বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘আমরা সবাই একসাথে এই দেশকে ভালোবাসি এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অপরের পাশে থাকব। কেউ যদি এই সম্প্রীতি বিনষ্ট করার চেষ্টা করে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো।’
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার রঘুনাথপুর ও রংপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ইসলাম সকল ধর্মের, বর্ণের মানুষের মর্যাদা দিয়েছে। আর রাষ্ট্রে ইসলাম চালু থাকলে সে রাষ্ট্রের সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদার সাথে থাকতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রে ইসলামী শাসন কায়েম করতে চায়, যার ভিত্তি হবে কুরআন ও সুন্নাহ। খোলাফায়ে রাশেদার যুগে ইসলাম চালু ছিল বলেই সেটা ইসলামের স্বর্ণযুগে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু দেশ স্বাধীনের ৫৪ বছরে আমাদের রাষ্ট্রে ইসলাম না থাকার কারণে সবাই সমান নিরাপত্তা ও অধিকার ভোগ করতে পারে নাই। শিকার হয়েছে জুলুম-নির্যাতনের।’
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময় এসেছে ন্যায় ও ইনসাফের বাংলাদেশ বিনির্মাণের, যেখানে থাকবে না কোনো বৈষম্য, জুলুম, নির্যাতন, সন্ত্রাসী, মস্তানি, চাঁদাবাজি, হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ,’ বলেন তিনি।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্য করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘উৎসবমুখর পরিবেশে নিরাপদে যাতে আপনারা আপনাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারেন, সে ব্যাপারে আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে মিটিং করেছি, আমাদের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি যাতে কোনো অপশক্তি আপনাদের এই ধর্মীয় উৎসবে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে। বিগত দিনেও জামায়াত যেমন আপনাদের পাশে ছিল, এখনো আছে আর আগামীতেও আপনারা আমাদেরকে আপনাদের পাশে পাবেন।’
জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে দেখা করে তাদের পূজা উদযাপনের সার্বিক খোঁজখবর নেন এবং তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল বিভাজন প্রতিহত করে সম্প্রীতির বার্তা প্রদান করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাকে পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং সাদরে অভিবাদন জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা হিন্দু, মুসলিম একসাথে বসবাস করি পাশাপাশি থাকি; এটা বিশ্বের কোথায়ও নেই। হিন্দু ভাইদের প্রতি আমাদের একটা অনুরোধ থাকবে দেশে দাঙ্গা-হাঙ্গা তৈরি করার জন্য একটি বিশেষ মহল উঠে পরে লেগেছে। সেই দিকে আপনারা দৃষ্টি রাখবেন। কোনো অপশক্তি যেন আমাদের শান্তি বিনিষ্ট করতে না পারে।’
এ সময় তিনি দেশের পরিস্থিতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের বাড়িঘর, মন্দির ও গির্জাসহ বিভিন্ন উপাসনালয় নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করে বলেন, এই দেশ আপনাদের আমাদের সবার। দেশকে ভালো রাখার দায়িত্বও আমাদের। জামায়াত বিশ্বাস করে, ধর্মীয় সব ভেদাভেদ ভুলে বাংলাদেশে সব ধর্মের অনুসারীর সহযোগিতায় একটি আগামীর স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে হিন্দু সমাজের ভূমিকা অপরিসীম।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশের রয়েছে ধর্মীয় সম্প্রীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু বিভাজন না রেখে প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব।’
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে হিন্দু-মুসলমান একত্রে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। তখন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা মন্দির পাহারা দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছে।
এ সময় তার সাথে খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, যুব বিভাগের সভাপতি মোস্তফা আল মুজাহিদ, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সহ-সভাপতি ডা. হরিদাস মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ মণ্ডল, অনিমেষ বিশ্বাস, কমলেশ বিশ্বাস, ঢাকাস্থ খুলনা ক্লাব সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ সরদার, সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম আল ফয়সাল, মশিয়ার রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আজ থেকে ইসির নির্বাচনী সংলাপ শুরু