সপ্তাহজুড়ে কাজের চাপের মধ্যেও মুসলমানদের জন্য আছে এক বিশেষ থেমে দাঁড়ানোর মুহূর্ত—জুমাবার। ইসলামে এটি শুধু একটি দিন নয়; বরং আত্মিক বিশুদ্ধতা, নৈতিক উন্নয়ন আর আল্লাহর করুণা লাভের এক অনন্য সুযোগ। তাই একে বলা হয় ‘সপ্তাহের ঈদ’। আভিধানিক অর্থ ছাড়াও এর রয়েছে গভীর ধর্মীয় তাৎপর্য, অসংখ্য নেক আমলের সুযোগ ও দোয়া কবুলের এক বিশেষ মুহূর্তের আশীর্বাদ।
হজরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) এক হাদিসে বলেন—পূর্ববর্তী উম্মতদের কাছে জুমার মর্যাদা গোপন ছিল; ইহুদিরা শনিবারকে, খ্রিস্টানরা রবিবারকে পবিত্র দিন মনে করত। কিন্তু আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের জন্য প্রকাশ করলেন সেই আলোকিত দিনটি—জুমাবার। (মুসলিম, হাদিস ৮৫৬)
জুমার নামাজ শুধু একটি ফরজ নামাজ নয়; এটি এক আত্মিক নবায়ন। রাসুল (সা.) বলেন—পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা—মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করে দেয়, যদি কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকা যায়। (মুসলিম, হাদিস ২৩৩)
একটি জুমা যেন হয়ে ওঠে গত সপ্তাহের ভুলভ্রান্তি ঝেড়ে ফেলা ও নতুনভাবে পথচলা শুরু করার দিন।
গোসল, সুগন্ধি, প্রস্তুতি
হজরত সালমান ফারসি (রা.) বলেন—যে জুমার দিনে গোসল করবে, সুগন্ধি ব্যবহার করবে, শালীন পোশাকে মসজিদে যাবে এবং খুতবা শুরু হলে মনোযোগ দিয়ে শুনবে—তার দুই জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (বোখারি, হাদিস ৮৮৩)
জুমার দিনের প্রস্তুতি যেন শরীরমন দুটোরই পরিচ্ছন্নতায় এক বিশেষ আয়োজন।
আগেভাগে মসজিদে যাওয়ার অনন্য ফজিলত
আরো বিস্ময়কর বিষয় হলো—মসজিদে কখন পৌঁছানো হলো, তার ওপরও আছে সওয়াবের ধরন। প্রথম জন যেন উট কোরবানি করল, এরপর গরু, ছাগল, মুরগি—আর সর্বশেষ আসা জন যেন শুধু ডিম সদকা করল। (বোখারি, হাদিস ৮৪১)
দোয়া কবুলের মুহূর্ত
মানুষের জীবনে চাওয়াপাওয়া অসংখ্য। জুমার দিন আছে এমন একটি মুহূর্ত—যা হয়তো আমাদের দোয়া আর আল্লাহর রহমতের মাঝে সেতুবন্ধ হয়ে ওঠে। রাসুল (সা.) বলেন—তোমরা এই মুহূর্তটি আছরের পর খুঁজে নাও। (আবু দাউদ, হাদিস ১০৪৮)
সুরা কাহাফ
সুরা কাহাফ পাঠ জুমার অন্যতম প্রধান আমল। রাসুল (সা.) বলেন—যে এটি জুমার দিন পাঠ করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে থাকবে। (আলমুসতাদরাক)
দাজ্জালের ফিতনা থেকেও নিরাপত্তার ঘোষণা আছে এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠে।
দরুদ শরিফ
জুমার দিন নবিজীর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ হলো ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ। রাসুল (সা.) নিজেই বলেছেন—জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়। (আবু দাউদ, হাদিস ১০৪৭)
এ যেন বান্দা ও রাসুলের মধ্যে এক হৃদয়যোগ।
জুমার দিনের অন্যান্য উত্তম কাজ
নখ কাটা, গায়ের অপ্রয়োজনীয় লোম পরিষ্কার করা, গোসল করা, সুন্দর পোশাক পরিধান, সুগন্ধি ব্যবহার—সবই জুমাকে স্বাগত জানানোর রীতি। খুতবা চলাকালে সম্পূর্ণ নীরব থাকা জুমার আদবের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এসব আমল পূর্বের ও পরের জুমার মধ্যবর্তী সব ছোট গুনাহ মুছে দেয়। (আবু দাউদ, হাদিস ৩৪৩)
নারীদের জন্য জুমার আমল
পুরুষদের মতো নারীদেরও আছে জুমার দিনের বিশেষ আমল। তারা গোসল, দরুদ পাঠ, সুরা কাহাফ তিলাওয়াত, নখ কাটা—সবই করতে পারেন সমান সওয়াব নিয়ে।
জুমার নামাজ নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়; ঘরে জোহরের নামাজই উত্তম। উম্মে সালামা (রা.) বর্ণিত—‘নারীদের ঘরে নামাজ পড়া বাইরে নামাজ পড়ার চেয়ে উত্তম।’ (আলমু’জামুল আওসাত)
এ ছাড়া নারীরা যদি পুরুষদের নেক কাজে উৎসাহ দেন, তারা সমান সওয়াব লাভ করবেন—কারণ সৎপথে আহ্বানকারী অনুসারীর সমপরিমাণ সওয়াবে ভাগীদার হন। (আবু দাউদ, হাদিস ৪৬০৯)
জুমাবার শুধু একটি দিন নয়—এটি একটি অনুভূতি, এক নবজীবন। মুসলমানের সপ্তাহের সেরা মুহূর্তগুলোর সমাহার। সৃষ্টি, ইবাদত, দোয়া, ক্ষমা, কল্যাণ—সব একসঙ্গে মিলেমিশে যে পবিত্রতার আবহ সৃষ্টি করে, তাকে বলা যায়—একটি আত্মার উৎসব।
হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের সামনে অবস্থান