অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাস: এখনো প্রশাসনে ফেরেনি শৃঙ্খলা

বৈষম্য নিরসনে অবসরে যাওয়ার ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন কেউ কেউ। যা উল্টো বৈষম্য হিসেবে চিহ্নিত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। 

আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম

অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ের পরিক্রমায় ৬ মাস পেরিয়েছে। তারপরেও জনপ্রশাসনের অস্থিতিশীলতার লাগাম টেনে ধরতে পারেনি সরকার। নন-ক্যাডার পদ থেকে উচ্চপদে (সহকারী সচিব,সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব, যুগ্মসচিব) পদোন্নতির বিষয়টির এখনো সুরাহা হয়নি। এ নিয়ে প্রশাসনের প্রাণ কেন্দ্র সচিবালয়ের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনেকটাই অস্বস্তির পরিবেশ বিরাজ করছে। 

যদিও গত ৮ ফেব্রুয়ারি সচিব পদে ১১৯ জনসহ ৭৬৪ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তবে যোগ্যতা সম্পূর্ণ নন-ক্যাডার বহির্ভূত সরকারি সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব পদে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না দেয়ায় প্রায় ৫০ কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তষ্টি দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মাঝে মধ্যে বিক্ষোভ করছে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএসএ)-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। 

এঘটনায় অনেকটাই অস্থিরতা ছড়িয়েছে সচিবালয়ে। এই অস্থিতা দূর করতে গত ৩০ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবরে সরকারি সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিব পদে যোগ্যতা অর্জনের তারিখ হতে জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি প্রদান পূর্বক বৈষম্য দূরীকরণের আবেদন করেন বিএসএসএ।

বৈষম্য নিরসনে অবসরে যাওয়ার ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন কেউ কেউ। যা উল্টো বৈষম্য হিসেবে চিহ্নিত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। সরকারি চাকরিজীবীদের মহার্ঘ ভাতা নিয়ে বিতর্কের মুখে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠ প্রশাসনেও চলছে অস্বস্তি। 

আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত দাবি করে আবেদন করা দেড় হাজার কর্মকর্তার (অবসরপ্রাপ্ত) মধ্যে ৭৬৪ জনকে উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব, গ্রেড-১ ও সচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে ১১৯ জনকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক পাঁচটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে তাদের পাওনার অর্ধেক পরিশোধ করা হবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সচিব পদে ১১৯, গ্রেড-১ পদে ৪১, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮, যুগ্ম-সচিব পদে ৭২ ও উপসচিব পদে চারজন ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পেয়েছেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কর্মকর্তারা বিধি মোতাবেক তাদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী বকেয়া বেতন-ভাতা, পেনশন সমন্বয়পূর্বক আর্থিক সুবিধা পাবেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ইতিপূর্বে জারিকৃত পিআরএল বা এলপিআর আদেশ বাতিল করেছে সরকার।

এদিকে বিএসএসএ-এর আবেদন এখনও কোন আলোর মুখ দেখেনি। এ নিয়ে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ দিনকে দিন তীব্র হচ্ছে। আবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সচিবালয়ে (ক্যাডার বহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা এবং নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৪ এর আওতায় পদোন্নতি প্রাপ্ত কর্মকর্তারা এই বিধি অনুযায়ী সহকারী সচিব পরবর্তী ৫ বছরে সিনিয়র সহকারী সচিব এবং পরবর্তী ৩ বছরে উপসচিব পদের ফিডারধারী হয়ে থাকেন। 

কিন্ত প্রয়োজনীয় জেষ্ঠ্যতা থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এরূপ বৈষম্যের কারণে দীর্ঘদিন একই পদে কর্মরত থাকায় তাদের কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে। চাকরির শেষ প্রান্তে এসে অনেকে সংশ্লিষ্ট পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর সিনিয়র স্কেল বা উপসচিব পদে পদোন্নতির সুযোগ পাচ্ছেন না। এ কারণে অনেকেই সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ন্যায়সংগত প্রাপ্তি ও বৈষম্য দূরীকরণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক কমিটি গঠনপূর্বক তাদের ন্যায্য অধিকার প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে বিএসএসএ-এর আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ক্যাডার বহির্ভূত সিনিয়র সহকারী সচিব ও উপসচিব ফিডারপদের যথাসময়ে যোগ্যতা অর্জনের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হবার পরও পদোন্নতি না পাওয়ায় অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন। তারা অবসর নিয়ে চাকরির জ্বালা মেটাতে চান। একজন দক্ষ কর্মীর অসময়ে পেনসনে চলে যাওয়া যা অত্যন্ত বেদনা দায়ক এবং হতাশার কারণ। চাকরি জীবনে পদোন্নতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এসব কর্মকর্তারা চলমান প্রক্রিয়ায় বৈষম্যের শিকার হয়ে আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এমন অভিযোগ করেন নন-ক্যাডার বর্হিরভূত কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এর আহ্বায়ক মো. আব্দুল খালেক বলেন, বাংলাদেশ সচিবালয় নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৪ এর আওতায় পদোন্নতি প্রাপ্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগের ক্যাডার বহির্ভূত সহকারি সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিব, উপসচিবদের পদের ফিডার পদের যোগ্যতা অর্জনের তারিখ হতে জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি প্রদানের মাধ্যমে দূরীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য তিনি জনপ্রশাসন সিনিয়র সচিবের প্রতি কাছে বিশেষ আবেদন জানান।  

বিষয়টি জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান এর সঙ্গেযোগাযোগ করা হলে তিনি সার্বিক বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সিনিয়র অ্যাসিট্যাস্ট সেক্রেটারিকে (উনি-৪) বলেছি। তিনিই বিষয়টি দেখবেন এমনটিই বললেন ড. রহমান।

NC