ঢাকা
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

এমআইটির গবেষণা

চ্যাটজিপিটি ব্যবহার একধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতা তৈরি হতে পারে

আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২৫, ০২:১৩ পিএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটজিপিটি চালু হওয়ার প্রায় তিন বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এরই মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে বিস্তর বিতর্ক উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে, এআই কি ব্যক্তিগত শিক্ষায় কাজে লাগে, নাকি শিক্ষা ক্ষেত্রে অসততার পথ খুলে দেয়?

গবেষকদের দাবি, চ্যাটজিপিটির সহায়তায় প্রবন্ধ লেখার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতা তৈরি হয়। কারণ, এতে যে কেউ তাৎক্ষণিক সুবিধার জন্য চিন্তা করার পরিশ্রম এড়িয়ে যান। এতে করে শেখার বা সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা কমে যেতে পারে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা এমআইটির এক দল গবেষক ‘ইওর ব্রেন অন চ্যাটজিপিটি: অ্যাকিউম্যুলেশন অব কগনিটিভ ডেট হোয়েন ইউজিং অ্যান এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট ফর এসে রাইটিং টাস্ক’ নামের একটি গবেষণা প্রকাশ করেন। এ গবেষণা ধরে ২৩ জুন অনলাইন পোর্টালে প্রতিবেদন করেছে দ্য কনভারসেশন। তথ্যসূত্র:দ্য কনভারসেশন

সবচেয়ে বড় আশঙ্কার কথা হলো, এআই ব্যবহারে মানুষের ‘বুদ্ধির বিকাশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হতে পারে। অনেকে বলছেন, শিক্ষার্থীরা কম বয়সে এআই–নির্ভর হয়ে পড়লে তাদের মৌলিক চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতাই তৈরি হবে না।

সত্যিই কি তা–ই? যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে এমনটা ঘটতে পারে।

এআই এবং শুধু মস্তিষ্ক ব্যবহারের মধ্যে পার্থক্য

চার মাস ধরে চালানো গবেষণায় এমআইটির গবেষকেরা ৫৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে ৩ ধাপে প্রবন্ধ লেখার কাজ দেন। এতে কেউ শুধুই নিজের মস্তিষ্ক ব্যবহার করে (‘ব্রেন অনলি’ গ্রুপ) প্রবন্ধ লেখেন, কেউ লেখেন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে, আর কেউ লেখেন এআই টুল (চ্যাটজিপিটি) ব্যবহার করে।

গবেষকেরা প্রবন্ধ লেখার সময় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে ঘটে যাওয়া মস্তিষ্কের তড়িৎ সংকেত পরীক্ষা করেছেন। সেই সঙ্গে প্রবন্ধের ভাষা এবং গুণগত মান বিশ্লেষণ করে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা বা সক্রিয়তা পরিমাপ করেছেন। অর্থাৎ এসব পদ্ধতির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা কতটা মনোযোগ দিয়ে ও সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন, তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে।

ফলাফলে দেখা গেছে, যারা এআই ব্যবহার করে লিখেছেন, তাদের মস্তিষ্কের সক্রিয়তা অন্যদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। শুধু তা-ই নয়, তারা নিজেদের লেখায় ব্যবহৃত উদ্ধৃতিও মনে রাখতে পারেননি। এমনকি, সেই লেখার ওপর তাদের সম্পৃক্ততার অনুভূতিও ছিল কম।

চতুর্থ ও সর্বশেষ ধাপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের ভূমিকা বদলে দেওয়া হয়। যারা প্রথম তিন ধাপে শুধু নিজের মস্তিষ্ক ব্যবহার করেছিলেন, তারা এবার চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করেন। আর যারা প্রথম তিন ধাপে শুধু এআই ব্যবহার করেছিলেন, তারা এবার মস্তিষ্ক ব্যবহার করে প্রবন্ধ লেখেন।

এবারের ফলাফল ছিল রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। দেখা যায়, এআই থেকে মস্তিষ্ক গ্রুপে আসা (এআই-টু-ব্রেন) ব্যক্তিদের ফল খারাপ হয়েছে। তাদের মানসিক সম্পৃক্ততা প্রথম ধাপের অন্য গ্রুপের চেয়ে সামান্য ভালো হলেও ‘ব্রেন-অনলি’ গ্রুপের তৃতীয় ধাপের তুলনায় তা ছিল অনেক কম।

এই ফলাফলের ভিত্তিতে এমআইটির গবেষকেরা দাবি করেন, দীর্ঘদিন এআই ব্যবহারের ফলে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে মানসিক দুর্বলতা তৈরি হয়েছে। এতে শেখার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। অর্থাৎ যখন তারা নিজেদের মস্তিষ্ক ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছেন, তখন তারা আগের মতো মনোযোগ দিতে বা অন্য দুই গ্রুপের মতো ভালো করতে পারেননি।

নিজেদের গবেষণার বিষয়ে সতর্ক করে গবেষকেরা বলেন, চতুর্থ ও শেষ ধাপে মাত্র ১৮ জন (প্রতি গ্রুপের ৬ জন) অংশ নিয়েছেন। তাই এই ফলাফলকে প্রাথমিক হিসেবে গণ্য করা উচিত। এই ফলাফলের বিষয়ে নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

AHA
আরও পড়ুন