ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

চন্দ্রগ্রহণের সময় কি গর্ভবতীর ক্ষতি হয়

আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৪ পিএম

চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে গর্ভবতী নারীদের জন্য নানা রকম নিষেধাজ্ঞা প্রচলিত আছে। বিশেষ করে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক অঞ্চলে বেশি। অনেকে বিশ্বাস করেন যে, চন্দ্রগ্রহণের সময় কিছু নিয়ম না মানলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। বিশ্বাস করা হয়, গ্রহণের সময় ধারালো জিনিস ব্যবহার করলে শিশুর শরীরে কাটা দাগ বা জন্মদোষ দেখা দিতে পারে।

কিছু প্রচলিত কুসংস্কার 

১. ছুরি বা কাঁচি ব্যবহার নিষেধ
বিশ্বাস করা হয়, গ্রহণের সময় ধারালো জিনিস ব্যবহার করলে শিশুর শরীরে কাটা দাগ বা জন্মদোষ দেখা দিতে পারে।

২. সেলাই জাতীয় কাজ করা যাবে না
বলা হয়, চন্দ্রগ্রহণের সময় সূচ ব্যবহার করলে বা সেলাইয়ের কাজ করলে শিশুর ঠোঁটে ফাটল বা অন্যান্য অঙ্গ বিকলাঙ্গ হতে পারে।

৩. বাইরে বের হওয়া নিষেধ
ধারণা আছে, চন্দ্রগ্রহণের সময় বাইরে বের হলে এর অশুভ রশ্মি শিশুর ক্ষতি করতে পারে।

৪. খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকা
অনেকেই বিশ্বাস করেন, চন্দ্রগ্রহণ চলাকালে খাবার ও পানি দূষিত হয়। এসময় খাবার খেলে বা পানি পান করলে গর্ভের শিশুর অসুখ-বিসুখ হতে পারে।

৫. শরীরে লোহা রাখা
কিছু কিছু এলাকায় এসময় গর্ভবতীকে ছুরি, চাবি বা লোহার আংটি শরীরের সঙ্গে রাখতে বলা হয়, যাতে অশুভ প্রভাব দূরে থাকে।

বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা
চন্দ্রগ্রহণ মূলত এমন একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যখন পৃথিবী সূর্য ও চাঁদের মাঝখানে এসে চাঁদের উপর ছায়া ফেলে। এ সময় চাঁদ লালচে বা কালচে দেখা যায়।

নাসা এবং আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ অপথালমোলজির তথ্য মতে, এসময় কোনো ক্ষতিকর রশ্মি তৈরি হয় না, যা গর্ভবতী নারীর শরীর বা শিশুর জন্য হুমকি হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের মতে, এসব কুসংস্কারের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

লাইভ সায়েন্স-এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, চন্দ্রগ্রহণ গর্ভবতী নারীর জন্য অন্য দিনের চেয়ে আলাদা কোনো ঝুঁকি তৈরি করে না। শিশুর বিকলাঙ্গতা বা জন্মদোষ চন্দ্রগ্রহণের কারণে হয় না, বরং এগুলোর সঙ্গে জেনেটিক কারণ, অপুষ্টি, সংক্রমণ বা হরমোনজনিত সমস্যার সম্পর্ক আছে।

সেই সঙ্গে আরো বলা হয়েছে যে, চন্দ্রগ্রহণের সময় খাবার বা পানি দূষিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তাই খাবার খেলে গর্ভবতী ও শিশুর ক্ষতি হবে- এমন ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

চন্দ্রগ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বৈজ্ঞানিক সতর্কতা নেই, তাই ভয়ের কিছু নেই। এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা, এবং এ সময় গর্ভবতী মহিলাদের খাওয়া, ঘুমানো বা কাটাকাটি করা নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কারগুলো অমূলক। বরং, এই সময়ে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বেশি বেশি ঈশ্বরের স্মরণ, দুআ করা এবং ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা যেতে পারে। তাই অহেতুক ভয় ও ভুল ধারণা ভেঙে বিজ্ঞানের আলোকে গর্ভবতী নারীর যত্ন নিন। সূত্র: নাসা, আমেরিকান প্রেগন্যান্সি অ্যাসোসিয়েশন, মায়ো ক্লিনিক।

FJ
আরও পড়ুন