বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাড়িভাড়া, চিকিৎসাভাতা ও উৎসব ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
রোববার (৫ অক্টোবর) রাতে এ প্রস্তাব পাঠানো হয় বলে সোমবার (৬ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা খালিদ মাহমুদ।
বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বাড়িভাড়া বাবদ মাসে ১ হাজার, চিকিৎসাভাতা ৫০০ টাকা এবং উৎসব ভাতা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হিসেবে পান। নতুন প্রস্তাবে বাড়িভাড়া মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে নির্ধারণ, চিকিৎসাভাতা ১ হাজার টাকায় উন্নীত করা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষকদের উৎসব ভাতা আগের মতোই ৫০ শতাংশ থাকছে।
শিক্ষক সংগঠনগুলোর দাবি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট টাকার পরিবর্তে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই প্রস্তাবের সম্ভাব্য আর্থিক ব্যয়ও বিস্তারিতভাবে হিসাব করে পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে মাউশির আওতাধীন স্কুল-কলেজগুলোতে মাসিক এক হাজার টাকা করে বাড়িভাড়া দিতে সরকারের ব্যয় হয় প্রায় ৩৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা বছরে ৪৬৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করা হলে মাসিক ব্যয় দাঁড়াবে ১৯৬ কোটি টাকা এবং বাৎসরিক ব্যয় হবে ২ হাজার ৩৫১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বাড়িভাড়া ২০ শতাংশ হারে নির্ধারণ করলে বছরে সরকারের ব্যয় দাঁড়াবে ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে মাসে ব্যয় হয় ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা, যা নতুন প্রস্তাবে বেড়ে হবে প্রায় ১৪১ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাড়ি ভাড়ার চারটি বিকল্প হিসাবও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ৫, ১০, ১৫ ও ২০ শতাংশ হারে। এতে দেখা যায় ২০ শতাংশ হারে বা ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা দিলে বছরে ব্যয় হবে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ১৫ শতাংশ হারে বা ন্যূনতম ২ হাজার টাকায় ২ হাজার ৪৩৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ১০ শতাংশ হারে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং ৫ শতাংশ হারে ১ হাজার ৩৭১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় হবে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, বর্তমানে শিক্ষকরা যে মাসিক ৫০০ টাকার চিকিৎসাভাতা পান, তা বর্তমান চিকিৎসা ব্যয়ের তুলনায় অপ্রতুল। এজন্য চিকিৎসাভাতা ১ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া, এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের বোনাস ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। শিক্ষকদের বোনাস ৫০ শতাংশই বহাল থাকবে।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী জানান, শিক্ষা উপদেষ্টার অনুমোদনের পর প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে শিক্ষক-কর্মচারীরা নতুন হারে ভাতা পাবেন। তবে অনুমোদনের আগে নির্দিষ্ট শতাংশ বলা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)-এর ২০২৩ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৬ হাজার ৪৪৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক ও ১ লাখ ৭৭ হাজার কর্মচারী।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়িয়ে পরিপত্র জারি
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে: শিক্ষা উপদেষ্টা
বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সেপ্টেম্বরের বেতন কবে, যা জানালো মাউশি