সারাদেশের মতোই টানা বর্ষণে মানিকগঞ্জে সবজি ও বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠে লাভের মুখ দেখার আশায় ইতোমধ্যেই পুরোদমে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে মনোনিবেশ করেছেন কৃষকরা।
জেলার উপজেলাগুলোর পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের সব অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এ অঞ্চলের সবজির চাহিদা রয়েছে।
এদিকে অনুকূল আবহাওয়া ও অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় চাষিরা আগাম শীতকালীন সবজির জমিতে ব্যস্ততম সময় পার করছেন।
জানা যায়, মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার মধ্যে সাটুরিয়া উপজেলা বিষমুক্ত সবজি আবাদের জন্য বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। এই অঞ্চলের সবজি চাষিরা রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করেন। যার কারণে অন্য এলাকার সবজির চেয়ে এ অঞ্চলের সবজির চাহিদা অনেকটাই বেশি।
ইতোমধ্যে এই উপজেলার উঁচু জমিগুলোতে শীতকালীন আগাম সবজি চাষ শুরু হয়েছে। মাঠের পর মাঠ এখন শোভা পাচ্ছে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুন, শিম, মূলা, করলা, পটল, লাল ও পালং শাকসহ আরও ভিন্ন ভিন্ন জাতের সবজি। এই সবজির জমিতে নারী-পুরুষ উভয়েই একসঙ্গে আগাছা পরিষ্কার করছেন।
সম্প্রতি সারাদেশের মতো এই জেলাতেও টানা বৃষ্টিতে সবজির কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে লাভের স্বপ্ন নিয়েই কৃষক-কৃষাণীরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের জমিতে থাকা সবজির নিবিড় পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। সবজির খেতে যাতে কোনো পোকার আক্রমণ না হয়, তার জন্য আগাম ব্যবস্থা হিসেবে জমিতে বালাইনাশক প্রয়োগের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন চাষিরা। প্রতিটি সবজির জমি প্রস্তুতি থেকে শুরু করে বাজারে তোলার মুহূর্ত পর্যন্ত প্রতি বিঘায় আবাদে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবং ন্যায্য মূল্য পেলে, সবজি চাষিরা আশা করছেন, খরচ বাদে প্রতি বিঘায় দুই থেকে তিন গুণ মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হবে।

এদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও মাঠ পর্যায়ের চাষিদের সার ও বীজ সরবরাহ করছে এবং রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার মূল্যবান পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। আগাম সবজি চাষে প্রত্যাশিত ফলন ও অনুকূল বাজার মূল্য পেলে তারা আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন, এমনটাই আশা করছেন কৃষকরা।
সাটুরিয়া উপজেলার কামতা এলাকার সবজি চাষি শহিদুল ইসলাম বলেন, এ বছর টানা বৃষ্টির কারণে তাদের অনেক চাষির বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমান মৌসুমে তিনি ৩৫ শতাংশ জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি (ফুলকপি) চাষ করছেন।
তিনি আরও বলেন, জমি প্রস্তুত থেকে ফসল বাজারে তোলা পর্যন্ত তার ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং ফলন প্রত্যাশিত হলে, খরচ বাদে দুই থেকে তিন গুণ বেশি মুনাফা অর্জনের সম্ভবনা আছে।
একই এলাকার চাষি আব্দুল রশীদ মোল্লা বলেন, আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ সবজি চাষে ঝুঁকেছে, কারণ অন্য ফসলের চেয়ে অল্প খরচে অধিক লাভ হয়। এ বছর আমি প্রায় ৩৫০ শতাংশের মতো জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজির আবাদ করেছি। আশা করছি, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কিছু সবজি বাজারে তুলতে পারবো। এছাড়া আমাদের অধিকাংশ জমিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করে সবজি আবাদ করেছি। যার কারণে আমাদের এই অঞ্চলের উৎপাদিত সবজির চাহিদা অন্য জায়গার চেয়ে বেশি হয়।

ফুকুরহাটি ইউনিয়নের জান্না এলাকার রাহেদুল ইসলাম নামের এক চাষি বলেন, প্রায় দশ-পনেরো বছর ধরে সবজির আবাদ করে আসছি পরের জমিতে, নিজের কোন জমি নেই। অন্যের জমি টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন মৌসুমে সবজির আবাদ করি।
চলতি মৌসুমে ৩০০ শতাংশ জমিতে লাউ, শিম, ফুলকপি, ধনেপাতাসহ কয়েক ধরণের শাকের চাষ করেছি। এই জমিতে চাষ থেকে শুরু করে বাজারে তোলা পর্যন্ত দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হবে। সিজনের প্রথম দিকে যদি বাজারে সবজি উঠাতে পারি, তাহলে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার মতো বিক্রি করতে পারবো।
সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. তানিয়া তাবাসসুম বলেন, জেলার মধ্যে এই উপজেলায় সবজির আবাদ অনেকাংশেই বেশি হয়। এরি মধ্যে সবজির আবাদ শুরু হয়েছে, শীত আসার আগেই আরো শীতকালীন সবজির আবাদের সম্ভবনা আছে। এই অর্থবছরে শীতকালীন সবজি আবাদের জন্য চাষিদের মাঝে সার ও বীজসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া আমাদের ব্লক পর্যায়ে যে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছেন, তারা সব সময় টেকনিক্যাল বিষয়গুলো সম্পর্কে চাষিদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সবচেয়ে বড় যে বিষয় সেটা হলো, মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন সেশন পরিচালিত হয় চাষিদের নিয়ে- কীভাবে তারা বিষমুক্ত সবজি আবাদ করবে। এ মৌসুমে আগাম শীতকালীন সবজি বিক্রি করে কৃষকরা অনেকটাই লাভবান হবে এবং কৃষিতে সমৃদ্ধি আরও বৃদ্ধি পাবে।
অতিবৃষ্টিতে লালপুরে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ভাটা