মেধার সব ধাপ পেরিয়ে হয়েছিলেন বিসিএস ক্যাডারের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত। কিন্তু অজানা কারণে নিয়োগ আটকে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে কেউ আছেন ১৪ বছর ধরে অপেক্ষায়, কেউ পাঁচ বছর ধরে ঘুরছেন আদালত আর সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে।
এর মধ্যে ৩৮তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথমস্থান অধিকারী বিল মারুফ বিন বারিকও চাকরি ফিরে পেয়েছেন। বুয়েটের এই শিক্ষার্থীকে কেবল কোরআনের হাফেজ হওয়ার কারণে চাকরি বঞ্চিত করা হয় বলে অভিযোগ তার মায়ের।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েও নেতিবাচক প্রতিবেদনের বাদ পড়া এমন ২৫৯ জনকে বুধবার (১৪ আগস্ট) নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর মারুফের মা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, আমার ছেলে বিল মারুফ, শিশুকাল থেকেই ওর মেধা অতি ক্ষুরধার। ওকে একই সাথে হাফিজ মাদ্রাসা এবং স্কুলে পড়িয়েছি, এতে করে সে কুরআনের হাফেজ, পাশাপাশি বৃত্তিসহ এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস এবং বুয়েটে ৪২তম মেধাক্রমে চান্স পেয়েছিল।
বুয়েট থেকে কৃতিত্বের সাথে পাস করার পর পিডিবির পাওয়ার প্ল্যান্টে ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকুরি হয়। এটা শুনে আমি বলেছিলাম ঠিক আছে তুই তাহলে পিডিবিতে জয়েন কর। তার পাশাপাশি বিসিএসের এর জন্য প্রস্তুতি নে। চাকুরির পাশাপাশি অনেক কষ্ট করে পড়ত আমার ছেলে বিসিএসের জন্য। আমি ফোন দিয়ে খোঁজ নিতাম বাবা ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করছিস তো, কুরআন পড়েছিস, বিসিএসের পড়া হচ্ছে এসব আর কি।
ও বলত মা বিসিএস আমার হবে না, অনেক পড়া আমি পারব না। আমি বলতাম পারবি বাবা একটু চেষ্টা কর ইনশাআল্লাহ্, তুই প্রথম বারেই চান্স পাবি। যেভাবে একই সাথে মেডিকেলে, বুয়েটে, ঢাবিতে চান্স পেয়েছিলি ঠিক সেভাবে বিসিএসেও তোর হয়ে যাবে।
আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে তার প্রথম বিসিএসে প্রিলিতে রিটেনে ও ভাইভাতে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথমস্থান অধিকার করে। ওর বিসিএসের রেজাল্ট পেয়ে আমাকে ফোন করল, মা আমি পররাষ্ট্র কাডারে প্রথম হয়েছি, আমি আলহামদুলিল্লাহ বলে কেঁদে ফেলেছি। ফোনের ওপারে ছেলে কাঁদে এপারে আমি, দুই মা ছেলে প্রায় ৫ মিনিট কেঁদেছি। তারপর আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া নফল নামাজ আদায় করে আত্মীয় স্বজনদের এই খুশির খবর জানিয়েছিলাম।
এরই মধ্যে প্রায় ৩/৪ মাস কেটে গেল। সেই বিসিএসের গেজেট প্রকাশ হল। পররাষ্ট্র কাডারে ২৫ জন ছিল। ১ম বিল মারুফ বিন বারিক বাদ দিয়ে বাঁকি ২৪ জনকে গেজেট দেয়া হল। শুরু হল বিল মারুফের মায়ের আনন্দ অশ্রু থেকে বেদনাশ্রু। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের মন্ত্রানালয়ে অনেক ধরনা ধরে কোন কাজ হয়নি। কোর্টে রিট করেও কোন ফল হয়নি। আজ ১৪ আগস্ট ২০২৪ আমার ছেলে সেই গেজেট ফিরে পেল আলহামদুলিল্লাহ।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে গত ৫ আগস্ট ফাসিস্ট স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার পতনের মাধ্যমে বাংলা দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে। নবনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব হাতে নিয়ে পঁচে যাওয়া দেশটাকে পরিষ্কার করতে পরবেন ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহ আমাদের বাংলাদেশকে রহম করুণ। হিংসা বিদ্বেষ ভুলে কাঁধে কাঁধ রেখে চল সবাই আমরা একসাথে দেশ গড়ি। সকলের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে সুবিচারের দেশ হোক আমার বাংলাদেশ।
