সামরিক জাহাজ নির্মাতা।
- প্লানেট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ (Planet Management Group)- ইঞ্জিনিয়ারিং ও ফ্যাসিলিটিস ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি।
- গ্লোবাল ডাইমেনশনস (Global Dimensions)- একটি গোয়েন্দা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।
- চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলো চীনের জাতীয় নিরাপত্তা এবং স্বার্থকে বিপন্ন করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত তাইওয়ান ইস্যুই এই সিদ্ধান্তের কেন্দ্রে রয়েছে। চীন তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড মনে করে এবং এক চীন নীতি বিশ্বব্যাপী মান্য করার দাবি জানায়। অথচ যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত তাইওয়ানকে অস্ত্র বিক্রি করে এবং রাজনৈতিক সমর্থন দেয়, যা বেইজিংয়ের কাছে উস্কানিমূলক।
এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে তাইওয়ানের সামরিক সহযোগিতা চীনের কাছে ‘রেড লাইন’ অতিক্রমের সমান।
ওয়াশিংটনের তরফে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা পদক্ষেপ নিতে পারে। হোয়াইট হাউসের ভেতরের সূত্রগুলো বলছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ ধরনের চীনা পদক্ষেপকে অর্থনৈতিক যুদ্ধ হিসেবে দেখেন এবং তিনি প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করতে দ্বিধা করবেন না।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই নিষেধাজ্ঞা আসলে দুই দেশের মধ্যে প্রযুক্তি-ভিত্তিক ঠান্ডা যুদ্ধের আরেকটি দৃষ্টান্ত। আগে যেখানে প্রতিযোগিতা সীমিত ছিল বাণিজ্য ও টেলিযোগাযোগে (যেমন হুয়াওয়ে ইস্যু), এখন তা বিস্তৃত হয়েছে মহাকাশ প্রযুক্তি, ড্রোন এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে।
চীন নীতির একজন বিশ্লেষক বলেন, এটি শুধুই অর্থনৈতিক চাপ নয়, বরং ভূরাজনৈতিক কৌশল। চীন স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে কেউ তাইওয়ানকে সামরিকভাবে সহায়তা করবে, তাদের জন্য চীনা বাজার বন্ধ।
এই পদক্ষেপের ফলে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন করে উত্তপ্ত হতে পারে। এমনিতেই বাণিজ্য ঘাটতি, প্রযুক্তি নিষেধাজ্ঞা, দক্ষিণ চীন সাগরে সেনা মোতায়েন সব মিলিয়ে পরিস্থিতি টানটান। তার ওপর আসন্ন ট্রাম্প-শি বৈঠকের আগে এই সিদ্ধান্ত কূটনৈতিক আলোচনাকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে।
হুথি নেতার ভাষণের মাঝেই ইসরায়েলের বিমান হামলা
৩০ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে পাঞ্জাবের বন্যার্ত শিখদের পাশে ভারতীয় আলেমরা
ট্রাম্প আগ্রহী নন ভারত-পাকিস্তানের কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে : মার্কিন কর্মকর্তা
নেপালে জেন-জি’দের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে অধ্যাদেশ জারি