ঢাকা
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

কুয়াকাটায় ঝুঁকিতে লাল কাঁকড়ার আবাসভূমি

আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৫৫ পিএম

পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের উপভোগ করার পাশাপাশি লাল কাঁকড়ার জন্যও বিশেষভাবে পরিচিত। একসময় সমুদ্রতটের বিস্তীর্ণ বালুচরে হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার দল দৌড়াতে দেখা যেত।

কিন্তু বন উজাড়, দূষণ ও লাগামহীন পর্যটকের চাপে দ্রুত কমে আসছে এ প্রাণীর সংখ্যা। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে কাঁকড়ার স্বাভাবিক আবাসভূমি।

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে দেখা যায়, বন বিভাগ মহিপুর রেঞ্জের সহযোগিতায় গাছের ডাল-ফালা দিয়ে কোনোভাবে কাঁকড়ার জন্য অস্থায়ী আশ্রয় তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে এ উদ্যোগ দীর্ঘস্থায়ী নয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিকল্পিত সংরক্ষণ না থাকায় কাঁকড়ার প্রজনন ও বসবাস দুটোই হুমকির মুখে পড়েছে।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক আসিফ বলেন, কুয়াকাটায় আসার মূল আনন্দ ছিল সৈকতে ছুটে বেড়ানো লাল কাঁকড়ার দল দেখা। কিন্তু এখন সেগুলো চোখে পড়ছে খুব কম, যা হতাশাজনক।

ট্যুর গাইড হুমায়ুন জানান, বেপরোয়া পর্যটন, সৈকতে হোটেল-রিসোর্ট নির্মাণ এবং বর্জ্য ফেলার কারণে কাঁকড়ার সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।

উপকূল পরিবেশ আন্দোলন কুয়াকাটা (উপরা) সভাপতি কেএম বাচ্চু বলেন, ২০২১ সালে আমরা প্রথমবার লাল কাঁকড়া ও কচ্ছপ সংরক্ষণের জন্য আলাদা অঞ্চল ঘোষণার দাবি জানাই। সাময়িকভাবে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা টেকসই হয়নি। ফলে পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে।

পর্যটন সংগঠন টোয়াক সভাপতি তুশার জানান, কাঁকড়া শুধু কুয়াকাটার সৌন্দর্যই নয়, জীব বৈচিত্র্যেরও অংশ। তাই পর্যটন উন্নয়নের পাশাপাশি সংরক্ষণে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা কে এম মনিরুজ্জামান বলেন, আমরা সীমিত আকারে কিছু সংরক্ষণ উদ্যোগ নিয়েছি। তবে দীর্ঘমেয়াদে লাল কাঁকড়া রক্ষায় সরকারি পরিকল্পনা, স্থানীয়দের সহযোগিতা ও পর্যটকদের সচেতনতা জরুরি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, লাল কাঁকড়া আমাদের উপকূলীয় পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। এরা সৈকতের মাটি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। আবাসভূমি ধ্বংস হলে এর প্রভাব পুরো ইকোসিস্টেমের ওপর পড়বে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান মনে করেন, বন উজাড় ও বর্জ্য দূষণ লাল কাঁকড়ার প্রজনন ব্যাহত করছে। এখনই সুরক্ষিত এলাকা ঘোষণা না করা হলে কয়েক বছরের মধ্যে কাঁকড়ার অস্তিত্বই হারিয়ে যেতে পারে।

বন ধ্বংসের কারণে কাঁকড়ার প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। একইসঙ্গে প্লাস্টিক ও বর্জ্য দূষণ তাদের স্বাভাবিক জীবনচক্র নষ্ট করছে। যদি এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তবে অচিরেই বিলীন হয়ে যেতে পারে লাল কাঁকড়ার আবাসভূমি, যা কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটনের জন্য বড় ক্ষতি বয়ে আনবে।

NJ
আরও পড়ুন