ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

‘জিনগত কারণেই অকাল বার্ধক্য’

আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:০১ পিএম

জিনগত কারণেই কম বয়সে বৃদ্ধত্ব, বলিরেখা, রোগপ্রবণতা আশার আলো দেখাচ্ছে নতুন গবেষণা। বাহ্যিক বলিরেখা, ত্বকের দাগ কিংবা চুল পেকে যাওয়া এসবকে এতদিন বার্ধক্যের বাহ্যিক লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডার–এর বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, বার্ধক্য আসলে শুরু হয় আরও গভীর স্তরে, আমাদের জিনের ভিতরেই।

‘নেচার জেনেটিক্স জার্নালে’ প্রকাশিত গবেষণায় উঠে এসেছে, ৪০০টিরও বেশি জিন রয়েছে, যেগুলোর সক্রিয়তার কারণে শরীর দ্রুত বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যায়। এই জিনগুলো শুধুমাত্র বয়স বাড়ানোর গতিকে ত্বরান্বিতই করে না, বরং শরীরের ভেতরে ডায়াবেটিস, অ্যালঝাইমার্স, বাত, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই গবেষণা অকাল বার্ধক্য বা অ্যানহেলদি এইজিং প্রতিরোধে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। গবেষকদলের প্রধান ড. ইসাবেল ফুট বলেন, এই জিনগুলোকে যদি আমরা শনাক্ত করে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি, তবে অনেকাংশে বার্ধক্যের গতিকে থামানো বা বিলম্বিত করা সম্ভব হতে পারে।

জরা আসে ভিন্ন ভিন্ন পথ ধরে

গবেষণায় দেখা গেছে, অকাল বার্ধক্যের জিনগুলো শরীরে একযোগে নয়, ভিন্ন ভিন্নভাবে সক্রিয় হয়। ফলে একজন সুস্থ ও স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি অল্প বয়সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন, আবার কেউ বয়স পেরিয়ে গেলেও থাকতে পারেন রোগমুক্ত ও কর্মক্ষম। এর কারণ ভিন্ন জিনের প্রভাব ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়।

জিনকে সাতটি ভাগে ভাগ করেছেন বিজ্ঞানীরা

গবেষণায় জিরোসায়েন্স হাইপোথিসিস অনুসরণ করে বিজ্ঞানীরা বার্ধক্য প্রভাবকারী জিনগুলোকে সাতটি গোত্রে ভাগ করেছেন। তারা বলছেন, জিনের এই সক্রিয়তা ঠেকানো গেলে ভবিষ্যতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে ‘আয়ুষ্মান জিন’ উদ্ভাবন সম্ভব, যা বার্ধক্যকে বিলম্বিত করতে সাহায্য করবে।

টেলোমেয়ারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ

প্রতিটি ডিএনএর শেষপ্রান্তে থাকা টেলোমেয়ার নামক লেজের আকার যত ছোট হতে থাকে, তত বার্ধক্য ঘনিয়ে আসে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, টেলোমেয়ারের ক্ষয় থামাতে পারলে বার্ধক্য রোধ সম্ভব। ভবিষ্যতে এটি বার্ধক্য প্রতিরোধে ‘অমরত্বের সূত্র’ হিসেবেও কাজ করতে পারে।

মার্কিন পরিসংখ্যান বলছে

যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ বছর বয়সী নাগরিকদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই বার্ধক্যজনিত দুর্বলতায় ভোগেন। তাদের শারীরিক সামর্থ্য, স্মৃতি, স্নায়বিক ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে আসে। এসব দুর্বলতার নেপথ্যে দায়ী ৪০৮টি জিন সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা।

গবেষক দলের আশা, এই জিনগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার উপায় আবিষ্কারের মাধ্যমে আগামী দিনে মানুষের জীবনে বার্ধক্য আর অবশ্যম্ভাবী থাকবে না, বরং নিয়ন্ত্রিত ও সুস্থ বার্ধক্য সম্ভব হবে। এখন শুধু অপেক্ষা এই গবেষণা কতটা বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে চিকিৎসা ও জেনেটিক বিজ্ঞান জগতে।

DR/SN
আরও পড়ুন