ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

স্মরণীয়-বরণীয়

সাইমন ড্রিং

আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪০ পিএম

সাইমন ড্রিং (জন্ম : ১১ জানুয়ারি ১৯৪৫ – মৃত্যু : ১৬ জুলাই ২০২১) একজন আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিজয়ী ইংরেজ সংবাদদাতা, টেলিভিশন উপস্থাপক এবং প্রতিবেদন নির্মাতা। বাংলাদেশে টেলিভিশন সাংবাদিকতার জনক হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। তিনি বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের বৈদেশিক প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের অনেক জায়গা ভ্রমণ করে তরতাজা ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পরিবেশনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের বর্ণনা তুলে ধরে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ইংল্যান্ডের নরফোকের ফাকেনহাম নামক এক ছোট্ট শহরে ১১ জানুয়ারি, ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন সাইমন ড্রিং। শৈশবকালে আওজ নদীতে গভীর রাতে সাঁতার কাটার অভিযোগে তাকে বোর্ডিং স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এরপর তিনি কিংস লিন টেকনিক্যাল কলেজে অধ্যায়ন করেন।

১৮ বছর বয়সে তিনি প্রথম চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ওয়ার্ল্ড সংবাদপত্রে ‘প্রুফ রিডার’ (সম্পাদনা সহকারী) ও ফিচার লেখক হিসেবে কাজ করেন। তারপর ১৯৬৪ সালে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের স্ট্রিংগার হিসেবে কাজ করেন লাওস থেকে। একই বছর ভিয়েতনাম ভ্রমণ করেন। সেখানে তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সের যুদ্ধবিষয়ক সংবাদ প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর পুরো দশক জুড়ে তিনি দ্যা ডেইলি টেলিগ্রাফ সংবাদপত্র এবং বিবিসি টেলিভিশন এর বৈদেশিক সংবাদদাতা হিসেবে সারা পৃথিবীতে কর্মরত ছিলেন। ঐ সময়ে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে প্রতিবেদন পাঠাতেন। ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ইউরোপের অস্থিতিশীল ঘটনাপ্রবাহ নিয়মিত তুলে ধরতেন সংবাদ মাধ্যমগুলোয়। পেশাগত জীবনে ২২টি যুদ্ধ ও অভ্যুত্থান কাভার করেছেন।

সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি দু’বার আহতও হয়েছিলেন। প্রথমবার ভিয়েতনামে এবং দ্বিতীয়বার সাইপ্রাসে তুর্কিদের আগ্রাসনে। বিবিসি রেডিও এবং টেলিভিশনে কাজ করার পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংবাদপত্র ও সাময়িকীতে লিখেছেন তিনি।

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভরা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে সাইমন ড্রিং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (পরবর্তীতে - হোটেল শেরাটন, বর্তমানে -হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল) লুকিয়ে ছিলেন। ২৭ মার্চ সকালে কারফিউ উঠে গেলে হোটেলের কর্মচারীদের সহযোগিতায় ছোট্ট একটি মোটরভ্যানে করে ঘুরে ঘুরে দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হল, রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাক ও পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত সৃষ্টিতে তার এ প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছিল।

১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে জোরপূর্বক দেশ থেকে বের করে দিয়েছিল। ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে পুনরায় নভেম্বর, ১৯৭১ সালে কলকাতায় আসেন তিনি। সেখান থেকে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যাবতীয় খবরাখবর নিরপেক্ষভাবে ঐ দৈনিকে প্রেরণ করতেন। ১৬ ডিসেম্বর তারিখে বিজয়ের দিনে যৌথবাহিনীর সঙ্গে ময়মনসিংহ হয়ে তিনিও ঢাকায় এসেছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের নির্যাতনের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে ২০১২ সালে অর্জন করেন ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টার অব দ্য ইয়ার; ইরিত্রিয়া যুদ্ধের ওপর ভ্যালিয়ান্ট ফর ট্রুথ; কুর্দিদের বিরুদ্ধে তুরস্কের যুদ্ধের প্রতিবেদনের জন্য সনি এবং হাইতিতে আমেরিকান আগ্রাসনের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করে অর্জন করেন নিউইয়র্ক ফেস্টিভ্যাল গ্রান্ড প্রাইজ। ২০২১ সালে ১৬ জুলাই শুক্রবার সাইমন ড্রিং ৭৬ বছর বয়সে রোমানিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন।

আরও পড়ুন