ঢাকা
মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
ই-পেপার

বিক্ষোভকারীদের আগুনে পুড়লো নেপালের প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতিসহ বহু নেতার বাড়ি

আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:১৯ পিএম

গত দুই দিন ধরে নেপালে চলা সহিংস বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। প্রধানমন্ত্রী ওলির সরকার যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে প্রতিবাদ প্রশমিত করার চেষ্টা করছিল, ঠিক তখনই জেনারেশন জেন জির নেতৃত্বে বিক্ষোভ আরও তীব্রতর হয়। তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।

আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলে উঠলো প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির ব্যক্তিগত বাড়ি। সেই সময় তিনি সেখানে ছিলেন না। ওলি তখন সরকারি বাসভবন বালুয়াটারে অবস্থান করছিলেন। নেপালের রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেলের বাড়িও বাঁচলো না। ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা তালা ভেঙে ঢুকে পড়লো তাঁর ব্যক্তিগত আবাসে, ঘরে ঘরে তাণ্ডব চালাল। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেলো, ভাঙা দরজা, ছিন্নভিন্ন আসবাবপত্র আর অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য।

শুধু রাষ্ট্রপতি বা কেপি ওলি নন, প্রতিবাদকারীরা ক্ষমতাসীন ও সাবেক নেতাদেরও নিশানা করেন। যোগাযোগমন্ত্রী প্রীতি সুব্বা গুরুংয়ের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়, আর্থিকমন্ত্রী বিষ্ণু পাওডেলের বাসভবনে চলে পাথর বৃষ্টি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দাহাল ‘প্রচণ্ড’ ও শেরবাহাদুর দেউবার বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জ্বালানি মন্ত্রী দীপক খাড়কার বাড়ি সরাসরি আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভকারীরা শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাননি বরং তাদের ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে। 'নেপো বেবিস' এবং 'নেপো কিডস' বলে পরিচিত রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানদের সুবিধা পাওয়ার বিরুদ্ধেও স্লোগান দিয়েছেন তারা।

এর আগে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয় যখন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নেপালের সংসদ ভবনে প্রবেশ করে এবং সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনায় ওলি সরকার পদত্যাগ করলেও উত্তেজনা এখনো থামেনি। 

গত সপ্তাহে নেপালে ফেসবুক, এক্স (টুইটার) এবং ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, কারণ তারা সরকারের নতুন নিবন্ধন ও তত্ত্বাবধানের নিয়ম মানেনি। এর প্রতিবাদে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন মারা যান। এই হত্যাকাণ্ড বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালে।

প্রতিবাদকারীরা ‘দুর্নীতি বন্ধ করো, সামাজিক মাধ্যম নয়’ এবং ‘তরুণ সমাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে’র মতো স্লোগান দিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিল করে। তাদের বিক্ষোভের মূল কারণ শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং সরকারের ভেতরকার গভীর দুর্নীতি এবং ক্ষমতাশালীদের স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে তাদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ।

আন্দোলনকারীদের একজন নারায়ণ আচার্য বলেন, আমরা এখানে এসেছি কারণ আমাদের তরুণ বন্ধু ও ভাইয়েরা নিহত হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই এবং এই বর্তমান সরকারকে উৎখাত করতে চাই। কে পি ওলিকে তাড়িয়ে দেওয়া উচিত। আরেক বিক্ষোভকারী দুর্গনাথ দাহাল অভিযোগ করেন, এই হিটলারের মতো কে পি ওলির সরকারের হাতে আমাদের অনেক তরুণ এবং ছাত্রের জীবন চলে যাচ্ছে। যতক্ষণ এই সরকার ক্ষমতায় থাকবে, আমাদের মতো সাধারণ মানুষ ভুগতেই থাকবে।

সূত্র: এনটিভি

MMS
আরও পড়ুন