আমন মৌসুমের শুরুতেই গাইবান্ধায় কৃষকদের কাছে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ডিলারদের বিরুদ্ধে। ক্যাশ মেমোর মাধ্যমে কৃষকদের কাছে সার বিক্রির নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না ডিলাররা। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বস্তা প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের ফলিয়া গ্রামের জানু মিয়া ও রাশেদা দম্পতি। জীবিকার তাগিদে খরচ কমাতে ২ জনে কাজ করছেন আমন ধান চাষের জমিতে। কিন্তু সারের বাড়তি দামে কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে তাদের। মৌসুমের শুরতেই স্থানীয় বাজার থেকে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজি প্রতি ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে সার। এতে উৎপাদনে যোগ হয়েছে বাড়তি খরচ।
এই কৃষক দম্পতি জানান, সদরের বোয়ালী ইউনিয়নের খেয়াঘাট বাজারের আনছার আলীর দোকান থেকে ডিএপি সার কিনে নেন ২৭ টাকা কেজিতে ও এমওপি সার নেন ২৫ টাকা কেজিতে। সরকারি দামে সার চাইলে দেননি তিনি।

একই অভিযোগ ওই এলাকার কৃষক সৈয়দ আলী ও মধু মিয়ার। তারা বোয়ালীর সার ডিলার মের্সাস সবুর এন্ড ব্রাদাস থেকে এমওপি সার কিনে নেন প্রতি বস্তা ১২৫০ টাকা ও ডিএপি সার নেন ১১৫০ টাকা বস্তায়। সরকারি দামে সার ও ক্রয় রশিদ চাইলে সার দেওয়া যাবে না বলে জানান ডিলার।
একই এলাকার নওশাদ আলী জানান, শহরের পুরাতন বাজারের সার ডিলার মোজ্জামেল হাজীর দোকান থেকে এমওপি সার কেনেন প্রতি বস্তা ১১০০ টাকা ও ডিএপি সার নেন ১২০০ টাকায়।
ডিলারের ম্যানেজার বলেন, সারের সংকট চলছে। কম দাম নেওয়া যাবে না। তারা জানান, বোয়ালী ইউনিয়নের খেয়াঘাট, পুলিশ লাইনস ও শহরের পুরাতন বাজারের ডিলাররা সরকারি নির্ধারিত দাম না নিয়ে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছেন।
কৃষকদের দাবি, তাদের মনগড়া নিধারিত দাম না দিলে দিচ্ছেন না সার। ক্রয় রশিদ চাইলে, নেই বলে জানান ডিলাররা। বাধ্য হয়ে বেশি দামেই সার নিতে হচ্ছে তাদের।
বোয়ালীর মতো একই চিত্র জেলার বিভিন্ন এলাকার। কৃষকদের অভিযোগ, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ডিলার ও খুচরা সার বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। বিশেষ করে ধান রোপনের সময় বেশি প্রয়োজনীয় ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), মিউরেট অব পটাশ (এমওপি), ডায়ামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার অনেক বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।

সরকারিভাবে এক বস্তা (৫০ কেজি) ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ১৩৫০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হলেও কৃষকদের কাছে বিক্রি হচ্ছে ১৪৫০ থেকে ১৫০০ টাকায়। একইভাবে ডায়ামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার ১০৫০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ টাকা ও তার বেশি । মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) প্রতি বস্তা ১ হাজার টাকা বিক্রির কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১২৫০ টাকায়।
সরেজামনে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকদের কাছ থেকে সারের দাম বেশি নেওয়া হলেও ডিলাররা কোনো রসিদ দিচ্ছেন না। কেউ কেউ রসিদ দিলেও তাতে সরকার নির্ধারিত দাম দেখাচ্ছেন। সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সংকটের কথা বলেন। তবে দাম বেশি দিলেই সার দিচ্ছেন। আবার অনেক ডিলার দোকানের সরকারি মূল্য তালিকা ঢেকে রাখছেন।
এদিকে ন্যায্যমূল্যে সার কিনতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। উৎপাদন খরচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তারা। অনেক কৃষক চাহিদার অর্ধেক আবার কেউবা সার ছাড়াই বাধ্য হয়ে গোবর সার ব্যবহার করে ধানের চারা লাগাচ্ছেন।

তবে অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ডিলারদের দাবি খুচরা ব্যবসায়ীরা বেশি দামে সার বিক্রি করছে তার দায় পড়ছে তাদের উপর আর খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি সংকট দেখিয়ে ডিলাররা বস্তা প্রতি অতিরিক্ত দাম নেওয়ায় তাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, মের্সাস সবুর এন্ড ব্রাদাসের ডিলার সবুর মিয়া অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, খুচরা ব্যাবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছে, আর দায় পড়ছে তাদের ঘাড়ে।
ওই এলাকার খুচরা সার ব্যবসায়ী আরিফ মিয়া জানান, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ডিলাররা তাদের কাছ থেকেই বস্তা প্রতি ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। তারা (খুচরা ব্যবসায়ী) খোলা বিক্রি করতে কেজিতে আবার ২/১ টাকা বেশি নিতে গিয়ে কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। সরকার নির্ধারিত দামে ডিলাররা সার দিলে বেশি দাম হতো না।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম জানান, জেলায় সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কিংবা বাড়তি দাম নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষকের কাছে সরকারি মূল্য ও চাহিদামত সার সরবরাহে নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, চলতি মৌসুমে গাইবান্ধায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
