শহীদ বাবার সম্মানে বিনাপারিশ্রমিকে ২ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন

আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫০ পিএম

মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বাবার সম্মানে বিনা পারিশ্রমিকে সফলভাবে দুই হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন করে অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর শ্যামলীতে নিজের প্রতিষ্ঠিত সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি (সিকেডি) হাসপাতালে সফলভাবে তার ২০০০তম কিডনি প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হয়।

দেশে এ পর্যন্ত যেসব কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে, তার প্রায় অর্ধেকই সম্পন্ন হয়েছে অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে। প্রতি সপ্তাহে গড়ে পাঁচটি কিডনি প্রতিস্থাপন করেন তিনি। তার এক হাতেই দুই হাজার কিডনি প্রতিস্থাপন। বিনিময়ে নেননি কোনও সার্জন ফি, যা টাকার অঙ্কে কমপক্ষে ২০ কোটি। ১১ জন চিকিৎসকসহ অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলামের টিমে রয়েছেন ২১ সদস্য। ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রতিস্থাপন হয়েছে দুই হাজার কিডনি। অস্ত্রোপচারের সফলতার হার ৯৬ শতাংশ। অধ্যাপক হয়েও নিয়মিত রোগী দেখেন মাত্র ৪০০ টাকা ফি’তে— তিনি ডা. কামরুল ইসলাম। মানবসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০২২ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন।

নিজ পেশায় মহানুবতা ও মানবসেবার এক দুর্দান্ত মেলবন্ধন তৈরি করেছেন ডা. কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একটা মানুষ যখন ভালো হয়ে যায়, এই ভালো কাজ থেকে যে ভালো লাগা, এটা একটা বড় স্পৃহা আপনার পরবর্তী কাজটা করার জন্য। সপ্তাহে ছয় দিনই ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হচ্ছে। তারপরেও রোগীর এত চাপ, দেখা যায় যে ১০০টা রোগী বসে আছে। মাসে আমরা এখন ২৫টার মতো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে পারি। তাহলে ১০০ রোগীর চিকিৎসা করতে আমার চার মাস লেগে যাবে।’

জানা গেছে, বিদেশে কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যয় দাঁড়ায় ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। আর অধ্যাপক কামরুলের হাসপাতালে তা সব মিলিয়ে খরচ ২ লাখ ১০ হাজার। কিডনি প্রতিস্থাপন করা চিকিৎসকদের ফলোআপ চিকিৎসাও দেন বিনামূল্যে, নেন না ভিজিট। লাগে না রোগ নির্ণয়ের ফি পর্যন্ত। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা খাবার পান বিনামূল্যে।

ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার যে আয় হয়, সে আয়টাও আল্লাহ পাকের। আমি ব্যাপারটা এভাবেই অনুভব করি। এই পুরোটা আমার অর্থ নয়।। আমার মানিটুকু আমার যেটুকু দরকার... হয়তো খাওয়া-দাওয়া দরকার, বাসা ভাড়া দরকার, গাড়ির দরকার... এই ইয়ে দরকার, এগুলো মধ্যম পন্থায় করতে হবে। ভিজিট দিয়েই যাবে, আর না দিতে পারলে নিলাম না। কত রোগী দেখতেছি, একটা দুইটা না নিলে কি আসে যায়? কিচ্ছু আসে যায় না। দিতে পারলে যেটুকু দিলো, ওই পরিমাণটা আমি একটু কমায়ে রাখতে চাই। আমি এখন রোগী দেখি যে ওর কষ্ট লাঘব করব, ওর এনজাইটিটাকে লাঘব করব, ওর বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এই তিনটা টার্গেট নিয়ে করি। এইভাবে আমার কাজটাকে, সমস্ত ইয়েটাকে এই ফরম্যাটে আনার চেষ্টা করছি, যাতে করে আমার কাজটাও যাতে ইবাদত হয়ে যায়।’

AHA
আরও পড়ুন